মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

২১ জুন, ২০১৮ ১৪:২২

মৌলভীবাজারে ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ

ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে মৌলভীবাজারের  বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। সরকারের তরফে পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের অভিযোগ তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না।

সরকারের পাশাপাশি শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং দেশী এবং প্রবাসীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলছে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ। তবে কেনো এই অভিযোগ?

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ আসলেও তা সুষম বণ্টন ব্যবস্থার কারণে পৌঁছচ্ছে না বন্যা কবলিত মৌলভীবাজারের অসংখ্য পরিবারের কাছে।

এতে করে যত দ্রুত নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি, তার চেয়েও দ্রুত বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরেও ত্রাণ বণ্টনে অব্যবস্থাপনা কারণে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি আবার শহর ও শহরতলীর পাশে এবং যে এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা ভাল সেসব এলাকায় কেউ কেউ ৪/৫ বার করেও পাচ্ছেন।

প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া অধিকাংশ এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি। তবে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে ত্রাণ পৌঁছে গেছে সব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের হাতে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে এসব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি।

জেলার শরিফপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মুহিত জানান, গত ৭ দিনে ত্রাণ তো দূরের কথা, কোথাও কোথাও দেখা মেলেনি জনপ্রতিনিধিদেরও।

যোগাযোগ ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে পানিবন্দী মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর অনীহার প্রমাণ পাওয়া গেছে অনেক স্থানে। অথচ বেসরকারি উদ্যোগে অনেক জায়গায় পৌঁছেছে সহায়তা।

একই রকম অভিযোগ করেন কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের আব্দুল হান্নান চিনু মিয়া। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ধীরগতির কারণে এখন পর্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার লোকদের কাছে ত্রাণ সামগ্রী এখনও পৌঁছেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পতনউষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ বাচ্চু জানান, আমি আজ ৩ টি ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করেছি বাকীগুলতেও করে ফেলব। যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় এখনো পৌছাতে পারিনি।

একই অবস্থা বিরাজ করছে জেলার আদমপুর, কামারচাক, শরিফপুরসহ আরো কয়েকটি ইউনিয়নে।

কুলাউড়ার শরিফপুর ইউনিয়নের আব্দুল বাতেন জানান, আমার এবং আশে পাশের ১০/১২ টি বাড়ীতে গত ৭ দিন ধরে কেউ কিছু পায়নি।

বন্ধুদের নিয়ে টিম তৈরি করে ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণ করছেন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল আহমদ। তিনি সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে জানান, সারাদিন কামারচাক ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করেছি সেখান থেকে খবর পেয়েছি ৬ নং ওয়ার্ড এর ভিতরের অনেকাংশের লোক কিছুই পায়নি, যারা রাস্তার পাশে তারাই বার বার পাচ্ছে। কিন্তু ভিতরের এলাকায় যারা আছে তারা এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ ত্রাণ বঞ্চিত রয়েছেন।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, ত্রাণের কোন অভাব নেই। সরকার বলেছে যত লাগবে তত দেবে। ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠ রাখার জন্য প্রতিটি উপজেলায় একজন এডিসি তদারকি করছেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের আবার তারা সে রিপোর্ট দিচ্ছেন আমাকে।

তিনি আরো জানান, বন্যা দুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা এবং ১১৪৩ মেট্রিকটন চাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৬৭ টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১ হাজার বান্ডিল টিন এবং ৩০ লাখ টাকা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত