নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জুলাই, ২০১৮ ০১:৫১

‘বাইরের ভোট’ কাছে টানতে সচেষ্ট তাঁরা দু’জন

সিলেট সিটি নির্বাচন

নগর বিস্তারের সাথে সাথে নানা অঞ্চলের মানুষ এসে জড়ো হয়েছেন সিলেটে। অনেকে আবার ভোটারও হয়ে গেছেন এই নগরীর। এমন ভোটারের সংখ্যা প্রায় লাখখানেক হবে বলে ধারণা সংশ্লিস্টরা। বিশাল অংকের এই অঞ্চলভিত্তিক ভোটগুলো নিজেদের পক্ষে টানতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

বাইরে থেকে এসে সিলেটে থিতু হওয়া এসব লোকজন স্থানীয়দের কাছে ‘বাইরের লোক’ হিসেবে পরিচিত। অনেক সময় নানা গঞ্জনারও শিকার হতে হয় তাদের। তবে ভোট এলেই কদর বেড়ে যায় এই ‘বাইরের’ লোকদের। সব প্রার্থীরা ছুটেন তাদের কাছে। নিজ নিজ এলাকার নামে সমিতি করে জোটবদ্ধ থাকায় ভোটের সময় তারা হয়ে উঠেন বড় ফ্যাক্টর।

অঞ্চলভিত্তিক এসব ভোটের একটা বড় অংশ এতোদিন বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের বাক্সেই পড়তো। কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানের বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকায়। সিলেটে অঞ্চলভিত্তিক ভোটারদের মধ্যে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার ভোটারই সবচেয়ে বেশি। নিজের জন্ম ওই এলাকায় হওয়ায় আসমা কামরান পিতৃপুরুষের এলাকার ভোট নিয়ে আসতেন স্বামীর পক্ষে। তবে গতনির্বাচনে সে হিসেব অনেকটাই পাল্টে যায়। সেবার অঞ্চলভিত্তিক ভোটের একটা বড় অংশে ভাগ বসান আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফের স্ত্রী শ্যামা হকেরও বাড়ি ময়মনসিংহে। স্বামীর পক্ষে মাঠে নেমে গত নির্বাচনে চমক দেখান তিনি।

এবারও সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক এই দুই মেয়র। আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান এবং বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর মধ্যে এবারও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রচারণায়ও এগিয়ে আছেন তাঁরা। এবার অঞ্চলভিত্তিক ভোটগুলো কার বাক্সে পড়বে এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
 
এবার সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২জন। এদের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক ভোটের সংখ্যা লক্ষাধিক হবে বলে ধারণা নির্বাচন সংশ্লিস্টদের।

সিলেটে বসবাসরত বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দারা নিজেদের এলাকার নামে গড়ে তুলেছেন সংগঠন। এ সব সংগঠনের মধ্যে অনেকগুলো ইতোমধ্যে সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। আবার অনেক এলাকার ভোটারদের কাছে টানতে ওই এলাকার নেতারা এসে প্রচারণয়া নেমেছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে। দুই শীর্ষ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসেও নিজ নিজ এলাকার ভোটারদের সাথে মতবিনিময়-সভা করে নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন।

এদিকে, আরিফ-কামরান দুজনে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই বিভিন্ন অঞ্চলের ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার মিশনে নামেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বরিশাল, ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের ভোটারদের ভোট নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আরিফ ও কামরান।

গত ১ জুন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতি সিলেটের ইফতার মাহফিলে অংশ নেন বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী। ২ জুন বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতির দোয়া ও ইফতার মাহফিলে অংশ নেন আরিফ। গত ১২ জুলাই সিলেটস্থ সুনামগঞ্জবাসীর সাথে মতবিনিময় সভা করেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী কামরান। এয়াড়াও সিলেটস্থ দেশের আঞ্চলিক সংগঠন আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নানা সময়ে যোগ দেন কামরান ও আরিফ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৭ জন। হলফনামা অনুযায়ী ৭ মেয়রপ্রার্থীর ৫ জনের স্থায়ী ঠিকানা সিলেট। অন্যদের মধ্যে ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী ডা মোয়াজ্জেম হোসেন খানের বাড়ি চাঁদপুর আর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরের স্থায়ীঠিকানা মৌলভীবাজার জেলায়।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতাকারী আওয়ামীলীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রধান দুই মেয়র প্রার্থীর দু’জনের স্থায়ী আবাস সিলেট হলেও তাদের স্ত্রীদের জন্মস্থান বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানের গ্রামের বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহের টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলায়। তিনি সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। অন্যদিকে সংগটনটির উপদেষ্টা হিসেবে থাকা আরিফুল হকের পত্মী শ্যামা হকের বেড়ে উঠা ময়মনসিংহ শহরে। বিবাহ সূত্রে সিলেটে এসেছেন শ্যামা। সেই সুবাদে সিলেটে বসবাসরত ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভোট পক্ষে নিতে কাজ করছেন দুজনেই।

সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌফিকুল আলম বাবলু বলেন, ‘গেলো সিসিক নির্বাচনে আমরা আরফিুল হক চৌধুরীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কাজ করেছি। এবারের নির্বাচনে আমরা আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের নৌকা প্রতীকের পক্ষে সবাই কাজ করছি। এ সিদ্ধান্ত আমরা অনেক আগ থেকেই নিয়ে রেখেছি। সিলেট নগরে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রায় ৪০-৪৫ হাজার ভোটার রয়েছেন।’

বৃহত্তর ঢাকা সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই খোকন বলেন, ‘সিলেট নগরে বসবাস করা আমাদেও বিপুল সংখ্যক ভোটার আছে। নির্বাচনের ফলাফলে এসব ভোটার বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে কাজ করছেন। এ নিয়ে আমরা সম্মিলীত কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি।’

মৌলভীবাজার সমিতি সিলেটের কার্যকরী সদস্য সিকান্দর আলী বলেন, আমাদের সংগঠনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত মানুষ আছেন। আমরা সাংগঠনিকভাবে কাউকে সমথর্নের কথা ভাবছি না। তিনি জানান, ‘আমাদের সংগঠনের সমীক্ষা অনুযায়ী নগরে মৌলভীবাজারের ২২-২৪ হাজার ভোটার আছেন।’

বরিশাল বিভাগীয় কল্যাণ সমিতি সিলেটের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সিলেটের নির্বাচনে আমাদের প্রচুর ভোটার আছেন। প্রত্যেকেই পছন্দের প্রার্থীকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করছেন।

হবিগঞ্জ সমিতি সিলেটের বেশ ক’জন সিসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন জানিয়ে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. শওকত হোসেন বলেন, ‘সিলেটে আমাদের প্রচুর ভোটার রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠ করতে সমিতির পক্ষ থেকে সব ধরণের সহায়তা করা হবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত