নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ জুলাই, ২০১৮ ০১:০৪

তিন সমস্যার সমাধান চান নগরবাসী

একদিকে উঁচু উঁচু টিলা। টিলা থেকে সৃষ্ট হয়েছে কিছু প্রাকৃতিক খাল। যা স্থানীয়দের কাছে ছড়া নামে পরিচিত। টিলা থেকে উৎপন্ন এসব ছড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় হয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। এই ছড়াগুলোই ছিলো সিলেটের পানি নিষ্কাশষনের প্রধানতম পথ। অপরিকল্পিত নগরায়ন আর ভূমিখেকোদের  প্রভাবে গত কয়েবছরে ভরাট ও দখল হয়ে গেছে ছড়াগুলো। ফলে বৃষ্টি হলেই নগরীতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা।

বৃৃষ্টিতে যে নগরী জলজট দেখা দেয়, সেই নগরীতেই বছর জুড়ে থাকে সুপেয় পানির সঙ্কট। চাহিদার অর্ধেকও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারে না সিটি করপোরেশন। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নগরবাসীকে।

ভোগান্তিতে পড়তে হয় সড়কে বেরোলেও। সড়কের পাশের সবগুলো ফুটপাত দখল করে আছে হকাররা। ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের অনেকটা তাদের দখলে। ফলে নগরজুড়ে লেগে থাকে যানজট। ফুটপাতে হাঁটতে পারেন না নগরবাসী।

সিলেটের এই তিন সমস্যাকেই প্রধান সমস্যা মনে করেন নগরবাসী। আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিজয়ী প্রার্থীর কাছ থেকে জলবদ্ধতা, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট ও যানজট- সর্বাগ্রে এই তিন সমস্যার সমাধান চান নগরীর বাসিন্দারা।

সুশাসনের জন্য নাগিরক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জলবদ্ধতা ও যানজট নিরসন ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা খুব বড় কোনো দাবি নয়। নগর পিতারা যদি আরেকটু আন্তরিক ও সততার সাথে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতেন তা হলে এতাদিনে এই সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব হতো। আমি আশা করবো আগামীতে যিনি এই নগরীর মেয়র নির্বাচিত হবেন। তিনি এই সমস্যাগুলো সমাধানে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হবেন।

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে ছোট বড় প্রায় ২৫ টি প্রাকৃতিক খাল। যার বেশিরভাগই বেদখল হয়ে আছে। এগুলো উদ্ধারে এ পর্যন্ত তিনটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র থাকাকালে ছড়া-খাল দখলমুক্ত করতে ২৩৬.৪০ কোটি টাকার বৃহৎ একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। তবে দুই বছর মেয়াদী এই প্রকল্পেও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাফল্য মিলেনি। নগরীর ৭৩ কিলোমিটার ছড়ার মধ্যে এখনো বেদখলে আছে ৬১.৫ কিলোমিটার। সিসিক সূত্রে জানা যায়, ২৬৮ জন প্রভাবশালী দখল করে আছেন ছড়াগুলো। এছাড়া কয়েকটি সরকারী  প্রতিষ্ঠানও দখল করেছে ছড়া।

ফলে এগুলো উদ্ধারে আশানুরুপ সাফল্য মিলছে না। এতে অল্প বৃষ্টিতেই নগরজুড়ে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। গত সপ্তাহেও বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

এরআগে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে ২০০৯ সালে নগরীর ছড়াগুলো উদ্ধারে ১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন। এরপর ২০১৩ সালে আরিফের মেয়াদে একই লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় ২০ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প। কেনা হয় আধুনিক যন্ত্রপাতি।  এসব প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের পানি শাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ৮ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদার বিপরীতে আড়াই থেকে ৩ কোটি লিটার পানি সরবরহ করা হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি লিটার পানির ঘাটতি থাকছে।

পানির ঘাটতি পুরণে ২০০৯ সালে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেট নগরীর কুশিঘাটে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের নির্মান কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি পরিশোধন ক্ষমতা সম্পন্ন এই প্লান্ট নির্মান করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

তবে এই প্লান্টে প্রতিদিন ২ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি পরিশোধনের কথা থাকলেও বর্তমানে সক্ষমতার অর্ধেকের মতো পানি পরিশোধন সম্ভব হচ্ছে। ফলে বিশাল প্লান্ট বানিয়েও পানির চাহিদা পুরণে ব্যর্থ সিসিক।
 
সিলেট নগরীতে যানজটের সমস্যা নিত্যদিনের। গত পাঁচ বছরে নগরীর কয়েকটি সড়ক প্রশস্ত করা হলেও যানজট যন্ত্রনা থেকে রেহাই মিলছে না নগরবাসীর। ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে রাখায় যানজট অসহনীয় রূপ নিয়েছে বলে দাবি নাগরকিদের।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মেয়র থাকাকালে নগরীর লালদিঘীরপাড়ে নির্মাণ করেন হকার্স মার্কেট।  ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের ওই মার্কেটে পুণবার্সন করে ফুটপাত দখলমুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছিলেন কামরান। তবে নিজের মেয়াদকালে এই আশ^াস পুরণে ব্যর্থ হন তিনি।
 
আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ফুটপাত দখলমুক্ত করতে একাধিকবার উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সময় অভিযানও চালান তিনি। আদালতও সিলেটের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিলেট করপোরেশন ও পুলিশকে নির্দেশ দেয়। তবে এতো উদ্যোগ সত্ত্বেও তেমন সাফল্য মিলেনি। ফুটপাত ছাপিয়ে নগরীর বেশিরভাগ সড়কের অনেকাংশ এখনো হকারদের দখলে। ফলে যানজটের যন্ত্রণা থেকেও রেহাই পাচ্ছেন না নগরবাসী।

এসব সমস্যা সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে সিসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুৃল হক চৌধুরী বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর ছড়া-খাল উদ্ধার ও জলাবদ্ধতা নিরসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসের সবচেয়ে বৃহৎ প্রকল্প গ্রহণ করি। তাতে অনেকটাই সফল হই। ফলে এখন নগরীতে জলাবদ্ধতা হয় না। বৃষ্টি হলে পানি জমলেও বৃষ্টি কমলেই তা কেটে যায়। বিশুদ্ধ পানির চাহিদা পুরণে কুশিঘাটে একটি প্লান্ট নির্মান করা হলেও সুরমা নদীর নব্যতা কমে যাওয়ায় এটি থেকে আশানুরূপ পানি মিলছে না। ফলে নগরীর অদূরের বাদাঘাটে বুড়াগাঙে আরেকটি প্লান্ট নির্মানের পরিকল্পনা আমি গ্রহণ করি। এর জমি অধিগ্রহণ কাজ চলছে। আমার মেয়াদে সিলেটের প্রায় সবগুলো সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে আমি সবসময় সরব ছিলাম। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রশাসন আমাকে সহযোগীতা করেনি। অদৃশ্য শক্তিও আমার বিরুদ্ধে ছিলো। তবে আবার সুযোগ পেলে এগুলোর স্থায়ী সমাধান করবো।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট নিরসনে আমার সময়ে কুশিঘাটে প্লান্টের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ছড়া দখলমুক্ত করতে আমি আন্তরিক থাকলেও তৎকালীন বিএনপি সরকারের সহযোগিতা পাইনি। হকারদের পুণর্বাসন ব্যতীত উচ্ছেদেও পক্ষপাতী আমি নই। তাদের পুণর্বাসনে আমি উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু দুঃখজনকভাবে পরের মেয়র তা এগিয়ে নেননি। এবার নির্বাচিত হলে আমি এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত