নিজস্ব প্রতিবেদক

০৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ২২:৩৭

একজনের অপরাধে অন্যজন কারাগারে, তদন্ত শুরু

সিলেটে একজনের অপরাধে অন্যজন জেল খাটার ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে তদন্ত কমিটি। রোববার থেকে তদন্ত শুরু করেছে।

জানা যায়, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে যাবজ্জীবন সাজার আসামির হয়ে প্রক্সি দিতে গিয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন রিপন আহমদ ভুট্টো নামের ওই ব্যক্তি। আসামিপক্ষের যোগসাজশে ঘটনাটি ঘটলেও তিনি এখন মুক্তির জন্য ব্যাকুল। একই সঙ্গে যারা তাকে ফুঁসলিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে, তাদেরও বিচার চান তিনি।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তার মুক্তির বিষয়ে সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আব্দুল হান্নান ও যুগ্ম জেলা জজ মো. রেজাউল করিমের সমন্বয়ে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। এছাড়া কারা কর্তৃপক্ষও ভুট্টোকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আবেদন জানিয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাফাত মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, একজনের পরিবর্তে অন্যজনের কারাভোগের বিষয়ে ‘জুডিশিয়াল ইনকুয়ারি’র সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের কমিটি গঠন হয়। রবিবার থেকে কমিটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত কাজ শুরু করেছে।

রবিবার দুপুরে সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আবদুল হান্নানের খাস কামরায় নিয়ে রিপন আহমদ ভুট্টো এবং আরো চার কয়েদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জানা যায়, সিলেটের সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের আলোচিত আলী আকবর সুমন হত্যা মামলার আসামি সেজে জেল খাটছেন ভুট্টো। তিনি নগরীর ৬নং ওয়ার্ডের সৈয়দ মুগনী তরঙ্গ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। মূল সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইকবাল হোসেন বকুল বর্তমানে সৌদি আরবে পালিয়ে রয়েছেন বলে তার পরিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

কারা সূত্র জানিয়েছে, জেল থেকে বের হওয়ার জন্য ভুট্টো পাগলপারা। ভুট্টো দাবি করছেন, তিনি নিজে নির্দোষ। তিনি প্রতারণার শিকার। ট্রাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। তিনি বুঝতেই পারেননি, আসলে কী ঘটেছে। তিনি আর অন্যের অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে কারাগারের ঘানি টানতে চান না। সরকারের সহযোগিতায় বেরিয়ে আসতে চান। একই সঙ্গে প্রকৃত আসামির শাস্তি চান।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরী থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হন আলী আকবর সুমন (২৪)। পরদিন মোগলগাঁও ইউনিয়নের হাউসা গ্রামের পাশে ঝিলকার হাওরে কচুরিপানার নিচে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় নিহতের ছোট ভাই আলী আহসান সুহেল বাদী হয়ে মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ২০ জুন কোতোয়ালি থানার তৎকালীন এসআই মারুফ হাসান ৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। শুনানি শেষে ২০১২ সালের ২০ জুন আলোচিত ওই মামলার রায় ঘোষণা করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক দিলীপ কুমার দেবনাথ। মামলার চার্জশিটভুক্ত ৯ আসামির মধ্যে তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদ- দেন আদালত।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন হাউসা গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর ছেলে দরাছ মিয়া ওরফে গয়াছ ও তার স্ত্রী রুজিনা বেগম এবং একই গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে মো. ইকবাল হোসেন বকুল। অবশ্য বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত তিন আসামিই পলাতক ছিলেন।

বছরখানেক আগে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বকুলের আদালতে আত্মসমর্পণ নিয়েই ভুট্টো ও বকুল নাটকের শুরু। সুমন হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি বকুল ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই রয়েছেন। তবে আত্মসমর্পণের এক বছর ২ মাস পর বেরিয়ে আসে মূল সত্য। যে বকুল কারাগারে রয়েছেন, তিনি আসল বকুল নন। তার আসল পরিচয় ভুট্টো। আর মূল আসামী ইকবাল হোসেন বকুল বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত