নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:৫২

আতঙ্কের নাম ‘টিলাগড় ছাত্রলীগ’

সিলেটে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে ‘টিলাগড় ছাত্রলীগ’। ছাত্রলীগের এই বলয়ের নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস ও অপকর্মে বিতর্কে জড়াচ্ছে পুরো ছাত্রলীগ। গত একমাসের ব্যবধানে ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের সন্ত্রাসীদের হামলায় খুন হন নিজ দলেরই দুই কর্মী।

টিলাগড়কেন্দ্রীক আওয়ামী লীগের দুই নেতার বিরোধের কারণে নিয়মিতই সংঘাতে জড়াচ্ছে তাদের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতারা। টিলাগড় এলাকার এমসি কলেজ, সরকারি কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বজায় রাখতেও সংঘাতে জড়াচ্ছে এই দুই নেতার অনুসারীরা। ফলে ছাত্রলীগের 'কাঁটা' হয়ে উঠেছে টিলাগড় বলয়ের নেতাকর্মীরা।

সংঘাত, প্রাণহানি, ছাত্রাবাস ভাংচুরসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্ম করেও শুধু নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। ফলে ধারাবাহিকভাবেই ঘটছে সংঘাত। সিলেটে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ৭ বছরে ঘটেছে ৮টি প্রাণহানির ঘটনা। যার তিনটিই ঘটেছে টিলাগড় ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে।

এমন ঘটনাকে দলের জন্য বিব্রতকর বলে মন্তব্য করেছেন সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষার। একের পর এক প্রাণহানির ফলে ছাত্রলীগের বদনাম হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, কোন্দল নিরসনে অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

জানা যায়, টিলাগড় ছাত্রলীগের একটি অংশকে নেতৃত্ব দেন হিরন মাহমুদ নিপু। যিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক এডভোকেট রনজিত সরকার অনুসারী বলে পরিচিত। আর অপর অংশের নেতৃত্ব রয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান আহমদ চৌধুরী। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরপরই ২০১০ সালে টিলাগড়ে ছাত্রলীগের কোন্দলে খুন হন এমসি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা উদয়েন্দু সিংহ পলাশ। এরপর থেকেই বেপরোয়া টিলাগড়ের ছাত্রলীগ। এমসি কলেজের হল পোড়ানো, হল ভাংচুর, অস্ত্রবাজি, খুন- সকল অপকর্মেই এগিয়ে টিলাগড় ছাত্রলীগ।

টিলাগড় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অতিষ্ঠ টিলাগড় এলাকার ব্যবসায়ীরা। প্রায়ই নিজেদের মধ্যে মারামারি থেকে টিলাগড় এলাকায় দোকান ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী, টিলাগড় এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা  ছাত্রলীগের কোন্দলের ফলে ভোগান্তির কথা জানিয়ে বলেন, টিলাগড় এলাকার মানুষ সব সময়ই আতঙ্কে থাকতে হয়। এখানকার দুই নেতার প্রকাশ্যে নিজেদের মধ্যে সখ্যতা অপরদিকে নিজেদের অনুসারীদের মধ্যে দা-কুমড়ার এই সম্পর্কের কারণে এখানকার সবাই অতিষ্ঠ।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর শিবগঞ্জ এলাকায় প্রতিপক্ষ গ্রুপের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ছাত্রলীগের কর্মী জাকারিয়া মোহাম্মদ মাসুম। মাসুম হত্যার এক মাস পূর্ণ হতে না হতেই সোমবার বিকাল ৩টায় কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এর অফিসের সামনে প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন হিরণ মাহমুদ নিপু গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী ওমর আহমদ মিয়াদ।

হামলাকারীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরীর অনুসারী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এরআগে ২০১২ সালের ৮ জুলাই রাতে শিবির তাড়ানোর নামে মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসের ৩টি ব্লকের ৪২টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ।

ভস্মীভূত ছাত্রাবাস পুনর্নির্মাণ করা হলে গত ১৩ জুলাই ছাত্রাবাসের দরজা জানালা ভাংচুর করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। বন্ধ হয়ে যায় ছাত্রাবাস।

এভাবে একের পর অপকর্মে জড়াচ্ছে বেপরোয়া হয়ে উঠা ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপ। নানা অপকর্ম চালিয়ে গেলেও তাদের বিরুদ্ধে নেই কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা। খুন করেও ধরা পড়ে না আসামীরা।

এব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংসা করে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবুও নিজেদের অজান্তেই এই ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই আমরা এখন থেকে কঠোর অবস্থানে থাকবো। তাছাড়া এই ধরণের ঘটনা যারা ঘটায় তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত