মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৬ জুন, ২০১৮ ১৫:০৩

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, কমলগঞ্জে নিহত ৩

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক এ বন্যায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ তিনজনের লাশ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে জেলায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।

শুক্রবার (১৫ জুন) থেকেই দুর্গত এলাকায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিট। শুক্রবার মধ্যরাতে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ টিম বন্যাক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষণ করেন। শনিবার দুপুর থেকে ৬০ সদস্যের আরেকটি দল শহর রক্ষা বাধ এবং বন্যার্তদের জন্য কাজ শুরু করবে।

রাজগনর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার জানান, উপজেলায় প্লাবিত এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনীর ৩৫ সদস্যের একটি টিম। রাজনগর কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী পার্থ জানান, শনিবার সকাল ৯টায় মনু নদী মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাটের কাছে বিপদ সীমার ১৫৯ সেন্টিমিটারে এবং মনু কুলাউড়ায় রেলওয়ে ব্রিজে ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে কুশিয়ারা নদী শেরপুরে কাছে ৪০ সেন্টিমিটার ও কমলগঞ্জে ধলাই নদী বিপদ সীমার ৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বিশ হাজার বালুভর্তি বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে হবিগঞ্জ  সুনামগঞ্জ থাকে আরো বস্তা আনা হবে।

এদিকে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শহরবাসীকে সতর্ক থাকতে জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করা হয়েছে বলে পাউবির এ কর্মকর্তা জানান।

এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের সাথে জরুরি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল। এতে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-২ আসনের সাংসদ মো. আব্দুল মতিন, সেনাবাহিনী প্রতিনিধি দলের সিইও কর্নেল শাহাব, কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাদিউর রহিম জাদিদ, সিনিয়র মৎস্য অফিসার সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।

কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য যে ত্রাণ সামগ্রী আছে তা সেনাবাহিনী চারটি ইউনিয়নে পৌঁছে দেবে। সেনাবাহিনীর এই প্রতিনিধি দলকে সহায়তা করবেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা।’

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, তিনটি ইউনিটে কুলাউড়ার বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সহায়তা করতে কাজ শুরু করবে সেনাবাহিনী। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় বন্যায় আক্রান্ত প্রতিটি এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, সদর, কমলগঞ্জ, রাজনগর, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার অন্তত তিন লাখ মানুষ এই মুহূর্তে পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা আক্রান্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে নগদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে; পাশাপাশি ১৪৩ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, মনু নদের পানি দ্রুত বাড়ছে। ভেঙে গেছে গত ১১ বছরের রেকর্ড। শুক্রবার রাত ৯টায় চাঁদিনীঘাট পয়েন্টে মনু নদের পানি সকালের ১৩৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমা থেকে বেড়ে ১৪৬ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আর ১ সেন্টিমিটার পানি বাড়লে শহর রক্ষা বাঁধ উপচে পানি ঢুকবে মৌলভীবাজার শহরে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত