দেবব্রত চৌধুরী লিটন

০৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ২১:৩৩

শহরের পাশেই গ্রাম, তবু নেই সড়ক

সাত কিলোমিটারের ভাঙ্গাচোরা গ্রামীণ মেঠোপথ। মাঝখানে কিছু জায়গায় আবার সড়কি নেই। ধানী জমির ফসল তোলার পর ক্ষেতের আল কেটে তৈরি করা হয়েছে বিকল্প রাস্তা। শুকনো মৌসুমে ওই রাস্তা দিয়েই পায়ে হেটে পথ চলতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাই হচ্ছে এই গ্রামবাসীর একমাত্র ভরসা।

সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের আলীনগর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সড়ক যোগাযোগের এই বেহাল দশা। সড়ক না থাকায় গ্রামের পালপুর, নয়াগাও ও এংলাকান্দি এই ৩টি পাড়ার বাসিন্দাদের পোহাতে হয় দুর্ভোগে।

প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস আলীনগরে। সিলেট সদর উপজেলার বাসিন্দা হলেও তাদের খোঁজ কেউ রাখে না বলে জানান আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা পয়সট্টিঊর্ধ শামসুল হক। তিনি জানান, রাস্তা না থাকায় ভোগান্তির শেষ নেই আমাদের। কোন কাজে জেলা সদরে যেতে হলে পার্শ্ববর্তী জেলা সুনামগঞ্জের গোবিন্দগঞ্জ গিয়ে সেখান থেকে যেতে হয় সিলেটে।

সম্প্রতি আলীনগর গ্রামে গিয়ে কথা হল আব্দুল হামিদ (৪০) এর সাথে। রাস্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হলে কোন গত্যন্তর নেই আমাদের। হায়াত থাকলে রোগী বাঁচবে, না হলে মারা যাবে। বর্ষা মৌসুমে ইঞ্জিন নৌকায় করে রোগী পরিবহনের জন্য গোবিন্দগঞ্জ পর্যন্ত নৌকা ভাড়া করতে লাগে ১২০০-১৫০০ টাকা। তারপর সেখান থেকে সিলেটে নিতে হয়। এভাবেই চলে আমাদের দিন।

এ প্রসঙ্গে জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য সোনামালা বেগম সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরডটকমকে জানান, রাস্তা না থাকায় অনেকটা পথ হাঁটার পর বাকি রাস্তা বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করলেও প্রতিবার ইউনিয়ন পরিষদে আসা যাওয়া করতে খরচ পরে ৩০০ টাকা। এতে করে খুব জরুরী কাজ না থাকলে নিয়মিত যেতে পারি না কার্যালয়ে।

তিনি জানান, রাস্তা মেরামতের জন্য গ্রাম থেকে ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের কাছে অনেক বার ধর্না দিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাদের উপরও চাপ প্রয়োগ করা হয়, কিন্তু আমাদের কি করার আছে? অনেক চেষ্টার পরও এ রাস্তা মেরামত হয়নি দীর্ঘদিন ধরেই।

গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আলীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আলীনগর পালপুর দাখিল মাদ্রাসা নামে ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ গ্রামে। এর বেশি লেখাপড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জে। শুকনো মৌসুমে সেখানে যেতে হলে অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে পেরোতে হয় সুরমা নদী। বর্ষায় নৌকা।  আর এতে একজন শিক্ষার্থীর দৈনিক খরচ হয় গড়ে ২০০ টাকা। এতে করে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছেন অভিভাবকরা, জানালেন গ্রামটির একাধিক বাসিন্দা।

আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা ও জালালাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য কয়েছ আহমদ জানান, খাল খনন, সুইস গেইট নির্মান ও ১ কিলোমিটার রাস্তা করার জন্য ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে যার টেন্ডার কিছুদিন আগে হয়েছে। এই কাজটি হলে নদীর পারের ১ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার হবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিলেট সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ জানান, এ রাস্তার ৫ কিলোমিটারের মতো অংশের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আরো দেড় কিলোমিটারের কাজ চলছে।

তিনি বলেন, “এখানে কোন রাস্তাই ছিল না, আমরা এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তা নির্মাণ করেছি। এলাকার কিছু মানুষের বাধাও রয়েছে রাস্তার নির্মাণে। তবে আমরা রাস্তার কাজ করছি, দ্রুতই কাজ শেষ হবে”।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত