নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:১০

ঐশীকে নিয়ে রহস্য কাটছে না, হাসপাতালে ভর্তি

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ঐশী হামোমকে নিয়ে রহস্য কাটছেই না। বৃহস্পতিবার রাতে ঐশীকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর বাবা সনাতন হামোম। এতে ঐশী নিঁখোজ ঘটনায় নতুন করে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

এরআগে নিখোঁজের ১০ দিন পর বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে হাজির হয়ে ঐশি জানান, তিনি উৎপল সিংহকে বিয়ে করেছেন। এই দাবির প্রেক্ষিতে ঐশি ও উৎপলকে জামিন প্রদান করেন আদালত।

জামিন পেয়ে উৎপল তাঁর নিজ বাড়িতে চলে যান। আর ঐশীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁর বাবা-মা।

ঐশীকে দেখতে তাঁর বন্ধুদের অনেকে হাসপাতালে ছুটে এলে উৎপল হাসপাতালে আসেননি বলে জানা গেছে। ফলে এ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর নগরী থেকে নিঁখোজ হন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্রী ঐশী হামোম। ঐশীকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে। এই অভিযোগে নগরীর লিডিং ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী উৎপল সিংহকে আসামী করে মামলাও করে পরিবার।

তবে, বৃহস্পতিবার ঐশী আদালতে হাজির হয়ে উৎপলকে স্বামী হিসেবে দাবি করলে তাঁর পরিবারের মামলা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।

ঐশীকে হাসপাতালে ভর্তি বিষয়টি নিশ্চিত করে তাঁর কাকাতো ভাই হামোম বুঙোচা বলেন, সে শারিরীক ও মানসিকভাবে সুস্থ না। আদালতের নির্দেশই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তবে ঐশীর নিঁখোজ হওয়া ও উৎপলকে বিয়ে করা নিতে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। হামোম বুঙোচা বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের অনেক কথা বলার আছে। তবে এখন নয়, সময় হলেই বলবো।

হাসপাতালে ঐশীকে দেখে এসে তাঁর এক বন্ধু বলেন, ৭ নভেম্বর তাঁর চোখ মুখ বেঁধে উৎপলসহ চারজন তুলে নিয়ে যায় বলে আমাকে জানিয়েছেন ঐশী। তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলাপ করা যায়নি বলে জানান ওই বন্ধু।

আরও পড়ুন : ১০ দিন পর উৎপলকে নিয়ে আদালতে হাজির ঐশী

দুপুরে ঐশীকে আদালতে দেখতে যাওয়া তাঁর আরেক বন্ধু বলেন, এসময় ঐশী বিমর্ষ ছিলো ও তাকে শারিরীকভাবে সুস্থ মনে হয়নি।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ভালোবেসে বিয়ে করলে তাকে বিমর্ষ দেখাবে কেনো? এ ঘটনার পেছনে কোনো রহস্য থাকতে পারে বলে দাবি তাঁর।

ঐশীর নিঁখোজ হ্ওয়ার পর তাঁর ভাই, হামোম বুঙোচা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, উৎপল সিংহের সাথে সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো ঐশীর। বছরখানেক আগে এই সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে উৎপল। এরপর থেকেই সে ঐশীকে মোবাইল ফোনে ও ফেসবুকে বিরক্ত করতে থাকেন। এমনকি হুমকিও দিতে থাকে।

একই ধরণের দাবি করে ঐশীর ঘনিষ্ট বন্ধু ও সিকৃবি ছাত্রী মেমিতা মেমি ফেসবুকে লিখেন, 'উৎপল সিংহ ঐশীর এক্স বয়ফ্রেন্ড। প্রায় দেড় বছর আগে তাদের সম্পর্ক শেষ হয় এবং ব্যাপারটা পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে মেটানো হয়। কিন্তু উৎপল ঐশীর পিছু ছাড়ে নি। সে বিভিন্নভাবে তাকে বিরক্ত করত ও হুমকি দিত। যার সর্বশেষ ফলাফল ঐশীর অপহরণ।'

এ ব্যাপারে উৎপল সিংহের সাথে কথা বলতে চাইলে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ঐশীর বাবাও মেয়ের ফিরে আসা ও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

নানামূখী আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে আচমকা আদালতে হাজির হন ঐশি ও উৎপল। দুপুর ২টায় অতিরিক্ত মহানগর বিচারিক হাকিম উম্মে সরাবন তহুরা তাদের নিজ নিজ জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন।

এ ব্যাপারে নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা জানান, ‘মেয়েটি নিখোঁজ থাকায় আমরা তাকে উদ্ধারের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তিনি স্ব-ইচ্ছায় প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যান। আজ তিনি প্রেমিক সহ আদালতে আসেন।'

ঐশী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সনাতন হামোমে মেয়ে এবং উৎপল হবিগঞ্জের উপেন্দ্র সিংহের ছেলে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত