দেবকল্যাণ ধর বাপন

১৬ জুলাই, ২০১৮ ০২:০৭

পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তপ্ত নির্বাচনী মাঠ

যতই ঘনিয়ে আসছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের তারিখ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ।  আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগে উত্তাপ ছড়াচ্ছে নির্বাচনী লড়াইয়ে।

সর্বশেষ শনিবারও নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আরিফুল হক চৌধুরী। গণম্যাধ্যমের সাথে আলাপকালে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর নেতাকর্মীদের হয়রানি করছে পুলিশ। বিএনপির নেতাকর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ কামরানের।

এমন অভিযোগের জবাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের দাবি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন অভিযোগ করছেন আরিফ। কাউকে হুমকি দেওয়া তাঁর সংস্কৃতিতে নেই দাবি করে কামরান বলেন, অভিযোগ করাই বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

এরআগে শুক্রবার (১৩ জুলাই) বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আরিফুল হক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপার্থী বদর উদ্দিন কামরান একে অপরের বিরুদ্ধে সিলেটে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করেন।

এদিন আরিফের বিরুদ্ধে কামরান অভিযোগ আনেন, সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা ১০ জুলাই হইতে শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার ও সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী একজন মেয়র প্রার্থী তার মাইকিং করার জন্য শুধুমাত্র একটি চোঙ্গার মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু বিএনপির প্রার্থী একটি মাইকের পরিবর্তে তার নির্বাচনী প্রচারণার কাজে নিয়োজিত সিএনজিতে দুটি মাইক ব্যবহার করেছেন।

এমনকি এই অভিযোগের প্রমাণ স্বরূপ একটি স্থির চিত্র সংযুক্ত করে দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর  বিরুদ্ধে বিএনপির মেয়র প্রার্থী অভিযোগ আনেন, তাঁর প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিশাল আকারের একটি তোড়ন নির্মাণ করা হয়েছে। এমন কি সেই তোড়নের ওপর তাদের প্রতীক নৌকার বিশাল প্রতিকৃতি দাঁড় করিয়েছে। যা আচরণবিধির পরিপন্থী।

এছাড়া একই প্রার্থীর সমর্থকরা গত বুধবার (১১ জুলাই) রাত আনুমানিক পৌনে ১১টার দিকে নগরীর হাসান মার্কেট এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার সাঁটাতে বাধা দেয়, পোস্টার ছেঁড়া ও ধানের শীষের কর্মীকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে ওই কর্মীকে ছাড়াতে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে আরিফ বসে পড়লে সেই কর্মীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এর আগে ১৩ জুলাই (শুক্রবার) আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন সিসিক নির্বাচনের আরেক মেয়র প্রার্থী মহানগর জামায়েতের আমির এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

তিনি তাঁর অভিযোগে বলেন, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। একই সাথে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর লোকজন কর্তৃক এডভোকেট জুবায়েরের প্রচারণায় নিয়োজিত কর্মীদের হুমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

তাঁর অভিযোগ, মাইকিং ব্যবহারের সংজ্ঞা ও সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে বুধবার (১১ জুলাই) রাত ১০টা পর্যন্ত সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার ২ নাম্বার গেইটের সম্মুখে একাধিক মাইক ব্যবহার করে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জুবায়ের অভিযোগ করেন, পোস্টার-ব্যানার ব্যবহারের নীতিমালা থাকলেও নৌকার প্রার্থীর মির্জাজাঙ্গালস্থ প্রধান নির্বাচনী কার্যালয় এলাকায় এবং ধানের শীষের প্রার্থীর কাজীটুলাস্থ নির্বাচনী প্রধান কার্যালয়ের সামনে বৃহদাকার ব্যানার ঝুলানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন জুবায়ের।

এছাড়া অভিযোগপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়- জুবায়েরের নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মীদেরকে নগরীর ২৭নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ডের নুরানী আবাসিক এলাকা, ৬নং ওয়ার্ডের বাদামবাগিচা, ১৯নং ওয়ার্ডের টিবি গেইট এলাকায় কামরানের লোকজন কর্তৃক হুমকি-ধমকি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে।

এর আগে ৯ জুলাই (সোমবার) কামরান ও জুবায়েরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যান আরিফ। সেসময় তিনি তাঁর অভিযোগে উল্লেখ করেন, আচরণবিধি অনুযায়ী আগামী ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী প্রচারণার কোন সুযোগ না থাকলেও বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও এহসানুল মাহবুব জুবায়ের  বারবার নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।

অভিযোগে তিনি আরো বলেন, কামরানের পক্ষে তার স্ত্রী আসমা কামরান ও ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুসহ সরকার দলের নেতাকর্মী নগরীতে প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করছেন।

এ অভিযোগের এক সপ্তাহ আগে ২ জুলাই (সোমবার) কামরানের বিরুদ্ধে আরিফের পক্ষে নির্বাচন কমিশনে আলী আহমদ অভিযোগ করে বলেন,  মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সঙ্গে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী ছিলেন; যাতে স্পষ্ট আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে।

এছাড়া কামরানের পক্ষে তার স্ত্রী আসমা কামরান ও ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলুসহ সরকার দলের নেতাকর্মী নগরীতে প্রকাশ্যে লিফলেট বিতরণ করছেন। এই বিএনপি নেতা বলেন, আচরণবিধি অনুযায়ী আগামী ১০ জুলাই প্রতীক বরাদ্দের আগে প্রচারণার কোন সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, নির্বাচনে যে ষড়যন্ত্র ও কারচুপি হচ্ছে তা তো গাজীপুরসহ সাম্প্রতিক কয়েকটি নির্বাচনেই প্রমাণিত । ফলে আমাদের অভিযোগ বা শঙ্কা কিন্তু একেবারেই অমূলক নয়। এখন প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকেই এগুলো ভুল প্রমাণ করতে হবে।

তবে বিএনপির এসব দাবিকে তাদের রাজনৈতিক দৈন্যতা বলছে আওয়ামী লীগ। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, তাদের নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা নেই, ত্যাগি নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন নেই। এজন্য সরকারকে দায়ি করা রাজনৈতিক দৈন্যতা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত