হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

১৭ জুন, ২০১৫ ১৮:৫৭

বাহুবলে মাটি ভরাট নিয়ে বিরোধ : র‌্যাব-ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গোলাগুলি, সড়ক অবরোধ

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভরগাঁও এলাকায় পেট্রোবাংলার একটি প্রকল্পে মাটি ভরাটের কাজ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও সিলেটের আনাস কোম্পানীর বিরোধকে কেন্দ্র করে র‌্যাব ও ঠিকাদারের লোকজনের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে র‌্যাব সদস্যদের পাশাপাশি অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

এই ঘটনায় উভয়পক্ষে গুলি বিনিময় হয়। র‌্যাব ঘটনাস্থল থেকে ঠিকাদার শাহেদ চৌধুরীকে নিয়ে গেলে তার অনুসারীরা হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক (সাবেক ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক) অবরোধ করে রাখে।

পুলিশ, র‌্যাব ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ভরগাঁও গ্রামে পেট্রোবাংলা দৈনিক ৫ হাজার ব্যারেল অকটেন শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম হাতে নেয়। মূল প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে মাটি ভরাটের সাব লিজ নেয় স্থানীয় ভাদেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। তারা ৩০ লাখ টাকা জামানত দিয়ে কাজ শুরু করে। স্থানীয়রা সাড়ে ৪ টাকা বর্গফুট হিসাবে মাটি ভরাট কাজ শুরু করে। তাদের কাজের বিল বাবদ প্রায় ৩০ লাখ টাকা বকেয়া থাকা অবস্থায় সিলেটের আনাস কোম্পানী সেখানে মাটি ভরাটের কাজ নেয়। তারা সাড়ে ৬ টাকা বর্গফুট হিসেবে কাজ নেয়। স্থানীয়রা এতে বাধা দিলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে ম্যানেজ করে তারা কাজ শুরুর চেষ্টা করে।

 সম্প্রতি তিনি মন্ত্রী পরিষদের সভা বাদ দিয়ে আকস্মিকভাবে চলে আসেন প্রকল্প এলাকায়। প্রকল্প এলাকায় এসে তিনি স্থানীয়দেরকে কাজে বাধা না দিতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেন। এতে স্থানীয় জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। গত ১৩ জুন জেলা আওয়ামীলীগের কার্যকরি কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই। তিনি হবিগঞ্জের বিষয়ে মৌলভীবাজার জেলার মন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রতিকার চান। জেলা আওয়ামীলীগ থেকে বিষয়টি কেন্দ্রে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বুধবার সকালে খবর আসে সিলেটের আনাস কোম্পানী ভরগাঁও এসে কাজ শুরু করতে পারে। এ খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে প্রকল্প এলাকায় অবস্থান নেয়। পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীমঙ্গলস্থ র‌্যাব-৯ এর একটি দল প্রকল্প এলাকায় এলে এলাকাবাসীর সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়।

এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনাও ঘটে। র‌্যাব ৭ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ৫ রাউন্ড শটগানের গুলি নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে র‌্যাব-৯ এর সিইও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনির হোসেনসহ র‌্যাবের ৪ সদস্য এবং স্থানীয় ৬ জন আহত হন।

পরে র‌্যাব সদস্যরা ঠিকাদার শাহেদ চৌধুরীকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। এতে উত্তেজিত জনতা সকাল ১০টা থেকে আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। বিকেল ৫টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল।

স্থানীয় লোকজন জানায়, র‌্যাব সিলেটের আনাস কোম্পানীর কাছ থেকে প্রভাবিত হয়ে শাহেদ চৌধুরীকে আটক করেছে। তাকে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।

বাহুবল থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, পেট্রোবাংলার ওই প্রকল্পের মাটি ভরাটের কাজ নিয়ে এখানে বিরোধ চলে আসছে। ঠিকাদার শাহেদ চৌধুরীকে ধরে নিয়ে যাওয়ায় ভরগাঁও ও আশেপাশের তিন গ্রামের লোকজন সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

র‌্যাব-৯ এর সিইও মনির হোসেন জানান, ভরগাঁও এলাকায় বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে র‌্যাব সেখানে যায়। সেখানে পুলিশের গাড়ি থাকলেও র‌্যাব যাওয়া মাত্র স্থানীয় লোকজন ইট-পাটকেল ও গুলিবর্ষণ শুরু করে। র‌্যাবও আত্মরক্ষা করতে গিয়ে পাল্টা গুলি ছুড়ে।

তিনি জানান, আটককৃত শাহেদ চৌধুরী একজন বাস চালক হয়ে কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তিনি সরকারী প্রকল্পের কাজে বাধা দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে চান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত