নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ নভেম্বর, ২০১৬ ২৩:২২

রাগীব আলীর বাগানে চা শ্রমিকদের চিকিৎসায় ভুয়া চিকিৎসক!

পদবী ডাক্তার, দায়িত্বেও রয়েছেন সিলেটে অবস্থিত দেশের প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা উৎপাদনকারী চা-বাগান হাসপাতালের, কিন্তু কথিত ওই চিকিৎসকের নামে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। যদিও তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে।

কথিত ওই চিকিৎসকের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নাম মহসিন তারেক, যদিও তিনি চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্রে তার নাম ডা. মহসিন তারেক গাজি ব্যবহার করে থাকেন।

সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া চা বা বাগান হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি। এই হাসপাতালের দুই হাজার শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার দায়িত্ব তার।

মালনীছড়া সিলেটের বিতর্কিত শিল্পপতি রাগীব আলীর মালিকানাধীন চা বাগান। দেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম চা উৎপাদন শুরু হয় এই বাগানে।

মহসিন তারেক গাজির দাবি তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী নিয়েছেন। ১২ বছর ধরে চিকিৎসা পেশায় আছেন বলেও জানিয়েছেন মহসিন তারেক।

তবে সিলেটের বিএমএ'র সভাপতি বলছেন, দেশে এ নামে কোনো চিকিৎসকের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নেই।

তবে মহসিন তারেক বিভিন্ন সময় তাঁর প্যাডে বিএমডিসি’র বিভিন্ন ব্যক্তির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা পেশা।

মহসিন তারেক গাজির দাবি, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে বিএমডিসি’র ৬০৯৯৬ রেজিস্ট্রেশন চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা পেশা। কিন্তু অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে প্রেসক্রিপশনে তিনি বিভিন্ন ব্যক্তির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, নূর মিয়া নামের এক চা-শ্রমিকের ডেথ সার্টিফিকেটে রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করেছেন ৬০৬৯৬, যা সিরাজগঞ্জের ডা. সৌমিক কুমার বসাকের, আরেক প্রেসক্রিপশনে কুমিল্লার ডা. জিনিয়া আফরিন মুন্নীর ৫৩১৫৩ রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করেছেন, আর তার দাবি অনুযায়ী ৬০৯৯৬ নম্বরটি মানিকগঞ্জের ডা. মো. আসাদুজ্জামানের নামে রয়েছে। এছাড়া ৬০৬৯৯৬ নম্বরটির বিএমডিসি'র ওয়েবসাইটে কোন অস্তিত্বই নেই।

সিলেট বিএমএ সভাপতি ডা. রোকন উদ্দিন বলেন, মহসিন তারেক নামে তাদের কোন চিকিৎসক নেই। ভুয়া চিকিৎসকদের কারণে রোগীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি চিকিৎসা পেশাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেন বিএমএ সভাপতি।

এই কথিত চিকিৎসকের সেবা নিতে হাসপাতালে প্রতিদিন ভিড় করেন চা-শ্রমিক নারী, শিশু ও বৃদ্ধারা। তবে তাদের অভিযোগ, মহসিন তারেকের দেয়া ওষুধ খেলে কোন কাজই হয় না।

জানা যায়, ২০১৪ সালে মহসিন গাজিকে ভুয়া ডাক্তার পদবি ব্যবহারের দায়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে আটকের পর মোবাইল কোর্ট সাজা দেয়। এমন একজন লোককে মালনীছড়া চা বাগানের হাসপাতালে নিয়োগ দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

এ ব্যাপারে বাগানের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে অনীহা প্রকাশ করলেও তাঁরা জানিয়েছেন, মালিকপক্ষই মহসিন তারেককে বাগান হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখনো কর্মরতও আছেন তিনি।

বাগান মালিক রাগীব আলীর জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি হয়ে বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশে এতবেশি ভুয়া ডাক্তার আছেন যে, তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে যেয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর মহসিন গাজী নামে যে লোক ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মালনীছড়া চা-বাগান হাসপাতালে চাকুরী করছেন তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তারপরও আমার কাছে যদি কোন অভিযোগ আসে আমি এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত