সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ জুলাই, ২০১৮ ১৮:৫৬

সিলেটের উন্নয়নে ৬ মেয়র প্রার্থীর ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে ৬ মেয়র প্রার্থী নগর উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। তারা বলেন, বাইরের কেউ নয়, আমাদের পক্ষ থেকেই একজন মেয়র হবেন। এর মধ্যে যেই বিজয়ী হোন না কেন আমরা বাকি ৫ জন বিজয়ীকে সহযোগিতা দিয়ে যাবো নগরবাসীর সেবা ও নগরীর উন্নয়নের স্বার্থে।
 
সোমবার (২৩ জুলাই) সকালে সিসিক নির্বাচন ২০১৮ সামনে রেখে সিলেটে দৈনিক যুগান্তর আয়োজিত ‘কেমন মেয়র চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রার্থীরা এই অঙ্গিকার করেন।

সিলেট নগরীর একটি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মেয়র প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, সিপিবি-বাম দলের মেয়র প্রার্থী মো. আবু জাফর, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের।

যমুনা টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো চীফ ও দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়র রিপোর্টার মাহবুবুর রহমান রিপনের পরিচালনায় নির্ধারিত আলোচক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। মেয়র প্রার্থীদের কাছে প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ, সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট’র সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রক্টর অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সহসভাপতি শামসুল আলম সেলিম ও পরিবেশ কর্মী হাসান মুর্শেদ।

দৈনিক যুগান্তরের সিলেট ব্যুরো ইনচার্জ সংগ্রাম সিংহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে গোলটেবিলের সমাপ্তি করেন।

গোলটেবিলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেট নগরী নিয়ে আমরা যতটুকু ভাবি তার চেয়ে বেশি ভাবেন নাগরিকরা। আমরা সবাই একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন নগরী চাই। যেখানে কোন ধরণের জঞ্জাল থাকবে না।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এই সিলেটের কৃতিসন্তান বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী। অথচ সিলেটে কোন বিজয়স্তম্ভ নেই। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। নির্বাচনের পর সরকারের সাথে আলাপ করে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণের চেষ্টা করব। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমাদের কর্তব্য কারণ তারা যুদ্ধ এই দেশ স্বাধীন না করলে আমরা আজ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারতাম না।

কামরান উপস্থিত মেয়র প্রার্থীদের দেখিয়ে সুধিজনদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, আমাদের দেখে কী মনে হয়- আমাদের মধ্যে কোন ধরণের হিংসা আছে? বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে কামরান বলেন, বিশ্বাস রাখতে পারেন। কোন মানুষকে হয়রানি করা বা পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে বিপদে ফেলার মানুষ আমি না। এগুলো জীবনেও করি নাই, এসব আমি পছন্দও করি না। আমি মনে করি, পুলিশ প্রশাসনের এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হয়। সবসময় বলে আসছি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।

তিনি বলেন, ইচ্ছা করলেই আমরা ৬ জন মেয়র হতে পারব না। আল্লাহর হুকুমে যে কোন একজন মেয়র পদে নির্বাচিত হব। কিন্তু ৩০ তারিখের নির্বাচনের পরও আমাদেরকে একে অপরের সাথে চলতে হবে। সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাদের সহমর্মিতা নিয়ে চলতে হবে। আমরা চাই সেটাকে ধরে রেখে একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হোক।

তিনি বলেন, আপনারা অনেকেই বলছেন আমি সরকার দলীয় প্রার্থী। আসলে প্রার্থী হওয়ার পর কেউ সরকার দলীয় থাকেন না। নির্বাচন কমিশন থেকে ইতিমধ্যেই আমাকে আচরণ বিধির ব্যাপারে সর্তক করে দেয়া হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী প্রচারণায় নগরবাসী খুবই কষ্টে আছেন। নগরজুড়ে মাইকের আওয়াজ। যা আমরা প্রার্থীরা হয়ত বুঝি না। যে কোনো কাজের ক্ষেত্রে নগরীর সব রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা না থাকলে তা বাস্তবায়ন করা কঠিন।

কামরান বলেন, মহানগরীর সম্পত্তি রয়েছে, সেটা যদি আমরা কাজে না লাগাই তাহলে এর কোন মূল্যায়ন হবে না। মিউজিয়ামের জন্য উপযুক্ত স্থান জালালাবাদ পার্ক। এখানে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে উপরে মিউজিয়াম করা সম্ভব। যাদুঘর সিলেটে নেই, এটা আমাদের জন্য লজ্জার। টিলা কেটে বড় বড় দালান বানানোর পর ভূমিকম্পে ধ্বংস হলে আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েও লাভ হবে না। কারণ আল্লাহ পাহাড় কাটা নিষেধ করেছেন। আমরা সারদা হলকে সারদা কমপ্লেক্স করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য বরাদ্দ করে দিতে পারি।

তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা কমানো যাবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সুরমা ড্রেজিং করা না হয়েছে। গণপরিবহন নগরবাসীর জন্য অত্যন্ত জরুরি। আপনারা অনেকেই জানেন বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় এলাকা সিলেট মহানগর পুলিশের। সিলেট সিটি করপোরেশনের এলাকাও বর্ধিত করা জরুরী। নগরীর পরিধি বড় না করলে সঠিকভাবে পরিকল্পনাও করা যাবেনা। ২০১৩ সালের নির্বাচনে আমি হেরে ছিলাম কিন্তু কোন প্রতিবাদ করিনি। মানুষ ভোট দেয়নি আমি হেরে গেছি। সুতরাং নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে পূণ্যভুমির মর্যাদা ও সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সব নিরাপদে থাকতে চাই। অতিউৎসাহী হয়ে কেউ এমন কিছু না করুক, যাতে আমাদের সিলেটের সুনাম নষ্ট হয়।
 
বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, হযরত শাহজালাল (রহ.), শাহপরান (রহ.) ও বঙ্গবীর ওসমানীর স্মৃতিসহ সিলেটের ইতিহাস-ঐতিহ্য আমরা এখনো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারিনি। আগামীতে আমরা জাদুঘর স্থাপনের মাধ্যমে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা করব।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, সোয়ারেজ ব্যবস্থা না থাকায় নগরীর পরিবেশ ঝুঁকিপূর্ণ। সোয়ারেজ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে এটা দীর্ঘমেয়াদী কাজ। বাস্তবায়ন হলেই নগরীর পরিবেশ সুন্দর হবে।

তিনি বলেন, সিলেটের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তাই এই শহরে একটা সাংস্কৃতিক একাডেমী খুবই প্রয়োজন। নির্বাচিত হলে জালালাবাদ পার্ক এলাকায় সাংস্কৃতিক একাডেমী করা হবে।

আরিফ বলেন, এই শহরকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ‘সেন্ট্রালাইজ’ করতে হবে। সব কিছু এক জায়গায় জমা করে রাখলে চলবে না। সদ্য সাবেক এই মেয়র বলেন, গণপরিবহনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এর জন্য জায়গা লাগবে। ১০-১৫টি গাড়ি হলে চলবে না, কমপক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ গাড়ি লাগবে। এসব গণপরিবহন চলাচলের জন্য পৃথক লেনও করতে হবে রাস্তায়। নির্বাচিত হলে চালু করব।
 
মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে আরিফ বলেন, দেশের প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বসার পর তারা জানালেন পূর্বের করা মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন যোগ্য নয়। তাই এটি পুনরায় রিভিউর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আরিফ বলেন, নগরীর বিশুদ্ধ পানি উত্তোলনের একটি সোর্স পাওয়া গেছে। বিমানবন্দর এলাকার চেঙেরখালে। ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ প্রক্রিয়াধীন।

তিনি বলেন, ফুটপাত দখল মুক্ত করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে এক সপ্তাহের ব্যাপার। এছাড়াও ১শ’ ৩৯ কিলোমিটার ফুটপাতের ডিজাইন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানী ও গ্রেপ্তারের অভিযোগ ধানের শীষের প্রার্থী আরিফ বলেন, এই সিলেটে দীর্ঘ যুগের সম্প্রীতি রয়েছে। যেখানে সরকার প্রধান বলছেন, মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের কথা সেখানে প্রশাসনের অতিউৎসাহী কিছু কর্মকর্তা পরিবেশ ঘোলাটে করছে।

তিনি বলেন, জানি কামরান ভাই ভালো মানুষ তিনি এগুলো করবেন না। যারা পরিবেশ ঘোলাটে করছে তারা কারা? আশা করি সরকার দলীয়প্রার্থী হিসেবে কামরান ভাই এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখবেন। দু’একদিন আগে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয়া হয়েছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যারা এর সাথে জড়িত তাদের শাস্তি দেন। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে নাম ঠিকানা দিন আমরাই তাকে পুলিশে সোপর্দ করব। কিন্তু এই ঘটনাকে পুঁজি করে প্রতিটি নেতা-কর্মীদের বাসা-বাড়িতে তল্লাশি, গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। নেতাকে না পেয়ে তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কে কেন কোথায় নিয়ে গেছে তাও বলছে না। এতে মানুষের মধ্যে ভয়-ভীতি সৃষ্টি হচ্ছে। সামনে জাতীয় নির্বাচনে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। আমরা এখন আশা করছি সরকার ও নির্বাচন কমিশন পূণ্যভুমির মর্যাদা রক্ষায় আরও দায়িত্বশীল হবেন। সম্প্রীতির সিলেটে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি।

বাসদ-সিপিবি মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ভালো থাকলেও বিভিন্ন ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি করছে। মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আরও দায়িত্ববান হতে হবে।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে বিশুদ্ধ পানি সংকট, জলাবদ্ধতা, যানজট ও ফুটপাত হকারমুক্ত করতে কাজ করব। গভীর নলকূপ থেকে পানি উঠানো বন্ধ করে বিশুদ্ধ পানির জন্য সুরমা নদীকে কাজে লাগানো হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন বলেন, আমরা মুখে মুখে না বলে অন্তর থেকে বলি নির্বাচনটা সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণভাবে করব। আর এটা অনেকটা নির্ভর করে সরকার দলীয় প্রার্থীর উপর। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, আমরা দুর্নীতিমুক্ত মেয়র চাই। নির্বাচিত হলে দুর্নীতিমুক্ত নগর ভবন উপহার দেব। সিলেটের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল হক তাহের বলেন, প্রতিশ্রুতি না দিয়ে একটি শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমি প্রার্থীদের নিজেদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে শঙ্কিত। তাই একে-অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছি। এই নগরীর মেয়রকে হতে হবে নাগরিকবান্ধব।
 
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমীর অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে তত মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। নির্বাচন কমিশনারের দেয়া কথার মিল পাওয়া যাচ্ছে না।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রত্যাশার জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মিল না থাকা। সরকার ও সিটি করপোরেশন দুটি ভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কাজের ক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের এতদিন পরও বধ্যভূমি কেন সংরক্ষণ হচ্ছে না সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে তার পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা থাকবে বলে জানান জুবায়ের।
 
গোলটেবিলে নির্ধারিত আলোচকদের মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর ও পরিবেশ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং নগর পরিকল্পনাবিদ ড. জহির বিন আলম বলেন, পরিকল্পিত নগর গঠনে সুরমা নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। নগরীতে নগর পরিবহন ব্যবস্থা চালু না থাকায় কর্মজীবী লোকজনকে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নগরবাসীকে এ ব্যাপারে আরো সচেতন করতে হবে।

সিলেট জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সুব্রত চক্রবর্তী জুয়েল বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি, বধ্যভূমি থাকলেও যথাযথভাবে সংরক্ষণ হচ্ছে না। নেই কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। তিনি নগরীতে বিজয় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাপস দাশ পুরকায়স্থ নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহী লোকজনের জন্য সিলেটের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতির সংস্কৃতি এখন বিনষ্টের পথে। তিনি এই অবস্থার উত্তরণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন।
 
সিলেট প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির অতীতের মত শান্তিপূর্ণভাবে সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা করে বলেন, প্রশাসনের কেউ কেউ নির্বাচনের পরিবেশ নষ্টে সাবোটাজ করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে। প্রশাসনের কোন ব্যক্তির অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডের কারণে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক সেটা কারো কাম্য নয়।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি নেতাদের নিরীহ সন্তানদের আটক, দলীয় নেতাকর্মীদের বাসায় পুলিশি অভিযান চালিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বন্ধ করে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসন, নির্বাচন কমিশনসহ গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সিলেট এর সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ মানুষ আতঙ্কে আছেন। নির্বাচনী কমিশন ও প্রশাসনের মধ্যে দ্বৈত শাসন চলছে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বপ্রণোদিতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন। কিন্তু তাদের এমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সহসভাপতি শামসুল আলম সেলিম বলেন, একজন সংস্কৃতি কর্মী হিসেবে সংস্কৃতিবান্ধব মেয়র চাই। তিনি সিলেটের লোক সংস্কৃতি রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ ও সিটি করপোরেশনের একটি নিজস্ব সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপনের আহবান জানান।

পরিবেশ কর্মী হাসান মুর্শেদ বলেন, সিলেট শুধু আধ্যাত্মিক নগরী নয়, পর্যটন নগরীও। দেশ বিদেশের লাখো লাখো পর্যটক এখানে আসেন। কিন্তু পর্যটন বিষয়ে কোন ওয়ানস্টপ ইনফরমেশন সেল, কর্নার নেই। তিনি বিমান বন্দর, রেল স্টেশন, বাস স্ট্যান্ড ছাড়াও নগরীতে পর্যটন বিষয়ক তথ্য কেন্দ্র খোলার প্রস্তাব রাখেন। তাঁর দাবি, এতে সারা বিশ্বে দ্রুত পরিচিতি পাবে সিলেট।

সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারী প্রক্টর অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন বলেন, জনবান্ধব মেয়র চাই। যার দরজা সকলের জন্য খোলা থাকবে। তাছাড়া হকারমুক্ত ফুটপাত নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত