কুলাউড়া প্রতিনিধি

২৩ এপ্রিল, ২০১৮ ১৯:১২

কুলাউড়ায় মেলার আয়োজন বন্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় মাসব্যাপী ‘কুটির শিল্প ও বস্ত্র মেলা’ আয়োজন বন্ধে এবং অনুমতি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছে কুলাউড়ার সর্বস্তরের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

সোমবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

এ সময় কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিত বাবলু, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাজমুল বারী সোহেলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে একই দাবিতে বুধবার (১৮ এপ্রিল) কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করে ব্যবসায়ীরা।

চলমান এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে এই মেলা আয়োজনের প্রস্তুতিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন কুলাউড়া ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজের পরীক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ খোদ শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষা চলমান থাকাবস্থায় কলেজ কর্তৃপক্ষ মেলার আয়োজনের জন্য কলেজ মাঠ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়াটা দু:খজনক বলে দাবি করছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের।

জানা যায়, কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ‘নন্দন সামাজিক সংগঠন, স্কুল চৌমুহনী’ নামে একটি ক্লাবের আয়োজনে এই মেলা বাস্তবায়নের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই মেলা আয়োজনের কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়ে কুলাউড়ার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা এই মেলা আয়োজনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের দাবি মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গেলো বছরের অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ বাজার বিমুখ ছিলেন। ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্ন ঋণে জর্জরিত ব্যবসায়ীরা এবছর লোকসান কাটানোর জন্য অপেক্ষা করছেন।

স্মারকলিপি ও ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, অকাল বন্যায় বিগত বছর বোরো, আমন এবং আউশ তিনটি ফসল নষ্ট হওয়ায় বাজার অনেকটা ক্রেতাশুন্য ছিলো। প্রায় ১ বছর যাবত ধারাবাহিকভাবে ব্যবসায়ীদের এই মন্দাভাব থাকে। এ সময় দোকান ভাড়া, কর্মচারী বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় নির্বাহ করতে অনেক ব্যবসায়ীই ক্ষতির সম্মুখীন এবং ঋণগ্রস্ত। এমতাবস্থায় এ বছর বোরো ধানের ফসল ভালো হওয়ায় এবং আসন্ন রমজান মাসকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা বিগত বছরের মন্দাভাব কাটিয়ে উঠার আশা দেখছেন।

ব্যবসায়ীদের ধারণা, এ বছর ব্যবসার অবস্থা পরিবর্তন হবে। এহেন পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ চিন্তা না করে কতিপয় কিছু ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মাসব্যাপী একটি মেলার আয়োজন করার চেষ্টা করছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

এ ব্যাপারে কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম বলেন, বিগত বছরের বৈরী আবহাওয়ার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দা হয়েছিলো। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ক্ষেতের ফসল সহ পরিবেশ ব্যবসায়ীদের অনুকূলে। তাই গত বছরের লোকসান কাটিয়ে এবছর মুনাফা হবে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। তাছাড়া সামনে রমজান মাস, পবিত্র ঈদ উল ফিতর। এমতাবস্থায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মেলাকে কোন অবস্থাতেই পজিটিভলি নিবে না। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্ন ঘটতে পারে। তাই সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রশাসন মেলা চালু করার অনুমোদন দিবে না বলে আমরা আশাবাদী।

স্মারকলিপি গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম বলেন, সকল বিষয় পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত