মিনহাজ উদ্দিন, গোয়াইনঘাট

১৯ জুন, ২০১৮ ১৫:৪৯

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গোয়াইনঘাটে পর্যটকদের ঢল

টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল। সাথে আছে ভাঙ্গাচোরা সড়কের উপর দিয়ে যান চলাচলের তিক্ত অভিজ্ঞতা। খানাখন্দ ভঙ্গুর সড়কের কষ্টার্জিত যোগাযোগ উপেক্ষা করেও যেন ঢল নেমেছে পর্যটক দর্শনার্থীদের। এ চিত্র সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সবকটি পর্যটন স্পটের।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এসব বৈরি আবহাওয়া ও দুর্ভোগ উপেক্ষা করে পর্যটকদের ঢল নেমেছে পর্যটন স্পট জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল ও লালাখালে। ঈদের দিন থেকে শুরু করে ভ্রমণপিপাসুরা ভিড় করছেন এ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। তবে গত দুদিনের পর্যটক উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বেহাল অবস্থা, প্রতিকুল আবহাওয়াও তাদের দমাতে পারেনি। থেমে থাকেনি পর্যটকদের বাঁধভাঙা উল্লাস। প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করতে কেউ সপরিবারে কেউবা আবার বন্ধুবান্ধব সাথে নিয়ে ছুটে এসেছেন প্রকৃতিকে উপভোগ করতে। পাহাড় টিলা, স্বচ্ছ জলরাশি, গহিন বনের সাথে মিতালী করে ঘুরে বেড়ানোর অভিপ্রায় নিয়ে আসা মুগ্ধতায় ফিরেছেন পর্যটকরা। পাহাড়, টিলা, নদী, প্রকৃতির সবুজ অরণ্য ঘেরা এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ফুটে ওঠে তাদের সরব পদচারনা। জাফলং, বিছনাকান্দির পাশাপাশি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট, জৈন্তাপুরের লালাখাল, জাফলং ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা, পান্তুমাই মায়াবতী ঝর্ণাধারায়ও পর্যটক দর্শনার্থীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে।

দেশের অপরাপর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ন্যায় প্রকৃতির আপন সাজে সেজেছে এখানকার পর্যটন স্পটগুলো। এখানকার রুপ-লাবন্যময় সারিবদ্ধ পাহাড়ের সবুজ মিশেল প্রকৃতি ভ্রমনপিয়াসু আর সৌন্দর্য্য পিপাসুদের আকৃষ্ট করে সুদীর্ঘকাল খেকে। তাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঢল নেমেছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের। এবারও জাফলংয়েই সবচেয়ে বেশি পর্যটক-দর্শনার্থীর উপস্থিতি। দেখলে মনে হয় প্রকৃতিকন্যা জাফলং যেন আগের মতো করেই তার আপন মাধুর্যতায় ঘিরে ধরেছে তার দর্শনে আসা আগন্তুকদের। জাফলংয়ের খুব সহজেই আকৃষ্ট করে ভ্রমণ পর্যটকদের। এবারও দেশের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের উপস্থিতিও জাফলংয়ে লক্ষণীয়।
পর্যটকদের মতে হঠাৎ শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টি আর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত আর বেহাল অবস্থার কারণে পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দে যেন খানিকটা ভাটা পড়েছে।

সোমবার দুপুর ২টায় জাফলং জিরো পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, গুড়িগুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে আর বেহাল সড়কের কাঁদা জল মাড়িয়ে আসা হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। জাফলং জিরো পয়েন্টে দাড়িয়ে কেউ কেউ ওপারে ভারতের মেঘালয়ের ঝুলন্ত ব্রিজ, সারিবদ্ধ দিগন্তজুড়া পাহাড়টিলার পানে দুচোখ মেলে ধরে প্রকৃতির প্রেম উপভোগ করছেন। কেউ কেউ আবার পিয়াইনের বুক চিরে আসা স্বচ্ছ ঠাণ্ডা জলরাশির মাঝে সাতার কাটছেন। জাফলং ভ্রমণ সেলফি আর ক্যামেরায় নিজেকে আবদ্ধ করে তা স্মৃতিবন্দী করে রাখছেন অনেকেই।

একটু পশ্চিম পাশেই অবস্থিত জাফলংয়ের ভ্রমণপিয়াসীদের আরেক আকর্ষণ ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা। সেখানেও পর্যটক দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। ভারতের পাহাড় গড়িয়ে আসা ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে গাঁ ভিজিয়ে উল্লাস করছেন আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।
 
এ সময় কথা হয় পর্যটক ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার আলী হোসেন ও রাবেয়া সুলতানার সাথে। এ দম্পতি জানান, জাফলং জিরো পয়েন্টে, ঝুলন্ত ব্রিজ, ফাটছড়া মায়াবী ঝর্ণা, পিয়াইন নদের বুকে সাতার কেটে আমরা মুগ্ধ। এখানকার প্রকৃতি আমাদের আসার পথের সব কষ্ট-দুর্ভোগ ভুলিয়ে দিয়েছে। তারা দ্রুত সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কারে সরকারের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

ঢাকার বংশালের আলিফ আর জাহানারা নামের এক নবদম্পতি তাদের হানিমুন করতে এসেছেন জাফলংয়ে। নববিবাহিত এ জুটি বলেন, এখানে আসতে পেরে সত্যিই আমরা খুব খুশি। প্রকৃতি আর সবুজের একখণ্ড মিতালী আমাদের পথচলার আগামীকে সুন্দর কারণে স্মৃতিময় হয়ে থাকবে। তারাও সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক সংস্কারের সরকারের শীর্ষ মহলের প্রতি জোর দাবি জানান।

জাফলংয়ের মতো দর্শক সমাগম বেড়েছে বিছনাকান্দিতেও। সেখানেও যেন ঢল নেমেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। মঙ্গলবার বিছনাকান্দি জিরো পয়েন্টে কথা হয় একদল তরুণের সাথে।

পাবনার ঈশ্বরদী থেকে আসা এ তরুণরা বিছনাকান্দির সৌন্দর্যের প্রশংসা আর প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, আসলে এখানে কেউ না আসলে এখানকার সৌন্দর্যকে বুঝবে না। এতো সুন্দর মনোরম পরিবেশ আমাদের খুব বেশি আকৃষ্ট করেছে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্যিই নজরকাড়া।

মঙ্গলবার বিকেলে নিরাপত্তা জোরদার আর পর্যটকদের সাথে সময় কাটাতে আসতে দেখা যায় গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পালকে। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ গোয়াইনঘাটের সবকটি পর্যটনস্পটেই ঈদসহ বিভিন্ন সামাজিক দিবসে পর্যটক দর্শনার্থীদের উপস্থিতি থাকে লক্ষণীয়। তাদের পদযাত্রায় মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার সবকটি পিকনিক স্পট। তাদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতি বছরই উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। এবারও গোয়াইনঘাটের পর্যটনগুলোতে বেড়াতে আসা পর্যটক, দর্শনার্থীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ ও নিরাপদে ফিরতে পারেন সে লক্ষেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। অপ্রীতিকর যে কোন ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও স্থানীয় রোভার স্কাউটরা নিয়োজিত রয়েছেন। একাধিক স্পটে আমাদের উপজেলা প্রশাসনের তরফে পর্যটক তথ্যকেন্দ্রও স্থাপিত আছে।

গোয়াইনঘাট থানার নবাগত অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল জলিল জানান, পর্যটকদের ভ্রমণ ও নিরাপদ প্রস্থানে থানা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি, মাদকরোধে পোশাক ও সাদা পোশাকে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে আছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত