মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ

১৪ এপ্রিল, ২০১৮ ১৪:৫৩

নবীগঞ্জে চিকিৎসক সংকটে সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ৪ মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রে,ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আছেন ১৫ দিনের ছুটিতে, আবাসিক মেডিকেল অফিসার ঢাকায় গেছেন ট্রেনিংয়ে। যারা দায়িত্বপালনের কথা তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা বাণিজ্যে। এদিকে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। এভাবেই চলছে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম।

চিকিৎসক সংকট ও  ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নবীগঞ্জ উপজেলাবাসী। অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধেও। উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ লোকের নিরাপদ চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারি সেবা কেন্দ্র নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম  ভেঙ্গে পড়েছে। চিকিৎসক না পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে আসা রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন।

বর্তমানে ১ জন চিকিৎসক দিয়েই চলছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া চললেও বাড়েনি জনবল।  হাসপাতালের প্রায় ৪৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর পদও শূন্য। এতে উপজেলার বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীসহ আশপাশের উপজেলা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লোকজনের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

১৩ ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে জেলার জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম উপজেলা নবীগঞ্জ। উপজেলার লোক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। মৌলভীবাজারের সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাও এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন।

লোকবল সংকটের কথা স্বীকার করলেও  চিকিৎসা বন্ধ নেই বলে জানান দায়ীত্বরত উপ-সহ ডাঃ ইদ্দিছ আলম, “আমরা২৪ ঘণ্টা রোগীদের শতভাগ চিকিৎসা দিচ্ছি। তবে চিকিৎসকের কিছু পদ খালি রয়েছে কর্তৃপক্ষ এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে  অবহিত করা হয়েছে।”

হাসপাতালে ময়লাযুক্ত বিছানাপত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের ব্যাপক অভিযোগ আছে রোগীদের। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালে চিকিৎসক পদ ৯টি থাকলেও এর মধ্যে ৬টি পদ শূন্য। যারা কর্মরত রয়েছেন, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চিকিৎসার জন্য ১ মাসের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে গেলেও ৪ মাসেও ফেরেননি।  তিনি বিদেশে অবস্থানের কারণে ওই পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডা. আব্দুস সামাদ। তবে ড. আব্দুস সামাদ দায়িত্ব পালনের জন্য প্রায় সময়ই বিভিন্ন সরকারি কর্মসূচিতে থাকেন। তবে গত ৩/৪ দিন আগ থেকে তিনিও ১৫ দিনের অর্জিত ছুটিতে। আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার হোসেন গত ২ দিন আগে ট্রেনিংয়ে গেছেন ঢাকায়। মেডিকেল অফিসার ২ জনের মধ্যে ডা. গোলাম শাহরিয়ার প্রেষণে (ডেপুটেশন) ঢাকা মেডিক্যালে কর্মরত। শুধু ডাঃ সাইফুর রহমান সাগরই একমাত্র আছেন কর্মরত।

কেবল চিকিৎসক না, রয়েছে নার্স সংকটও। ১৯ পদের বিপরিতে  হাসপাতালে নার্স আছেন ১২ জন।  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১ শত ৩৬ জন জনবলের জায়গায় আছেন ৯৩ জন। বাকি ৪৪টি পদি পড়ে আছে

শুক্রবার হাসপাতালে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের রিপাতপুর গ্রামের সুফি মিয়া, হরিধরপুর গ্রামের জমর উদ্দিন, দিরাই থানার পুলন ইউনিয়নের বনিশাল গ্রামের হেপি দাশ, আজিদা বেগমসহ বেশ কয়েকজন রোগী অভিযোগের সুরে বলেন, তারা কেউ ৩ দিন, কেউ ৪ দিন আগে ভর্তি হয়েছেন টিকই কিন্তু চিকিৎসকরা তাদেরকে ঠিক মতো দেখছেন না। খাবারও দেওয়া হচ্ছেনা সময় মতো। তারা বলেন, চিকিৎসকরা তাদের প্রাইভেট বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকায় চেম্বারেই বেশির ভাগ সময় কাটান।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত