মো. মুন্না মিয়া, জগন্নাথপুর

১৮ জুন, ২০১৭ ২৩:০৭

হাওরে বন্যার প্রভাব : ক্রেতাশূন্য জগন্নাথপুরের ইফতার ও ঈদ বাজার

সাম্প্রতিক অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জ জেলার সবকটি হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর নিঃস্ব এখন এই অঞ্চলের কৃষকরা। নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে দুঃখের প্রহর গুনছে এখানকার কৃষক পরিবারগুলো। অনেকেই স্বপ্ন একেঁছিলেন এবারের রমজান আর ঈদ পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু আনন্দ মাখা পরিবেশে কাটাবেন। কিন্তু সব স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে চৈত্র মাসের আগাম বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে। এখন ঈদ উদযাপন তো অনেক দূর, রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীও জুটছে না অনেকের ভাগ্যে।

আর এর প্রভাবটা পড়েছে জগন্নাথপুর উপজেলায় এবারের রমজানের ইফতারীর বাজার ও ঈদের কেনাকাটায়। বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন বিপনীবিতানগুলোতে নেই ক্রেতা। হতাশায় দিন গুনছেন বিক্রেতারা। ঈদের বাজারের যেমন নেই ক্রেতা, তেমনি নেই ইফতার সামগ্রী ক্রেতাও। বিবাহিত মেয়েদের বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে রমজানে ইফতার সামগ্রী ও মৌসুমী ফল পাঠানোর পরিচিত রেওয়াজটিও অনেক কম দেখা গেছে এবার।

ইফতার সামগ্রী বিক্রয়কারী কয়েকটি দোকান মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতবছর ইফতারী বিক্রি বেশ ভাল হয়েছিল, কিন্তু এ বছর হাওর ডুবিতে এ ব্যবসাটা মন্দা যাচ্ছে। ২০-২১ রমজান চলে গেলেও বড় কোনো পার্টির ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হয়নি এ বছর। আমরা এখন এ ব্যবসা নিয়ে চরম সমস্যায় দিন গুনছি।

জগন্নাথপুর বাজারের মিতালী রেষ্টুরেন্টের মালিক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগের মতো বেচা-কেনা হচ্ছে না। নিজেদের স্থায়ী কিছু ক্রেতাদের কারণে দোকানপাট খোলা রাখতে হচ্ছে। ব্যবসা এখনও জমে উঠেনি। রমজানও শেষের পথে।

পৌর শহরের ভবের বাজারের ফাইজা রেষ্টুরেন্টের মালিক ফখরুল ইসলাম ও হাসান রেষ্টুরেন্টের মালিক জিহাদ উদ্দিন জানান, এবার আমাদের সব দিকে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে হচ্ছে। ব্যবসায় চরম মন্দা। ক্রেতা শূণ্যতায়ও মুখ উচিঁয়ে বসে আছি একটু সুফল পাওয়ার আশায়। রমজান প্রায় শেষ, এখনও বাজার জমে উঠেনি। কর্মচারীর বেতন নিয়ে এবার চরম সংশয়ে রয়েছি আমরা।

প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলার সৈয়দপুর বাজারে ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন বিপনী বিতানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় পূর্বে দেখা গেলেও এবছর তেমনটা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে অনেকেই এমন ক্রেতা শূন্যতাকে হাওরে ক্ষতির প্রভাব হিসেবে মনে করছেন।

সৈয়দপুর বাজারে জগন্নাথপুর উপজেলার প্রথম নির্মিত বহুতল বিশিষ্ট শপিং মল রাদিশ শপিং কমপেক্সে প্রতিবছর ১৫ রমজানের আগে থেকেই শুরু হতো মুসলিম পরিবারগুলোর ঈদের কেনাকাটা। কিন্তু এবছর হাওরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর বিভিন্ন বিপণি বিতানগুলো ভুগছে ক্রেতা শূন্যতায়।

মাহা কালেকশনের পরিচালক ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম জানান, এ বছর আমরা ক্রেতা শূন্যতায় ভুগছি। গত বছর ১৫ রমজানের আগেই আমাদের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় ছিল, কিন্তু এবার তেমনটা নেই। গতবছরের তুলনায় এবারের বিক্রি তিন ভাগের এক ভাগও হয়নি। তবে আমরা আশাবাদী, সময় বাড়ার সাথে সাথে ক্রেতাদের উপস্থিতি বাড়বে।

আরেক ব্যবসায়ী রূপরঙ লেডিস ফ্যাশনের পরিচালক সৈয়দ বোরহান জানান, আমি গত কয়েক বছর ধরে এ বাজারে ব্যবসা করে আসছি, কিন্তু এবারের মতো আর কখনো এমন ক্রেতা খরায় ভুগিনি। আমার দোকানে ১২ রমজান থেকেই থাকতো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড়, কিন্তু এ বছর আমাদের পুরো বাজার জুড়েই যেনো সবারই একই অবস্থা। তবে তাতে আমি হতাশ নই, আশা করছি ক্রেতারা খুব শীঘ্রই ভীড় জমাবেন আমাদের এই বাজারে।

জগন্নাথপুর বাজারের বিন্দুজ অভিজাত বিপণির সত্বাধিকারী মিন্টু রঞ্জন ধর জানান, প্রত্যাশা মতো ব্যবসা হচ্ছে, কিন্তু গত বছরের তুলনায় তা অনেক কম। হাওরডুবির প্রভাব পড়েছে এখানকার ঈদ বাজারে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন মন্দা। যা বিক্রি করছি তাতেই সন্তুষ্ট আমরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবাহিত কয়েকজন পুরুষ জানান, গত বছর বিপুল পরিমাণ ইফতার সামগ্রী শ্বশুর বাড়ি থেকে এলেও এবার ভাটা পড়েছে এই রেওয়াজে।

সদ্য বিবাহিত কয়েকজন জানান, বিয়ে করেছি মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস হবে। কিন্তু আমাদের শ্বশুর বাড়ির লোকজন একমাত্র কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় আমরা এ বছর শ্বশুর বাড়ি ইফতার সামগ্রী পাইনি। কীভাবে তাঁরা আমাদের বাড়িতে ইফতার সামগ্রী পাঠাবেন? তাদের ভাগ্যেও তো জুটছে না ইফতারীর পণ্য।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত