মাধবপুর প্রতিনিধি

১৭ জুলাই, ২০১৮ ১৫:৫৩

দারিদ্রের সাথে লড়াই করে বিসিএস ক্যাডার মুক্তার

হবিগঞ্জের ছেলে মো. মুক্তার মিয়া। তাঁর বাবা একজন বর্গাচাষি। বাবার সাথে মুক্তারও জমিতে কাজ করতেন। ভ্যানগাড়িতে করে গ্রাম থেকে বাঁশ নিয়ে বাবা বিক্রি করতে যেতেন হবিগঞ্জের মাধবপুর বাজারে। আর সেই ভ্যানগাড়ি ঠেলতেন মুক্তার।

কিন্তু শতকষ্টের মাঝেও বাবা তাঁর দুই ছেলে ও দুই মেয়েকে পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহ দিতেন। তিনি চাইতেন, ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হোক।

এই চার ভাইবোনেরই একজন মুক্তার এবার ৩৭ বিসিএসে প্রাণিসম্পদ ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। যোগ দেবেন সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে।

‘নুন আনতে পান্তা ফুরানো’ পরিবারে বড় হলেও কঠোর পরিশ্রমই তাকে সাফল্য এনে দিয়েছে। আউলিয়াবাদ আর কে উচ্চ বিদ্যালয় কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাসের পর মুক্তার উচ্চমাধ্যমিক পড়েছেন সিলেটের এমসি কলেজে। স্কুলে পড়ার সময় জগদ্বিশ দেবনাথ নামের একজন শিক্ষক তাঁকে বিনা পয়সায় পড়াতেন। মুক্তারের কলেজে ভর্তির টাকা না থাকায় ওই শিক্ষকই নিজের খরচে তাকে এমসি কলেজে ভর্তি করান।

এমসি কলেজে ভর্তির পর শুরু হলো আরেক সংগ্রাম। গ্রাম থেকে গিয়ে রাতারাতি টিউশনিও জোগাড় হলো না, পরে এক বাসার ছেলেমেয়েদেরকে পড়ানোর বিনিময়ে তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা হলো। এমসি কলেজের অধ্যাপক তোফায়েল ও মজিদ স্যার মুক্তারকে পড়িয়েছেন।

উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর ২০০৯-১০ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেলেও অসুস্থতা ও আর্থিক সমস্যায় ভর্তি হওয়া আর হয়নি। পরে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সে ভর্তি হন মুক্তার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর সারাদিনের ক্লাস শেষে যখন সহপাঠীরা আড্ডা দিত। তখন মুক্তার টিউশনি করতে ছুটতেন। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কয়েকটি টিউশনি করে রাতে ঘরে ফিরতেন। এভাবেই স্নাতকের সময়টা কেটে গেল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বছর থেকে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলেন। আশপাশের অনেকেই যখন বলত, ‘গরিবের পড়ালেখা করে লাভ নেই, মামা-চাচা বা ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে না।’ তখন মুক্তার শক্ত মনোবল নিয়ে পড়াশোনা করতেন। ৩৭তম বিসিএসে ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে তিনি তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি প্রমাণ করেছেন। তাঁর বাবার স্বপ্নপূরণ করেছেন।

মুক্তার বলেন, ‘বাবা চাইতেন আমরা যেন ভালো কিছু করি। আমার ছোট ভাইবোনরাও পড়াশোনা করছে। বিসিএস ক্যাডার হতে পেরে ভালো লাগছে। সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে চাই। এজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থী।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত