নিজস্ব প্রতিবেদক

২৪ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ২০:৩৪

সংস্কৃতির সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই : সিলেটে তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, সংস্কৃতির সাথে ধর্মের কোন বিরোধ নেই। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার চিত্র ফুটে ওঠে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সিলেটে চলমান ১০ দিনব্যাপী বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের তৃতীয় দিনে হাছন রাজা মঞ্চে অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংস্কৃতি মানবিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যম। অসুরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই সাংস্কৃতিক আয়োজনে দর্শকরা শামিল হয়েছেন। আরো বেশি বেশি করে এসব আয়োজন করতে হবে।

ইনু বলেন, সংস্কৃতি একটি প্রবাহমান বিষয়। সংস্কৃতি উৎসব প্রাণের উৎসব। ধর্মের নামে যারা সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। যখন আমরা কোন আলো দেখি না, তখন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, হুমায়ুন আহমেদের দিকে তাকাই। আশির দশকে হুমায়ুন চট করে একটি নাটকে বললেন 'তুই রাজাকার'। এরপর জাহানারা ইমাম বললেন, 'তুই রাজাকার। তোদের বিচার দরকার।'

তিনি বলেন, ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষি মানুষের আত্মার রাজধানী ঢাকা ও আত্মার দেশ বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও ভাষা সৈনিকদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, যে জাতি বীরদের সম্মান দেয় না সে জাতি বীরের জন্ম দেয় না। সে জন্য আমাদের ইতিহাসের চর্চা করা দরকার। পাকিস্তানিরা আমাদের ইতিহাস ধ্বংস করে দিতে চেয়েছিল। আমাদের ভাষাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্ত তারা তা পারেনি।
সিলেটের শাহ আব্দুল করিম, রাধারমন, হাছন রাজা ও সিলেটের মনীষীদেদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের হৃদয়ের ওপর জমে থাকা ধুলিকণা পরিষ্কার করে সংগীত। পহেলা বৈশাখ, ঈদ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর- এসব উৎসব সবাই পালন করে। এভাবে সংস্কৃতি চর্চা অব্যাহত রাখলে বাংলাদেশে কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

লালনের উদ্ধৃতি দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, লালন বলেছেন ডানে বেদ বামে কোরান, মাঝখানে ফকিরের বয়ান। আমরা সবাই মানুষ হই, মানুষকে ভালোবাসতে শিখি। সংস্কৃতি চর্চা না করতে পারলে আমরা হোঁচট খাবো।

এছাড়া উৎসবের তৃতীয় দিনে অতিথি হিসাবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। তিনি বলেন, সিলেট লোকসম্পদে সমৃদ্ধ। একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু এই সিলেট। সিলেটের তাজা সবুজ চা বাগান আমার নিজের বাড়ি দার্জিলিংকে মনে করিয়ে দেয়। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এই উৎসব মানুষকে একে অপরের কাছে আনার প্রচেষ্টা।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দু'দেশের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিরাজমান। একাত্তরে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে পারা ছিল ভারতীয়দের জন্য সবসময় গর্বের। আমরা শান্তিতে, সুসময়ে, দুঃসময়ে একে অপরের পাশে থাকবো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম দু'দেশের মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়েই লিখে গেছেণ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ এরকম সুন্দর একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য।

উৎসবে আরও বক্তব্য দেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু।

হাছন রাজা মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টায় সূচনা অধিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ৩য় দিনের অনুষ্ঠান। এর আগে সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হয় কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন। ৪ পর্বের এই সম্মেলন শেষ হয় সন্ধ্যায়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত