নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ মে, ২০১৭ ০১:৪৬

হাওরপাড়ের স্কুলগুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি

অকাল বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর সুনামগঞ্জের হাওরপাড়ের স্কুলগুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে গড়ে ত্রিশ শতাংশ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিস্টরা।

স্থানীয় শিক্ষকরা বলছেন, পরিবারের বিকল্প আয়ের জন্য মাছ শিকারে যাওয়া, ত্রাণের লাইনে দাঁড়ানো এবং ধান কাটায় ব্যস্ত থাকার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। এছাড়া কাজের জন্য অনেক পরিবার হাওর এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারছে না শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ।

এ বিষয়ে ধর্মপাশা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, আগামীতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আরো কমবে। পানি নেমে গেলেই দেখা দেবে অবর্ণনীয় অভাব। এ এলাকায় কাজেরও তেমন সুযোগ নেই। ফলে দলে দলে লোকজন পরিবার নিয়ে কাজের সন্ধানে চলে যাবে। এতে করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমবে। এদের অনেকে ঝরে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা তার।

জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ফসলহানিতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সবচেয়ে কম। দিরাই, শাল্লা, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার মতো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বিদ্যালয়গুলোয় গড়ে ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী গত মার্চ থেকে অনুপস্থিত রয়েছে। আবার এসব এলাকার উপজেলা সদর থেকে গ্রামাঞ্চলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কম। তবে জেলা সদরসহ কম ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর বিদ্যালয়ে তেমন প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় তিন লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে চলতি মাসে শেষ হওয়া প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. বায়েজিদ খান জানান, পাহাড়ি ঢল ও অকালবন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওরপ্রধান এলাকাগুলোয় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। সম্প্রতি শেষ হওয়া প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় ১২ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, হাওনের একমাত্র ফসল নষ্ট হওয়ার পর আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে হাওড়ের প্রতিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালুর অনুরোধ জানিয়েছি। পাশাপাশি ঝরে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনতে প্রচারণা চালাচ্ছি।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, সুনামগঞ্জের মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৩৮১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। হাওরের একমাত্র ফসল ডুবে যাওয়ার পর এ পর্যন্ত মাধ্যমিক পর্যায়ে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, কাজের জন্য অনেকে সপরিবারে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। হাওরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির আওতায় আনার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।

সুনামগঞ্জ থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ হাজার ৩৬২ জন। দাখিল ও টেকনিক্যাল মিলিয়ে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। উত্তীর্ণদের কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে হাওড়ে ফসল হারানো পরিবারগুলো।

তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট এলাকার কৃষক সমুজ আলীর ছেলে আবদুল আলী এ বছর স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে অংশ নিয়ে ‘বি’ গ্রেডে উন্নীত হয়। কিন্তু অভাবের সংসারে সন্তানকে কলেজে ভর্তি করানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন আবদুল আলীর বাবা সমুজ আলী। তিনি বলেন, আগে চিন্তা ছিল ছেলে পাস করবে কিনা। এখন চিন্তা হয় কীভাবে ছেলেকে কলেজে ভর্তি করব। ঘরের খাবারই জোগাড় করা সম্ভব হয় না, কলেজে ভর্তির টাকা পাব কোথায়?

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দে মনে করেন, ঝরে পড়া রোধে সুনামগঞ্জের স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, বিনামূল্যে মধ্যাহ্নের খাবার বিতরণ, এসএসসি উত্তীর্ণদের ভর্তি ফি মওকুফসহ সব শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বিশেষ বৃত্তি দেয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সুনামগঞ্জ সফরকালে তিনি এসব দাবি জানিয়েছেন বলে জানান পরিমল কান্তি দে।

একই দাবি পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজারও। তিনি বলেন, ঝড়ে পড়া রোধে হাওরপাড়ের স্কুলগুলোর ছাত্রদের বেতন মওকুফ ও শিক্ষা উপকরণ বিনামূল্যে বিতরণ করা প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত