হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

০৯ অক্টোবর, ২০১৭ ২১:২৯

হুমকি দিয়ে পিছু হঠলেন সাংসদ, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন কেয়া চৌধুরী

সকল বাধা উপেক্ষা করে অবশেষে হবিগঞ্জের বাহুবলে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।

সোমবার বিকাল সাড়ে তিনটায় মিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন তিনি। এ সময় স্থানীয়রা তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেন।

গত দুদিন ধরে এ স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন নিয়ে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতীবৃন্দ ও জাপা সংসদ সদস্যের সাথে এমপি কেয়া চৌধুরীর বিরোধ দেখা দেয়। জাতীয় পার্টির এমপি আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু ওই স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার ঘোষণা দেন। তার সাথে বাহুবল উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একদল নেতা কর্মী ভিত্তি প্রস্তরস্থাপন অনুষ্ঠান স্থলে কর্মীসভা আহবান করেন। কেয়া চৌধুরীকে এলাকায় প্রতিহত করারও ঘোষণা দেন সাংসদ মুনিম।

বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলে এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। রোববার রাত থেকে অনুষ্ঠান স্থলে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। বিপুল সংখ্যক র‌্যাব ও পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের কারনে জাপা এমপি মুনিম বাবু তাঁর পূর্ব ঘোষণা প্রত্যাহার করেন। একই সাথে আওয়ামীলীগের একাংশের কর্মী সভাও পন্ড হয়ে যায়।

এদিকে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন শেষে স্থানীয় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এতে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জসিম উদ্দিন সভাপতিত্ব করেন। এ সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জ ও সিলেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী সংসদ সদস্য আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় বাহুবলে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ অবস্থায় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও উপজেলা প্রশাসন উক্ত স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সোমবার বিকেল ৩টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয় নারী সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরীকে। কিন্তু নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনের জাতীয় পার্টি দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু তাঁর নির্বাচনী এলাকায় তিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এজন্য প্রশাসনকেও চাপ প্রদান করেন তিনি।

অপরদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীও কেয়া চৌধুরীর বিরোধিতায় মাঠৈ নামেন।

এ ব্যাপারে এমপি আব্দুল মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, প্রতিটি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম করা প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ। এর প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের দিকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী আমাকে চিঠি দেন। সেই চিঠি পাওয়ার পর আমি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্টেডিয়ামের জায়গা নির্ধারণ করি। কিছু দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে দেখি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্টেডিয়াম ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পত্র বিলি করছেন। আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম এই আসনের এমপি আমি অথচ এ সম্পর্কে আমাকে কিছু কেন জানানো হল না। তিনি জবাব দিলেন এটা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

তিনি বলেন, সিলেট এবং হবিগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি তিনি আর এটা আমার নির্বাচনী এলাকা। তাই এই স্টেডিয়াম আমি উদ্ধোধন করব বলে ইউএনও কে জানাই। জেলা আইনশৃংখলা মিটিংয়েও আমি এ কথা বলেছি। কিন্তু প্রশাসন কেয়া চৌধুরীর পক্ষ নেয়। এর প্রেক্ষিতে আমার দলীয় কর্মীরা ওই স্থানে রবিবার রাতে অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। পরে চিন্তা করলাম যেহেতু আমরা ঐক্যমতের সরকারে মহাজোটে আছি। তাই আমাদের পাল্টপাল্টি কর্মসূচিতে সরকারের বদনাম হবে। এইজন্যই আমি ও আমার সমর্থকরা রাতেই কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেই।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আব্দুল হাই বলেন, প্রশাসন উপজেলা আওয়ামীলীগকে পাশ কাটিয়ে এ স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমার চেয়েছিলাম আওয়ামীলীগের সর্বস্তরের জনগনের উপস্থিতে এ অনুষ্ঠান করব।

এ ব্যপারে এমপি কেয়া চৌধুরীর সাথে ফোনে কথা বলেছিলাম কিন্তু তিনি আমাদের কথা রাখেননি। র‌্যাব পুলিশ দিয়ে তিনি বাহুবলকে গরম করে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে একাই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন এমপি কেয়া চৌধুরী । সরকার দলের হয়েও বিরোধী দলের মত আচরন করা হচ্ছে আমাদের সাথে। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করায় আমরা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠান বয়কট করেছে।

তবে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘সবাই দেখেছে কিভাবে লাল সবুজে ছেয়ে গেছে বাহুবল। সকল শ্রেনী পেশার নারী পুরুষ দলমত নির্বিশেষে শেখ হাসিনার উপহার গ্রহণ করেছেন। সকলের অংশগ্রহণে একটি স্বতস্পূর্ত আয়োজন এটি। জননেত্রী যে স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন জনগনের দ্বার গোড়ায় পৌছে দেয়া আমাদের কাজ। সকল ভাল কাজের পেছনে কিছু মন্দ কাজ ও থাকে।

তিনি বলেন, যারা এই কাজে সহযোগিতা থেকে দূরে ছিলেন হয়ত তারা শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সেভাবে মেনে নিতে পারেননি। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করবো না। আমি মনে করি সকলের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে।’

আগামী নির্বাচনে এই আসনে নির্বাচন করার আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কিনা? এ প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকার মানুষ যদি আমাকে চান। জনগনের এই বার্তা আমার নেত্রীর কাছে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। '

আপনার মন্তব্য

আলোচিত