দেবকল্যাণ ধর বাপন

২৪ মে, ২০১৮ ০১:১৯

সিলেটে টিসিবির পণ্যে পরিবেশকদের অনাগ্রহ, ভোক্তাদের অনীহা

রমজানে নিম্নবিত্তদের কাছে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের জন্য সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কয়েকটি পণ্য বিক্রি শুরু করে। তবে এবার সিলেটে টিসিবির পণ্য বিক্রিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না পরিবেশকরা। খোলাবাজার থেকে এ সকল পণ্য কিনতে ভোক্তারাও অনাগ্রহী।

পরিবেশকদের দাবি, টিসিবির সরবরাহ করা বেশিরভাগ পণ্যের দামই খোলাবাজারে বিক্রি করা পণ্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় ভোক্তারা পুরোপুরি মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন টিসিবির পণ্য থেকে। এর ফলে টিসিবির পণ্য বিক্রি করে লাভবান না হওয়ায় বড় পরিসরে পণ্য বিক্রিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন পরিবেশকরা।

চলতি রমজান মাসে, সিলেটে ৯৫জন পরিবেশকের মাধ্যমে চিনি, সয়াবিন তেল, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল টিসিবি। টিসিবির মসুর ডালের দাম বাজার দামের তুলনায় কিছুটা কম থাকলেও চিনি, সয়াবিন তেল, ছোলা ও খেজুরের দাম খোলা বাজারের চেয়ে বেশি বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।

ভোক্তাদের অভিযোগ স্বীকার করে সিলেটের আখালিয়া নতুন বাজার এলাকার টিসিবি ডিলার মেসার্স রাতুল ট্রেডার্স এর সত্ত্বাধিকারী রতিন্দ্র দাস জানিয়েছেন, টিসিবির পণ্যের মূল্য ও বাজারমূল্যের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য না থাকায় সাধারণ ভোক্তারা টিসিবির পণ্য কিনতে ভোক্তাদের আগ্রহ কম। তাছাড়া একেক ধরণের ভোক্তার পছন্দ একেক রকম। যার কারণে পণ্যের বিক্রিও কম হচ্ছে।

চলতি রমজানে টিসিবির পণ্যের নির্ধারিত মূল্য- চিনি প্রতি কেজি ৫৫ টাকা, ছোলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, তেল প্রতি লিটার ৮৫ টাকা ও খেজুর প্রতি কেজি ১০০ টাকা।

মদিনা মার্কেটে মেসার্স ইভান ষ্টোরে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা রহমান মিয়া ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, বাজারের পণ্য ও টিসিবি পণ্যের একই দাম। তাহলে টিসিবি’র পণ্য কিনে কি লাভ।

একই ভাবে টিসিবি পণ্য কিনতে আসা নগরীর দরগাহ গেইটের রাজার গলিতে মেসার্স এনি ষ্টোরে স্থানীয় বকর উদ্দিন পণ্য কিনতে এসে বলেন, গত বছর ছোলা-চিনি কিনতে হয়েছে লাইনে দাঁড়িয়ে। আর এ বছর ক্রেতারা পণ্য কিনতে চাচ্ছেন না।

তিনি বলেন, টিসিবি’র কর্মচারীরা ভোক্তাদের অনুরোধ করে পণ্য বিক্রি করছে। একই এলাকার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারের তুলনায় টিসিবি’র পণ্যের দাম বেশি। এ কারণে তিনিও টিসিবি পণ্য কেনা থাকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।

নগরীর কালীঘাট এলাকার পরিবেশক মেসার্স তুহিন কুমার দাসের স্বত্বাধিকারী শেখর দাস বলেন, দোকানের দামের সঙ্গে টিসিবির পণ্যের দামের ব্যবধান বেশি না থাকায় গ্রাহকদের এসব পণ্য ক্রয়ে আগ্রহ কম। তিনি বলেন, দোকানে ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা দরে সাদা চিনি পাওয়া যায়। তাই গ্রাহকরা লাল চিনি ক্রয় করতে আগ্রহ দেখান না।

পরিবেশক শেখর দাস বলেন, টিসিবি থেকে উত্তোলন করা চিনি ছাড়া অন্য পণ্যগুলো সব বিক্রি হলে লাভ হয় দুই হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু ট্রাক ভাড়া ও শ্রমিকদের মজুরি বাবদ খরচ হয় ২ হাজার ১৫০ টাকা। তার মধ্যে চিনি যদি অবিক্রীত থাকে তাহলে পরিবেশকরা লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

শেখর দাস আরো বলেন, সিলেটে ৯৫জন পরিবেশকদের মধ্যে বেশিরভাগই এখন ব্যবসায় ক্ষতির আশংকা করে নিজেকে এ ব্যবসা থেকে গুটিয়ে রাখছেন।

এছাড়া টিসিবির সরবরাহ করা ছোলারে দামও বেশি বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন পরিবেশক। তাদের দাবি, ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে সাড়ে ৫২ টাকা করে ছোলা ক্রয় করতে পারে, যা ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় খুচরা বাজারে বিক্রি করা যায়। তাছাড়া পাইকারি বাজার থেকে বাকিতে পণ্য ক্রয় করে বিক্রির পরে টাকা পরিশোধ করার সুযোগ থাকায় সেদিকেই পরিবেশকদের আগ্রহ বেশি বলে জানান তিনি।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে টিসিবি’র সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রধান মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন,‘গত ৬ মে থেকে সিলেট শহরে ৫ টি, মৌলভীবাজারে ২ টি, হবিগঞ্জে ১ টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ২ টি ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। আমাদের ছোলা ও তেলের দামটাও কম এবং মানেও ভালো বলে বাজেরে এর চাহিদাটা বেশি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত