অরণ্য রণি

২৪ মে, ২০১৮ ১৬:৩৭

ইফতারে চাহিদার শীর্ষে খিচুড়ি আর আখনি

নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায় একাধিক ক্রেতা আখনি কিনছেন। আরো অনেকে পাশে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন আখনি কিনতে। তাঁরা জানান, খিচুড়ি বা আখনি ছাড়া আমাদের ইফতার অসম্পূর্ণই থেকে যায়। বিশেষ করে আখনি ছাড়া ইফতার পানসে পানসে লাগে। এটা বলা যায় আমাদের সিলেট অঞ্চলের ইফতারির রেওয়াজ। বাসায় সবসময়ই খিচুড়ি বা আখনি করা হয়। তবে রেস্টুরেন্টে তৈরি আখনির স্বাদ একটু আলাদা। তাই আমরা বাইরে থেকেও আখনি কিনে নিয়ে যাই।

সিলেটের ইফতারিতে খিচুড়ি আর আখনি যেনো অপরিহার্য আইটেম। এ দুইটি ছাড়া ইফতার করা যেন অপূর্ণই থেকে যায় সিলেটিদের কাছে। সেই সাথে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিত্যনতুন পদের খাবার সমৃদ্ধ করেছে ইফতারের তালিকা।

রমজানের শুরুতে ঘরে তৈরি খাবারের দিকে মানুষের ঝোঁক থাকলেও বাইরে তৈরি বাহারি খাবারেও ঝোঁক বাড়ছে ক্রেতাদের। আর যারা ব্যাচেলর বা কর্মসূত্রে নগরীতে থাকেন তাদের ভরসা ঐ রেস্তোরাগুলোই। তাছাড়া অনেকে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে বাহারি ইফতারিসামগ্রী পাঠানোর প্রচলন রয়েছে এ অঞ্চলের সংস্কৃতিতে।

মহানগরীর বন্দর, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, টিলাগড়, মদিনা মার্কেটের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ঘুরে অনেক রকম দেশি-বিদেশি নামের হরেক রকমের বাহারি ইফতারি আইটেম পাওয়া যায়। এর মধ্যে বিফ আখনি ২৪০-২৬০ টাকা কেজি, চিকেন আখনি ২০০-২৩০ টাকা, বেগুনি ৬ টাকা, পিয়াজু ৩ টাকা, লাল শাক বড়া ৫-১০ টাকা, বাখরখানি (ভেজিটেবল) ২০ টাকা পিস, বাখরখানি (মিষ্টি) ১০ টাকা পিস, ডিম চপ ১৫ টাকা, কালিজিরা জিলাপি ১৮০ টাকা, বোম্বে জিলাপি ১২০-১৪০ টাকা, রেশমি জিলাপি ১৮০-২২০ টাকা,  চিকেন সাসলিক ৮০ টাকা, চিকেন জালি কাবাব ২০ টাকা পিস, বিফ শামি কাবাব ২০ টাকা পিস, চিকেন টিক্কা ১৫ টাকা পিস, চিকেন ললিপপ ৩০-৩৫ টাকা পিস, চিকেন ফ্রাই চপ ১২০ টাকা, চিকেন মুনিয়া ৩০ টাকা, চিকেন কাটলেট ৩০ টাকা, চিকেন ড্রামস্টিক ৬০-৭০ টাকা, মাটন লেগ পিস ২৯০-৩১০ টাকা, চিকেন বোম্বে রোস্ট ৩৫০ টাকা, চিকেন লেগ ১৬০-১৮০ টাকা, ডিম চপ ১৫ টাকা, ছোলা ১৮০ টাকা কেজি, পুরান ঢাকার ভুগনি ১৬০ টাকা কেজি, বোম্বাই চমচা ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের পর এটা আমাদের প্রথম রমজান। তাই মোটামোটি ব্যবসা চলছে। সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এমনটি বলছিলেন সাম্পান রেস্টুরেন্টের পরিচালক ইউসুফ কবীর তুহিন।

তিনি বলেন, আমাদের ধারণক্ষমতা বেশি থাকায় প্রায় প্রতিদিনই বুকিং যাচ্ছে আমাদের। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন সংস্থা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইফতার পার্টি করেন। এমনকি সেহরির সময়ও অনেকে বুকিং দিয়ে রাখেন। আর রমজানের প্রথম দিকে সবাই-ই চান বাসায় পরিবারের সাথে ইফতার করতে। পরে বিভিন্ন জায়গায় তাঁরা বাইরে ইফতার করতে আসেন বা ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন।

তিনি আরো বলেন, সিলেটে আখনির প্রচলন সর্বাধিক, যা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। অন্যান্য এলাকার মানুষেরা মুড়ি-ছোলা, বিভিন্ন ফল ইত্যাদি আইটেম থাকে ইফতারের মূল আকর্ষণ। আর আমাদের সিলেটিদের আখনি হল মূল আকর্ষণ। তাছাড়া পাতলা খিচুড়ি ও ভুনা খিচুরি অনেকের পছন্দের। তাছাড়া নন এসিতে আমাদের আছে ১১টি পদসমৃদ্ধ ইফতার সেট মেনু যার মূল্য ১৬০ টাকা আর এসিতে ১২টি পদসমৃদ্ধ ইফতার সেট মেনু যার মূল্য ২১০ টাকা।

পালকি রেস্টুরেন্টের ইফতারিতে বিশেষ আকর্ষণ হল পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী 'বড় বাপের পোলায় খায়'। বিশেষ এই আইটেম প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। আলোচিত এই আইটেম প্রতিদিনের ৩-৪টি বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা। অনেকে আবার অর্ডার করেও থাকেন এই বিশেষ খাবারটি।

এছাড়া পালকিতে বোম্বাই চিকেন পরোটা ৫০ টাকা, ফিরনি ২০০-২২০ টাকা কেজি, দই বুন্দিয়া ২০০ টাকা, নাগেট কাবাব ২০ টাকা, নার্গিস কাবাব ২০ টাকা, চিকেন বল ২৫-৫০ টাকা,  লাবাং ১৮০ টাকা লিটার, বিফ হালিম ২২০-২৪০ টাকা, মাটন হালিম ২১০-২৩০ টাকা, মাটন আখনি ২৩০-২৫০ টাকা কেজি, পাতলা খিচুড়ি ৮০ টাকা কেজি এই পদগুলো বেশি চলে।

পালকি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়জুল বাড়ি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, অন্যান্যবারের তুলনায় এবার প্রথম থেকেই ইফতারি বিক্রি ভালোই চলছে। তবে সামগ্রিকভাবে ব্যবসার অবস্থা এখন আগের মত আর ভালো না। গত ৪ বছর ধরে আমরা আমাদের ইফতারি আইটেম একই দামে বিক্রি করছি। আমরা লাভ না করেও অনেক আইটেম বিক্রি করছি ক্রেতাদের সন্তুষ্টির জন্য। আর পশ্চিম জিন্দাবাজারে অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকায় ঐদিকের রেস্টুরেন্টগুলোতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। আর পূর্ব জিন্দাবাজারে নতুন আরেকটি রেস্টুরেন্ট হওয়ায় প্রতিযোগিতা আরো বেড়ে গেছে। তবে আমরা সব সময়ই ক্রেতাদের ভেজালমুক্ত খাবার পরিবেশন করতে সচেষ্ট।

তিনি আরো বলেন, মঙ্গলবার (২২ মে) আমাদের রেস্টুরেন্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেছে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি, পরিবেশন ও বিক্রির কারণে তাঁরা আমাদেরকে কোন জরিমানা করেন নি। ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ও সুপারশপে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে বলে আমরা শুনেছি। দুপুর ৩টার থেকে বিক্রি শুরু হলেও আছরের নামাজের পর থেকে ইফতার পর্যন্ত ভিড় বেশি থাকে।

এছাড়া আরো কিছু ভিন্নধর্মী আইটেমের খোঁজ পাওয়া যায় সিলেটের বাজার ঘুরে। যেমন- ফিস কাবাব ২০ টাকা, বোরহানি ২০০ টাকা লিটার, আলু চপ ৬ টাকা, শাক বড়া ৬ টাকা, কদুর ফুল ৫ টাকা, মরিচা ২ টাকা, ভুনা খিচুড়ি ১২০ টাকা কেজি, পাকিস্তানি কাবাব ১০০ টাকা, ইরানি বিফ কাবাব ৩০ টাকা, ইরানি টুনা কাবাব ৫০ টাকা, ইরানি চিকেন রেশমি কাবাব ৯০ টাকা, ইরানি বিফ রেশমি কাবাব ১০০ টাকা, ইরানি চিকেন চাফলি কাবাব ৪০ টাকা, ইরানি বিফ চাফলি কাবাব ৫০ টাকা, ইরানি চিকেন বোনলেস কাবাব ৯০ টাকা, চিকেন মাশরুম কাবাব ৬০ টাকা, বিফ আলু চপ কাবাব ১৫ টাকা, কাটলেট ৯০ টাকা, চিকেন উইংস ৪০ তাকা, চিকে ওনথন ১৫ টাকা, চিকেন মনসুরি ১০ টাকা, চিকেন স্পাইসি পাকুরা ১০ টাকা, ভেজিটেবল পাকুরা ৮ টাকা, চিকেন নাগেট ১২০ টাকা, চিকেন স্টিক ৬০ টাকা, চিকেন স্টিপস ৪০ টাকা, আস্ত চিংড়ি ফ্রাই ৬০ টাকা।

ভোজন বাড়ি রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ঝুনু চৌধুরী সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এখন পর্যন্ত ইফতারি বিক্রি ভালোই চলছে। তবে অন্যান্যবারের তুলনায় বাধ্য হয়েই দাম কিছুটা বেশি রাখতে হচ্ছে। তবে তা ক্রেতা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার ভিতরেই আছে। কারণ কাঁচামাল ও জিনিষপত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়া বেশি দামে এগুলো কিনতে হচ্ছে। রোজার প্রথম দিকে মানুষজন ইফতারি কম কিনলেও ধীরে ধীরে কেনা ইফতারের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। আশা করি রোজার শেষ দিকে আরো ভালো ব্যবসা করতে পারবো।

তিনি আরো বলেন, আমরা সেহরিতেও খাবার বিক্রি করি। ইফতারের জন্য আমাদের আছে ১১টি আইটেম সমৃদ্ধ সেট মেনু ও ১৩টি আইটেম সমৃদ্ধ স্পেশাল মেনু যার মূল্য যথাক্রমে ১৬০ ও ২২০ টাকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত