নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:৩৯

মেয়াদোত্তীর্ণ চুক্তিতে চলছে চা বাগান, বঞ্চিত শ্রমিকরা

চুক্তি নবায়ন ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে বিভিন্ন বাগানে কর্মবিরতি-বিক্ষোভ

প্রতি দুই বছর পর পর চা শ্রমিকদের সংগঠন চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে চুক্তি করে মালিকদের সংগঠন চা সংসদ। প্রতি চুক্তিতেই শ্রমিকদের মজুরী ১৫-১৬ টাকা বৃদ্ধি করা হয়। এই চুক্তিতেই আগামী দু’বছরের জন্য নির্ধারিত হয় শ্রমিকদের বেতন, মজুরি, বোনাসসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা।

২০১৫ সালে শ্রমিক সংগঠনের সাথে সর্বশেষ চুক্তি করে মালিক পক্ষ। এতে ১৬ টাকা বাড়িয়ে দৈনিক মজুরী ৮৫ টাকা নির্ধারিত হয়।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর কেটে যাচ্ছে আরও প্রায় দেড় বছর। তবে এখনও শ্রমিকদের সাথে চুক্তি নবায়ন করেনি মালিকপক্ষ। এতে করে বেতন ভাতা বাড়ানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দরিদ্র চা শ্রমিকরা।

দেড় বছরেও চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শ্রমিকরা। মজুরি বৃদ্ধি, চুক্তি নবায়ন ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকে বুধবার সকালে সিলেট ভ্যালির কয়েকটি বাগানে কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। এসময় প্রতিটি বাগানে আলাদা আলাদাভাবে সমাবেশও করা হয়।

এসব সমাবেশ থেকে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩০ টাকায় উত্তীর্ণ, শ্রমিকদের সাথে মালিকপক্ষের চুক্তি নবায়ন ও যথাসময়ে চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বকেয়া মজুরি প্রদানের দাবি জানান।

শুক্রবারের মধ্যে দাবি মেনে নেওয়া না হলে শনিবার থেকে দেশের সকল বাগানে টানা কর্মবিরিতিরও হুমকি দেন তারা। তবে চা বাগান মালিকরা বলছেন- শ্রমিকদের সাথে চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। সামনে শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন। তাই মাঠ গরম করার জন্য তারা অযথা আন্দোলনে নেমেছে।

চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, মালিকপক্ষ সবসময়ই শ্রমিকদের বেতন না বাড়ানোর জন্য চুক্তি নবায়নে গড়িমসি করে। ২০১৫ সালে তারা ৬ বছর পর চুক্তি করেছিলেন। এবারও সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে। চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় শ্রমিকরা ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩০ টাকা নির্ধারণ, চুক্তি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়া ২০১৭ সালের জানুয়ারি নতুন চুক্তি হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ১১৫ টাকা মজুরি নির্ধারণ করে বকেয়া মজুরী প্রদান এবং দ্রুত চুক্তি নবায়নের দাবি জানান।


অন্যথায় আগামী শনিবার থেকে দেশের সব বাগানে টানা কর্মবিরিতি পালনের হুমকি দেন তিনি।

তবে চা বাগান মালিকদের সংগঠন চা সংসদের সহ-সভাপতি শাহ আলম বলেন, শ্রমিকদের সাথে চুক্তির খসড়া প্রস্তুত আছে। তারা চাইলে যে কোনও সময়ই চুক্তি নবায়ন করতে আমরা প্রস্তুত। কিন্তু তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না করে আমাদের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্দোলনে নেমেছে। এছাড়া আগামী জুনে তাদের নির্বাচন। এজন্যও মাঠ গরম করতে চাইছে।

চুক্তির মেয়াদ দেড় বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও নবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নানা কারণেই এটা হয়নি। তাদেরও কিছু সমস্যা ছিলো।

সিলেট নগরীর পার্শ্ববর্তী মালনীছড়া চা বাগান। বুধবার সকাল থেকে শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে জড়ো হন বাগানের কারখানার সামনে। সকাল ৯টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত এখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা।

মালনীছড়া চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জিতেন সবর বলেন, চা শ্রমিকরা সবচেয়ে কম মজুরীতে কাজ করেন। তারপরও যথাসময়ে তাদের মজুরী বৃদ্ধিতে মালিকপক্ষ অযথাই কালক্ষেপণ করে। এই বাজারে ৮৫ টাকা মজুরীতে কারো পক্ষেই চলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

জিতেন বলেন, মালিকপক্ষ আমাদের চুক্তি নবায়নের আশ্বাস দিয়েছে। তবে গত দেড় বছরের বকেয়া পরিশোধ করতে চাচ্ছে না। এটি না মানলে আমাদের আন্দোলন চলবে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার শ্রীপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মনসুর আহমদ বলেন, এখন চা বাগানের ভরা মৌসুম। এই সময়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামলে উৎপাদন ব্যাহত হবে। গাছেই চা পাতা নষ্ট হয়ে পড়বে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত