জাহিদুল ইসলাম

১৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:৪৪

ওসমানী হাসপাতাল: ১৯ বছরেও মিলেনি কাঙ্খিত সুযোগ-সুবিধা

১৯ বছর আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজকে ৫০০ শয্যা থেকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু গেলো ১৯ বছরে ৯০০ শয্যার খুব কম সুবিধাই পেয়েছে এই হাসপাতালটি। এই সময়ে বাড়নে লোকবল। ফলে ব্যাহত হচ্ছে এখানকার চিকিৎসাসেবা।

সিলেট বিভাগের উন্নত চিকিৎসার সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ১৯৩৬ সালে ইন্সটিটিউট হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই হাসপাতাল ১৯৪৮ সালে ২০০ শয্যার মেডিকেল স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬২ সালে উন্নীত হয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১৯৮৬ সালে এমএজি ওসমানীর নামে নামকরণ করা হয় এই হাসপাতালের। বর্তমানে কাগজে পত্রে এর শয্যা সংখ্যা ৯০০। ১৯৯৮ সালে ৫০০ শয্যা থেকে ৯০০ শয্যায় উন্নীত হওয়ার পরেও এখনো শুধুমাত্র খাবার এবং ঔষধ ছাড়া বাকি সবকিছুই ৫০০ শয্যার অনুপাতেই আছে। তবুও বিভাগজুড়ে চিকিৎসাপ্রার্থীদের শেষ ভরসার নাম এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

৫০০ শয্যার সুযোগ সুবিধাও সম্পূর্ণরূপে না পেলেও প্রতিদিন গড়ে ২০০০ রোগীকে আবাসিক চিকিৎসা দিয়ে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হিসেবে অনুমোদিত বিভিন্ন শ্রেণির ১ হাজার ৫০৯ টি পদের মধ্যে ৪৬২ টি শূন্য পদ নিয়েই চালাতে হচ্ছে সেবা কার্যক্রম।

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডাঃ দেবপদ রায়ের বক্তব্য অনুযায়ী সীমিত ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগেই এটা সম্ভব হচ্ছে। কখনো সেবিকা ও ওয়ার্ডবয়দের দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করাতে হচ্ছে, আবার কিছু সংখ্যক দৈনিক হাজিরা চুক্তিতে লোক দিয়ে হলেও সেবা কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদেরও নিতে হয় অতিরিক্ত দায়িত্ব।

একটি আইসিইউ সুবিধার আধুনিক এম্বুলেন্স প্রয়োজন হলেও বিগত দশ বছরে হাসপাতালে যুক্ত হয়নি নতুন কোন এম্বুলেন্স। পুরোনোগুলোকেই জোড়া তালি দিয়ে চলছে এম্বুলেন্স সার্ভিস।

ভর্তি রোগীর তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অপ্রতুল হলেও বছর জুড়েই সেবা কার্যক্রম থেমে নেই। ২০১৬ সালে জরুরী ও রুটিন মিলিয়ে ছোট বড় ৪০ হাজার ১৩০ টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত প্রাপ্ত হিসেবমতে অস্ত্রোপচারের সংখ্যা ২৩ হাজার ৭০১ টি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, বহু সমালোচনার পরে চালু হয়েছে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ বিভাগ। নবনির্মিত ভবনে যাবার কথা থাকলেও সেটি আর হয়ে ওঠেনি। সেখানেও জনবল সংকটের মধ্যেই চলছে চিকিৎসা।  গেলো বছরের মার্চ মাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আতিয়া মহলে জঙ্গি হামলার পর এই হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা প্রশংসিত হয়েছে সবখানে। এই সেবা কার্যক্রমের জন্য ২০১৭ সালে জরুরী সেবায় সেরা হাসপাতালের মর্যাদা পায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা হাসপাতালে থাকলেও রোগীর সংখ্যার তুলনায় তা খুবই কম। ৫০০ আবাসিক রোগীর জন্য থাকা রোগ নির্ণয় যন্ত্রগুলোর সুবিধা দিতে হয় ২ হাজার রোগীকে, তাই অধিকাংশ পরীক্ষা করাতে গেলেই দেখা যায় লম্বা লাইন। আর পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট দিতে হয় বিলম্ব, আর এই বিলম্ব এড়াতে রোগীরাও ঝুঁকছেন প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর দিকে।

হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য নিযুক্ত হয়েছেন ১০০ জন আনসার সদস্য। তবে আবাসন সমস্যায় জর্জরিত এরাও। মহিলা সদস্যদের আবাসন প্রস্তুত না করতে পারায় আপাতত শুধু পুরুষ আনসার সদস্যরাই যোগ দিতে পেরেছেন।

এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে ডা. দেবপদ রায় বলেন, আমাদের অন্তত ৫০০ শয্যা অনুপাতে হলেও লোকবল বৃদ্ধি করতে হবে। তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষমতা নেই বললেই চলে, একটি জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গেলেও আমাদের গণপূর্ত বিভাগে চিঠি দিতে হয়। আমরা নিজেরা এটা করিয়ে নিতে পারি না শুধু আর্থিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতায়। গণপূর্ত বিভাগ আমাদের চিঠি পেয়ে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কাজ করতে আসা পর্যন্ত আরও দুইটা কাঁচ ভেঙ্গে যায়।

তবে আশাহত না হয়ে এই কর্মকর্তা কিছু আশার বাণীও শোনালেন। তিনি জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগ ভবনটি অচিরেই চারতলা থেকে দশ তলা হবে। নির্মাণ কাজ চলছে। খুব শীঘ্রই লোকবল পাওয়া যাবে বলেও আশাবাদী তিনি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আশার আলো কর্তৃক সরকারী সহায়তায় এইচআইভি রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হতো এতদিন। কিছুদিন থেকে সেই সেবাও স্থানান্তর করা হয়েছে এই হাসপাতালে। এছাড়া “ওয়াক ফর লাইফ” প্রকল্পে পায়ের পাতা বাঁকা রোগের চিকিৎসা দিয়ে হাঁটাতে শেখানো হচ্ছে আক্রান্ত শিশুদের। এ পর্যন্ত ৮২৪ জন শিশুকে এ প্রকল্পের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত