নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ০১:০২

স্বাগত ১৪২৫, শুভ নববর্ষ

বাংলা বর্ষপঞ্জির আরেকটি বছর ১৪২৪ বিদায় নিলো ১৪২৪। চৈত্র সংক্রান্তির সূর্যটা ডোবার পর যে নতুন দিনের আগমন ঘটবে সেটা ১৪২৫। বছর শুরুর প্রথম দিন বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ।

অগ্নিস্নানে ধরাকে শুচি করার আহ্বানে শুরু হচ্ছে আরো একটি বছর। বাংলা পঞ্জিকার ১৪২৪ বর্ষ বিদায় নিয়েছে গতকাল, আজ ১৪২৫ সনের প্রথম দিন। পহেলা বৈশাখ। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম'র পক্ষ থেকে সবাইকে ‘শুভ নববর্ষ!’

বিদায়ি ২০১৮ সনের সাথে বিদায় নিক তার সমস্ত গ্লানি, সমস্ত জরা, ভুল ও অভিমান। ১৪২৫ সবার জীবনে হয়ে ওঠুক বর্ণিল, শান্তিময়, বিভেত ও বৈষম্যহীন।
ইংরেজি তারিখের প্রভাবে বাংলায় দিনক্ষণ গোণার প্রচলন প্রায় নেই বললেই চলে। তবে বিয়ে-শাদীর দিনক্ষণ, বাণিজ্যের হালখাতা আর কৃষকের ঝড়-বৃষ্টি-শীত গণণায় এখনো বাংলার প্রভাব। এখনো মাঘে-মেঘে দেখা হলে কী পরিণতি হবে তা নিয়ে ভাবিত হন গ্রামের সাধারণ মানুষ। অঘ্রাণে বৃষ্টি হলে শংকা আর মাঘে হলে সুখের বার্তা তারা পায় খনার বচন মনে করে।

সর্বস্তরে বাংলার প্রচলনের দাবি চলে আসলেও আদতে তার প্রভাব সামান্যই। বাংলা তারিখ এখন ইংরেজি তারিখের নিচের উল্লেখমাত্র হয়ে পড়েছে। যতদিন যাচ্ছে আরো গুরুত্ব হারাচ্ছে বাংলায় দিনগণনা। তবে বছরের প্রথম দিনটি উদযাপনে কোনো কমতি নেই বাঙালির। গ্রাম থেকে শহরে রীতি থেকে পার্বনে কি উৎসবে সবাই মহাসমারোহে বরণ করে নেয় পহেলা বৈশাখকে। সেটুকুও কম নয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় উৎসবটির নাম পহেলা বৈশাখ।

সাম্প্রতিক সময়ে চলে আসা রীতি অনুযায়ি রবিঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ’ আহ্বানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষ বরণের উৎসব। গ্রামে হবে পিঠাপুলি-মেলা। আর শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, দিনব্যাপি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পান্তা-ইলিশে একদিনের বাঙালিয়ানা জাহির করতেও পিছপা হবে না শহুরে মানুষ।

এবারের বৈশাখ শুরু হচ্ছে ঝড় আর বন্যার বার্তা নিয়ে। হাওরের কৃষক বন্যার আশংকায় আগাম ফসল কেটে ঘরে তোলছে কাচাপাকা ধান।

নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও ও চ্যানেলগুলো এ উপলক্ষে প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ।

নির্বিঘ্নে বর্ষবরণ উৎসব পালনে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন স্থানে বিশেষত রাজধানীতে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে নানান অপ্রীতিকর অবস্থার প্রেক্ষিতে বিকেল পাঁচটার মধ্যেই উম্মুক্ত স্থানের অনুষ্ঠান ও জমায়েত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে। মুক্তমনা মানুষরা মনে করছেন এটি দেশিয় সংস্কৃতির প্রতি আঘাত। দৃর্বৃত্তদের পরাহত করতে না পেরে নিজেদের গুটিয়ে ফেলাকে সাংস্কৃতিক পরাজয় হিসেবেও দেখছেন অনেক বিশিষ্টজন।
তবু উৎসব আয়োজনের কমতি নেই। সিলেটেও জেলা প্রশাসন, নাট্য পরিষদ, আনন্দালোক, শ্রুতিসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন সকাল থেকেই শুরু করবে তাদের সাংস্কৃতি পরিবেশনা। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রদক্ষিণ করবে নগরীর পথ।

সব কিছু ছাপিয়ে বর্ষ বরণের আনন্দ সবার ঘরে ঘরে পৌছে যাক, কামনা এমনটাই।

জীবনের জরা-অন্ধকার ঝেড়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় থাকে নতুন বছর শুরুর দিনে। পুরনো বছরের সব হতাশা, গ্লানি আর জরাজীর্ণতা পেছনে ফেলে আগামীর পানে চোখ থাকবে সবার। নতুন নতুন স্বপ্ন বোনা হবে আসছে বছরকে ঘিরে। নতুন প্রত্যাশার ডানা মেলে ঝলমলিয়ে উঠবে নতুন আলো। সবার মনে ছড়িয়ে যাবে নববর্ষের রঙ। আনন্দ-উল্লাসে ১৪২৫ বঙ্গাব্দকে আবাহন করা হবে। নতুন বছরের প্রতিটি দিন হোক সুন্দর।

মোঘল সম্রাট আকবর সঠিক সময়ে নির্ভেজাল উপায়ে খাজনা আদায়ের জন্যে তার সভার বিশিষ্ট গুণীজন ফাতেউল্লাহ্ সিরাজীকে দিয়ে হিজরি পঞ্জিকা ও বাংলা পঞ্জিকার সমন্বয়ে নতুন একটি পঞ্জিকার প্রচলন করেন যা ‘ফসলি সন’ নামে ১৫৮৪ সালের মার্চ মাসে প্রবর্তিত হয়। প্রকৃতপক্ষে ১৫৫৬ সালে সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহণের দিনটি থেকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বছরের শুরু হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলা বছরের প্রথম দিনটি উৎসবমুখর উদযাপনের মধ্যদিয়ে পালিত হয়ে আসছে সম্রাট আকবরের আমল থেকেই। চৈত্র সংক্রান্তির সূর্য ডুবে যাওয়ার আগেই পুরনো অর্থবছরের সব হিসাব চুকিয়ে ফেলার নিয়ম চালু তখন থেকেই। আর বছরের প্রথম দিন মহাজন, ব্যবসায়ীরা ক্রেতা বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করে মিষ্টিমুখ করানোর মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবসায়িক লেনদেনের পুনঃসূচনা করতে খোলেন নতুন ‘হালখাতা’। এভাবেই সূত্রপাত ঘটে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের।

নতুন বছর সবার জন্য শুভ হোক, মঙ্গল বয়ে আনুক প্রতিটি মানুষের জীবনে। সেই প্রার্থনায় এখন অপেক্ষা নতুন বছরের প্রথম প্রভাতের। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা, শুভকামনা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত