সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

১১ মে, ২০১৮ ২০:০৮

সুনামগঞ্জে কারারক্ষীর রহস্যজনক মৃত্যু

সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারে এক কারারক্ষীর গলায় ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম ধৈর্য্য দাস (২৫)। ধর্য্যকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন নিহতের কাকা নৃপেন্দ্র দাস।

শুক্রবার (১১ মে) বিকাল সোয়া তিনটায় নিজ কোয়ার্টার থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয় বলে নিশ্চিত করেন সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদউল্লাহ।
 
জানা যায়, ধৈর্য্য দাস এক মাস একদিন আগে ভালোবেসে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পশ্চিম জাপা’র বাসিন্দা মর্তুজ আলীর মেয়ে সুনামগঞ্জ কারাগারের মহিলা কারারক্ষী সাজিদা ইয়াসমিনকে (১৯)। তারা দু’জন ঘটনার সময় একসঙ্গেই কোয়ার্টারে ছিলেন।

ঘটনার পর সাজিদা ইয়াসমিন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানায়, তারা দু’জন বিয়ে করার পর ধৈর্য্য’এর পরিবার এ বিয়ে মেনে নেয়নি। গত সপ্তাহে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে ধৈর্য্য বাড়ি গিয়েছিল। সেখানেও পরিবারের সঙ্গে তার ঝগড়াঝাটি হয়েছে। বাড়ি থেকে ফোন আসলে সে রাগারাগি করে কথা বলতো।

বৃহস্পতিবার রাতে ডিউটি শেষে রাত ৩ টায় কোয়ার্টারে ফিরে ধৈর্য্য। ভোর ৬ টায় ডিউটিতে যায় সাজিদা ইয়াসমিন। শুক্রবার দুপুর ১২ টায় সাজিদা ডিউটি থেকে ফিরলে ধৈর্য্য ঘুম থেকে ওঠে। বেলা আড়াইটায় সাজিদাকে নাস্তা তৈরির জন্য বলে ধৈর্য্য। সাজিদা নাস্তা তৈরি করার সময় ধৈর্য্য তার কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে সাজিদা অনেক ডাকাডাকি করলেও ধৈর্য্য দরজা না খোলায় প্রতিবেশী দুজন কারারক্ষীকে ডেকে আনে সাজিদা। শেষে দরজা ভেঙে তারা ভেতরে প্রবেশ করলে ফ্যানের সঙ্গে ধৈর্য্যরে লাশ দেখেন পান বলে জানান ইয়াসমিন।

সাজিদা জানান, ধৈর্য্য অফিসিয়ালি নাম পরিবর্তনের আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

ধৈর্য্যরে কাকা নৃপেন্দ্র দাস অভিযোগ জানিয়ে বলেন,‘ ধৈর্য্যকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ধৈর্য্যকে ব্লেকমেইল করে সাজিদার সঙ্গে কাগজে-পত্রে বিয়ে দেখানো হয়েছে। তার নাম পরিবর্তনের জন্য গত কয়েক দিন ধরেই কারাগারের সুপার একে আজাদ ও জেলার মাসুদুর রহমান চাপ দিচ্ছিলেন। বিষয়টি তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ্ ও দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তাকেও জানিয়েছেন। তারাও কারাগারের সুপারকে বিষয়টি দেখার জন্য ফোন দিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে ধৈর্য্য ফোন দিয়ে জানিয়েছে, নাম পরিবর্তন না করলে আগামী মাসে বেতন হবে না তার। তারা তাকে নাম পরিবর্তনের জন্য চাপ দিচ্ছে। এর একঘণ্টা পরে কারাগার থেকে তাদেরকে জানানো হয়েছে ধৈর্য্য ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমরা মনে করছি এ ঘটনা সুপরিকল্পিত’ বলেও দাবী করেন নৃপেন্দ্র।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ কারাগারের তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) একে আজাদ বলেন,‘ ধৈর্য্য দাসও সাজিদা বেগম ভালোবেসে আমজাদ হোসেন নাম ধারণ করে বিয়ে করেছে। আমরা তার নাম পরিবর্তনের জন্য কোন চাপ প্রয়োগ করিনি। সংসদ সদস্য মহোদয়গণ এ ঘটনা জেনে তাদেরকে দেখে রাখার জন্য বলেছিলেন।’

জেলার মো. মাসুদুর রহমানও একই মন্তব্য করেন।

ধৈর্যের লাশ উদ্ধারকারী সুনামগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জালাল আহমদ বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। শনিবার (১২ মে) সকালে লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়না তদন্তের আগে কিছুই বলা যাবে না।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত