সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ জুলাই, ২০১৮ ২২:০৪

ডিসেম্বরের মধ্যে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর: মুহিত

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমপি বলেছেন, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয়েছে এবং আগামী অধিবেশনে এটি পাশ হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

তিনি আজ বুধবার রাজধানির সিরডাপ মিলনায়তনে ‘আগামীর সিলেট- উন্নয়নের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্ট এর চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ইয়াহইয়া চৌধুরী, পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ।

মতবিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে ‘গতিশীল নেতৃত্ব, কার্যকর উদ্যোগ ও দক্ষ জনশক্তি’ অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন শক্তিশালী ও আদর্শিক নেতৃত্বের জীবন্ত উহারণ। তিনি এখন একজন বিশ্বনেতা।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষে আওয়ামী লীগ সরকার সময়োপযোগী ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। উন্নয়নের সকল সূচকে সফলতা নিশ্চিত করতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটা আর্থসামাজিক উন্নয়নের দ্বিতীয় শর্ত।

তিনি বলেন, উন্নয়নের তৃতীয় শর্ত হলো- দক্ষ জনশক্তি। আমাদের দেশের প্রত্যেক নাগরিক অত্যন্ত মেধাবী; বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম মেধা ও সৃজনশীলতায় অত্যন্ত অগ্রসরমান। তারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতায় যেকোন কাজ অত্যন্ত সহজে করে নিতে পারে। কঠিন কাজও সহজে সমাধান দিতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। আগে ছিল ৪৮ বছর এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭১ বছর। উন্নয়ন কার্যক্রম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনমানের বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।

মুহিত বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশের অর্জন বেশিরভাগ সূচকে এগিয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ কৌশল ও গতিশীল নেতৃত্বে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনের পর থেকে দেশের চেহারা দিনদিন পরিবর্তন হয়েছে। সিলেট অঞ্চলেও বিরাট পরিবর্তন এসেছে। ২০০১ সালে আমি যে সিলেট দেখেছি এখন আর সেই অবস্থা নেই।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সিলেটে এখন অনেগুলো কল-কারাখানা হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন গড়ে উঠছে। সিলেটে এখন অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এটা একটা জাতির শক্তি। এই সফলতার জন্য এখন তৃপ্তি নিয়ে আমি অবসরে যেতে পারবো।

ড. খলিকুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, সিলেটে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সিলেট অঞ্চলের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, সিলেট দেশের প্রথম ডিজিটাল নগরী হিসেবে রূপ লাভ করবে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অচিরেই এর প্রতিফলন পরিলক্ষিত হবে। এর মাধ্যমে সিলেট শহরের প্রতিটি পয়েন্টে নাগরিকগণ বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ (ফ্রি ওয়াইফাই) পাবে। সকল ধরণের সেবা প্রাপ্তি হয়ে উঠবে আরো সহজ। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য শহরও ডিজিটালাইড করার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বার বার দরকার। এটা আজকের বাংলাদেশের স্লোগান। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে তা অভাবনীয়। আমরা এর জন্য গর্ব করতে পারি।

তিনি বলেন, গত ১০ বছরে বৃহত্তর সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বড় বড় বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। তবুও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

ড. মোমেন বলেন, সিলেটের গ্যাস সারাদেশে সরবরাহ হয়। কিন্তু সিলেটের মানুষ গ্যাস সংযোগ পাচ্ছে না। সিলেটে অনেকগুলো করকারখানা এখন বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তিনি আগামীর সিলেটের জন্য কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। পর্যটন নগরী সিলেটে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসে। আকর্ষণীয় করে তুলতে সিলেট নগরী ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোকে সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রত্যাশার মধ্যে আরো রয়েছে, দ্রুত সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ, সিলেট নগরীর চৌকিদেখি থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা। এছাড়া তেমুখি-বাদাঘাট সড়ক ৬ লেন, পুরাতন জেলখানায় দৃষ্টিনন্দন পার্ক স্থাপন, সিলেট-আখাউড়া রেললাইন ৪ লেনে উন্নীতকরণ, সিলেট বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে বিমান চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ, সিলেট নগরীতে উন্নত দেশের মতো পাতাল বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনে ৪৫২ কোটি টাকার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি তিনি তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, সিলেট নগরীর আয়তন প্রায় ২৬ কিলোমিটার। এর থেকে ৪গুণ বড় করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চাই। নতুন আবাসিক এলাকা গড়ে তুললে ছোট্ট নগরীর উপর চাপও কমবে। নগর যত বড় হবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা তত বাড়বে এবং পরিকল্পিত নগরায়ন সম্ভব হবে।

মতবিনিময় সভায় আলোচনায় অংশ নেন ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ এর আহ্বায়ক পিযুষ বন্দোপাধ্যায়, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা সীমান্তিকের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড. আহমদ আল-কবির, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্টাডি ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মামুন আল মাহবাব (স্বপ্নীল)।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত