নিউজ ডেস্ক

১৩ জানুয়ারি, ২০১৫ ১০:১০

সিলেটে ৭ রাতে অবরোধের আগুনে পুড়ল এক ডজন গাড়ি!

বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধে বিচ্ছিন্ন হামলায় গত ৭ রাতে সিলেটে প্রায় ১২টি গাড়ি পুড়েছে

১২ জানুয়ারি এই ট্রাকে আগুন দেয়া হয়


বিএনপি সহ ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধে বিচ্ছিন্ন হামলায় গত ৭ রাতে সিলেটে প্রায় ১২টি গাড়ি পুড়েছে । বেশিরভাগই রাতের আঁধারে । দিনের বেলা আইন শৃঙখলা বাহিনীর কড়া নজরদারি থাকলেও রাত পরিনত হচ্ছে অরক্ষিত জনপদে। আর এই সুযোগে অবরোধকারীরা বেছে নিয়েছে রাতের আঁধারকে। সুযোগ বুঝেই তারা হামলা চালাচ্ছে বিভিন্ন যানবাহনে। হামলার শিকার হয়েছে পন্যবাহী ট্রাক থেকে যাত্রীবাহি মাইক্রোবাস পর্যন্ত ।  সোমবার রাতে বিদেশ ফেরত যাত্রীদের মাইক্রবাসে আগুন দিয়েছিল অবরোধকারীরা । যদিও ওই ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ । তবে রাতে ঘটা বেশিরভাগ ঘটনায় দুর্বৃত্তদের আটক করতে পারেনি পুলিশ ।

ফলে হরতাল ও চলমান টানা অবরোধে ইতোমধ্যে সিলেট নগরীসহ জেলা বিভিন্ন স্থানে এক ডজনেরও বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আর এসব ঘটনায় যেমন বেশক’টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তেমনি ভাঙচুর করা হয়েছে ছোট-বড় বিপুলসংখ্যক যানবাহন।

ফলে রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দেয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বেশ কিছুদিন দেশে অনেকটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকলেও গত ৫ জানুয়ারিকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক ময়দান। দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যায়িত করে বিএনপি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের ঘোষণা দেয়। অপরদিকে, সরকার দল ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন দিবসটিকে গণতন্ত্রের বিজয় দিবস আখ্যা দিয়ে ঘোষণা দেয় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী। এ অবস্থায় অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে স্থানীয় প্রশাসন। পূর্বঘোষণার পরও সমাবেশ করতে না পারায় সারাদেশে টানা অবরোধের ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার এ ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলাসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির প্রচেষ্টা চালায় বিএনপি-জামাতসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তারা রাজপথ দখলে নিতে ব্যর্থ হয়। কিন্তু এরপরও বসে থাকেনি নেতাকর্মীরা। দিনের বেলায় মাঠে নামতে না পারলেও রাতের আঁধারে সুযোগবুঝে তারা হামলা চালায় বিভিন্ন যানবাহনে। করে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ।  ৫ জানুয়ারি থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সিলেট নগরীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এক ডজনেরও বেশি হামলা চালিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার এমনি অতর্কিত হমলার ঘটনা ঘটে নগরীর সুবিদবাজার এলাকায়। তারাদিন রেষ্টুরেন্টের পাশ্ববর্তী একটি গলি থেকে বের হয়ে অবরোধ সমর্থকরা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে একটি মাইক্রোবাস (সিলেট-চ ১১-০৩৩৫) ও অপর একটি সিএনজি অটোরিকসায় (সিলেট-থ ১২-৮৮০৬) আগুন দেয়। সংবাদ পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা সেখানে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ঘটনায় সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে গমনকারী মাইক্রোবাসটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে মুন্না নামের এক ছাত্রদল কর্মীকে আটক করে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ। প্রায় একই সময় দক্ষিণ সুরমার লাউয়াই এলাকায় একটি ট্রাকের গতিরোধ করে আগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে রোববার রাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের কুমারগাঁওয়ে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাকে (যশোর-ট ১১-১২৯৮) আগুন দেয় অবরোধ সমর্থকরা।

এসময় আরো বেশ ক’টি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। অবরোধের পঞ্চম দিন শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ সুরমার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের গালিমপুর নামক স্থানে একটি পাথর বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। চতুর্থ দিন শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টায় নগরীর দক্ষিণ সুরমার তেতলিতে অবরোধ সমর্থকরা অগ্নিসংযোগ করে একটি যাত্রীবাহী বাসে। ওই রাত সাড়ে ৮টায় নগরীর নতুন রেলস্টেশন এলাকায় একটি সিএনজি অটোরিকসাও ভাঙচুর করা হয়। তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টায় নগরীর পশ্চিম শাহী ঈদগাহ এলাকায় একটি চালবোঝাই ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় অবরোধ সমর্থকরা। আগের দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর বন্দরবাজারস্থ রংমহল টাওয়ারের সামনে একটি ট্রাক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রায় একই সময় সিলেটের জকিগঞ্জে একটি যাত্রীবাহী বাসেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন ১০ জন।

একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দক্ষিণ সুরমার লাউয়াইস্থ যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে ভাঙচুর করা হয় একটি সিএনজি অটোরিকসা। তাছাড়া গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে খালেদা জিয়া দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেওয়ার পর রাত পৌনে ৯টায় সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ ফরহাদ খাঁ সেতুর পাশে দুটি সিএনজি অটোরিকসায় দেয় অবরোধ সমর্থকরা। একইসময়ে খাদিমপাড়ায় অপর একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. রহমত উল্লাহ বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত