জাহিদ উদ্দিন, গোলাপগঞ্জ

১৩ আগস্ট, ২০১৮ ১৮:৪৬

সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে দুর্ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল

পূর্ব সিলেটের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক। সম্প্রতি এই সড়কটি যাত্রীদের কাছে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি যানবাহন যেন সর্বোচ্চ গতিতে ধেয়ে আসা একেকটি মৃত্যুদূত। চোখের পলকে ঘটে যায় দুর্ঘটনা, ঘটে মৃত্যু। যে কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনায় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।

মৃত্যুর মিছিলে শামিল হচ্ছেন সব শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ। দুর্ঘটনায় অনেকেই হারাচ্ছেন আপনজনদের। অকালে অস্বাভাবিক মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হচ্ছে অনেকেই। স্বজন হারানোর আর্তনাদে ভারি হচ্ছে বাতাস। পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকলেও অনেক পরিবারের নেমে এসেছে আর্থিক কষ্টও।

আইনের যথেষ্ট প্রয়োগ না থাকা এবং অসচেতনতা ও অদক্ষ চালকের কারণেই গোলাপগঞ্জ তথা সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক এতো ভয়ংকর। চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্যই এ সড়কে অকালে ঝরছে অনেক তাজা প্রাণ। একটি দুর্ঘটনার রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আরেকটি প্রাণের বিনিময়ে রক্তে লাল হয় এ সড়কের কোন না কোন স্থান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জ উপজেলার পাঁচমাইল এলাকা থেকে রানাপিং বাজার পর্যন্ত এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশী। গোলাপগঞ্জ উপজেলার এ এলাকার ভিতরে এ বছরের প্রথম থেকেই বেশ কয়েকটা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে যার ক্ষত এখনো মুছে যায়নি। এ বছরের শুরুর দিকে কোন দুর্ঘটনা এ সড়কে না হলেও মার্চ মাসের শেষের দিকে দুর্ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সিলেটে থেকে ছেড়ে যাওয়া যাত্রীবাহী বাস বিয়ানীবাজারের বারইগ্রাম আসার পথে গোলাপগঞ্জ উপজেলার দাঁড়িপাতন এলাকায় পৌঁছালে আরেকটি যাত্রীবাহী বাস ড্রাইভার মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে ওভারটেকিং করতে গিয়ে সড়কের পাশে ছিটকে পড়ে উল্টে যায়। এ সময় বাসে থাকা যাত্রীরা বাসের নিচে চাপা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও স্থানীয়দের সহায়তায় সব যাত্রীদের উদ্ধার করলেও বাসে থাকা হেল্পার নিহত হন। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় প্রায় ৪০ জন যাত্রী আহত হন।

এর পরের মাসের শেষ দিকে ২৯ এপ্রিল রোববার সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জ নাশাগঞ্জ নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আব্দুল ওদুদ নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। নিহত আব্দুল ওদুদ গোলাপগঞ্জের রানাপিং এলাকার বাসিন্দা।

১৯শে মে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবারও সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক রক্তে লাল হয়। উপজেলার এ সড়কে হেতিমগঞ্জ কায়স্থগ্রাম নয়া মসজিদের পাশে প্রাইভেটকার ও সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে এতে ঘটনাস্থলেই পথচারী এমি বেগম (২০) নামের একজন তরুণী নিহত ও শিশুসহ আরও ৩ জন পথচারী গুরুতর আহত হন। নিহত এমি বেগম উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের লরিফর নওয়াগাও গ্রামের জুরু মিয়ার মেয়ে। একই এলাকার আহতরা হলেন- আতাউর রহমানের মেয়ে জেনি আক্তার (২৪) ও সুমাইয়া আক্তার (৬), তুরন মিয়ার ছেলে তাউহিদ আহমদ (৫)।

সর্বশেষ ৭ আগস্ট বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রাকের সাথে সকাল ১০টার দিকে গোলাপগঞ্জের সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের হেতিমগঞ্জ মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজির সংঘর্ষ হয়। এতে সিএনজি চালক সুরুজ আলী (৪০) ও তার বড় ভাই তরমুজ আলী (৪৫) হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হন গোলাপগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান। পরে ৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় তিনিও সিলেটের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

এসব দুর্ঘটনা গাড়ি চালকদের অবহেলা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানোকে দায়ী করেছেন উপজেলার সচেতন মহল। এছাড়া তারা গাড়ির অতি দ্রুত গতি, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকা, চালকের দক্ষতার অভাব, সড়কের বেহাল অবস্থা, গাড়ির ফিটনেস না থাকা এসব কারণেই সড়কে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটছে বলে দাবি করেন।

এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ইলিয়াছ বিন রিয়াছত জানান, সিলেট-জকিগঞ্জ সড়ক বিশেষ করে গোলাপগঞ্জের সীমানায় বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা অদক্ষ চালক ও তাদের বেপরোয়া মনোভাব ও চালকদের প্রতিযোগিতার কারণে ঘটছে। এছাড়াও বাইপাস থেকে গোলাপগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক বিভাজক না থাকাও দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। তিনি বাইপাস থেকে গোলাপগঞ্জ বাজার পর্যন্ত সড়ক বিভাজক নির্মাণের জন্যও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফজলুল হক শিবলি জানান, প্রশাসনের পক্ষে থেকে উপজেলার ভিতরে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কসহ বেশ কয়েকটি স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ির চালকদের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস ও গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের লাইসেন্স বা গাড়ির কাগজপত্র নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত