নিজস্ব প্রতিবেদক

১২ নভেম্বর, ২০১৭ ০১:৪৫

আসামী হয়েও সাংসদ ইমরানের সঙ্গে মঞ্চে সেই শামীম

মাত্র দুই দিন আগে কোম্পানীগঞ্জের বিতর্কিত পাথর ব্যবসায়ী শামীম মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ মামলা দায়েরের মাত্র দু'দিুন পরই স্থানীয় সাংসদ ইমরান আহমদের সাথে একসাথে এক মঞ্চে দেখা গেছে শামীমকে। এ সময় পুলিশও উপস্থিত ছিল।

শামীম মিয়া সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম মিয়া। পরিবেশ অধিদপ্তরের করা মামলাটিতে তাঁর ভাই বিলাল মিয়া ও তাঁদের ১৫ জন আত্মীয়সহ ২২ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শুক্রবার ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মিসভায় সাংসদ ইমরান আহমদের সঙ্গে শামীমও বক্তব্য দেন। পরে সাংসদের সঙ্গে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানেও মঞ্চে ছিলেন তিনি।

এ দুটো অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে শামীম তাঁর ফেসবুকে ছবিগুলো আপলোড করেন। এতে দুটো অনুষ্ঠানের আটটি ছবি দেখা যায়। এর মধ্যে চারটিতে শামীম বক্তৃতা দিয়েছিলেন। বাকি দুটোয় মঞ্চে সাংসদ ইমরানের ঠিক পেছনে দাঁড়ানো।

এ দুটো অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বিশেষ অতিথি ছিলেন। তিনি সিলেট মহানগর বিচারিক হাকিম আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলিও (এপিপি)।

আসামির এভাবে প্রকাশ্যে উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘কর্মিসভায় তাঁর (শামীমের) উপস্থিতি নিয়ে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বলতে পারব না। তবে আইনজীবী হিসেবে বলছি, তাঁর এ রকম উপস্থিতি ঠিক হয়নি। পুলিশ এ ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারত।’

কোম্পানীগঞ্জ থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, সাংসদের তিনটি অনুষ্ঠানে পুলিশের একটি দল ছিল। এর মধ্যে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সরকারি অনুষ্ঠান হওয়ায় সেখানে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সফিকুর রহমান খানও ছিলেন। শামীমকে গ্রেপ্তারে তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মুহম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, ‘আমি শুনেছি যে পরিবেশ আইনে মামলা থানায় নথিভুক্ত হলেও তদন্ত পরিবেশ অধিদপ্তরই করে। তদন্তের পর অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি আসে। তবু বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, একজন আইন প্রণেতা যাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন তিনি সরকারেরই বিভিন্ন সংস্থার দায়ের করা মামলার আসামি। এটা আইনের প্রতি অবজ্ঞার শামিল। এ ব্যাপারে প্রশাসনকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। কারণ পুলিশ প্রশাসন শপথ ও দায়িত্ব পালনে ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। একজন আইন প্রণেতা হয়ে পরিবেশ ধ্বংসের শীর্ষস্থানীয় অভিযুক্তকে নিয়ে ঘোরাফেরা করে পরিবেশ রক্ষায় আদালত ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হয়েছে।

শামীমের বাবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল বাছির। মামলা দায়েরের খবর পেয়ে গত বুধবার তাঁদের পক্ষের শ্রমিকেরা ভোলাগঞ্জ মোড়ে ট্রাক ফেলে রাখেন। এ কারণে পুরো দিন সিলেট-কোম্পানীগঞ্জসহ তিনটি সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসন জরুরি বৈঠকে বসলে সেখানে শামীমের বাবা সড়ক সচলের আশ্বাস দেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

সূত্র: প্রথম আলো, যুগান্তর

আপনার মন্তব্য

আলোচিত