নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৭ ১৭:৪৫

জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি এজাজকে বহিষ্কারের দাবি পরিবহন শ্রমিকদের

প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ কোনো শ্রমিক নন, সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু শ্রমিক না হয়েও তিনি শ্রমিক নেতা বনে গেছেন। পরিবহন শ্রমিকসহ শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ঐক্য ও সার্বিক কল্যাণার্থে প্রকৌশলী এজাজকে শ্রমিক সংগঠন থেকে বহিষ্কার করতে হবে।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট বিভাগীয় কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয়, সিলেট জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিকলীগের আহবায়ক প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ বিভিন্ন নামে সংগঠন করে ‘দাগী অপরাধীদের আমদানি করে পরিবহন সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন’।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট বিভাগীয় কমিটির সভাপতি সেলিম আহমদ ফলিকের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া আহমদ।

‘সিলেটের পরিবহন সেক্টরে বিভাজন, বিভক্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা অপতৎপরতা, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়ি ভাঙচুরের নিন্দা, আবু সরকারসহ হামলাকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার, শ্রমিক ইউনিয়ন ও সংগঠনগুলোকে সরকারি দলের মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাকারিয়া আহমদকে মহানগর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়কের পদ থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে’ ওই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া আহমদ বলেন,‘গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পুলিশ-পরিবহন শ্রমিক নেতৃবৃন্দের বৈঠকে সিলেটে পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর গাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ২০ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, সিলেট বিভাগীয় কমিটি তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার নেপথ্যনায়ক শ্রমিকলীগ নেতা প্রকৌশলী এজাজুল হককে দল থেকে বহিষ্কারের দাবি জানায়। সভায় আমিও (জাকারিয়া) ছিলাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মহানগর শ্রমিকলীগের আহবায়ক এজাজুল হক ২২ ফেব্রুয়ারি মহানগর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক পদ থেকে আমাকে (জাকারিয়া) বহিষ্কার করেন। এ সিদ্ধান্ত সংগঠনের বিধি-নিয়মের পরিপন্থী। কোন শাখার আহবায়ক কেন্দ্র মনোনীত যুগ্ম আহবায়ককে বহিষ্কার করতে পারেন না।’

লিখিত বক্তব্যে জাকারিয়া আহমদ আরো বলেন,‘যেকোনো শ্রমজীবী সংগঠনের নেতা হতে হলে তাকে সংশ্লিষ্ট পেশার লোক হতে হবে। সিলেট জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিকলীগের আহবায়ক প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজ সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা, কোনো পেশাজীবী শ্রমিক নন। তার অসাংবিধানিক ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকা- আমরা মেনে নিতে পারি না। এজাজুল হক জাতীয় শ্রমিকলীগে যোগদানের পর থেকে একক আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে পরিবহন শ্রমিক সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে চলেছেন। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাসীন দলের ‘‘লীগ” শব্দ ব্যবহার করে ‘‘নীতিবিরোধী বাস শ্রমিকলীগ, ট্রাক শ্রমিকলীগ, হেল্পারলীগ, চালকলীগ’’ প্রভৃতি সংগঠন করে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে বিরোধ-বিভক্তি সৃষ্টি করে চলেছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি শফিক চৌধুরীর গাড়িতে হামলার নেতৃত্বে ছিলেন এজাজুল হকের ঘনিষ্ট ব্যক্তি ও সাবেক ট্রাক শ্রমিক নেতা আবু সরকার। ঘটনার পর আবু সরকারসহ ২০ জনকে বহিষ্কার করা হয়। স্বভাবতই ২০ ফেব্রুয়ারির সভায় প্রকৌশলী এজাজকে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।’

জাকারিয়া আহমদ আরো বলেন,‘প্রকৌশলী এজাজ শ্রমিক না হয়েও জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্র, জেলা ও মহানগরের ৩টি পদ আঁকড়ে রেখেছেন। ছাত্রলীগের সাবেক দুই নেতাকে সিলেট মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি ও সেক্রেটারি বানাতে চাইছেন তিনি। আমরা শ্রমিকদের সংগঠনে শ্রমিকবহির্ভূত বা শ্রমিক নন এমন কোন নেতৃত্ব চাই না। এ কারণে এজাজুল হক আমাদের উপর ক্ষুব্ধ। বিভিন্ন উপজেলা শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে (জাকারিয়া) শ্রমিকলীগ সিলেট জেলা সভাপতি দেখতে চায়। কিন্তু এজাজ সাহেব তা চান না।’

‘একটি কুচক্রিমহল সরকারের সাথে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনগুলোর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট করতে চায়। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে ক্ষমতাসীন দলকে পরিবহন সেক্টরের মুখোমুখি দাঁড় করাতে মরিয়া’ উল্লেখ করে জাকারিয়া আহমদ বলেন,‘সিলেটের রেজিস্টার্ড শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর মধ্যে কেউ যেন বিভক্তি সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে জেলা সড়ক পরিবহন এক্য পরিষদ ও সিলেট বিভাগ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ সজাগ।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রকৌশলী এজাজুল হক এজাজের নানা কর্মকা-ের ফিরিস্তি দিয়ে বলা হয়,‘পরিবহন শ্রমিকসহ শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ঐক্য ও সার্বিক কল্যাণার্থে ‘‘শ্রমিক নন’’ এমন প্রকৌশলী এজাজকে শ্রমিক সংগঠন থেকে বহিষ্কার করতে হবে।’

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রী, সরকারি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি দিলু মিয়া, কার্যকরী সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক গফুর মিয়া, অটোটেম্পু অটোরিক্সা শ্রমিক জোটের (২০৯৭) সভাপতি খলিল খান, কার্যকরী সভাপতি মতছির আলী, অটোরিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের (৭০৭) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাহাবুদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ মামুনুর রশীদ, আঞ্চলিক কমিটির উপশহর শাখার সাধারণ সম্পাদক অনুর চৌধুরী, টিলাগড় শাখার সভাপতি নুরুল ইসলাম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আলেক খান, জেলা উপকমিটির সদস্য বরকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা শাখার সদস্য শামসুল ইসলাম, মুরাদ মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত