নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ আগস্ট, ২০১৮ ১৬:৪৬

চা বাগানে পশুর হাট, উচ্ছেদ করলো প্রশাসন

সিলেট নগরীর দলদলি চা-বাগানের ভেতরে অবৈধভাবে বসানো পশুর হাট উচ্ছেদ করেছে সদর উপজেলা প্রশাসন। শনিবার বিকেলে এ হাট উচ্ছেদে অভিযানে নামে সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুম মুনিরার নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়।

দুপুরে দলদলি বাগানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাজির হয়ে হাট সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। এ সময়সীমার মধ্যে অবৈধ  হাট সংশ্লিস্টরা হাট বহাল রাখতে নানা তৎপরতা চালায়।

বিকাল ৪টা পর্যন্ত হাট সরাতে কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ৪টার পর থেকে পুলিশের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। হাটের জন্য নির্মিত বাঁশের প্যান্ডেল ও সামিয়ানাও খুলে ফেলা হয়। এ সময় ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা গরু-ছাগল অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজাম মুনীরা বলেন, 'সদর উপজেলা থেকে ৫টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ অবৈধ হাট বসাতে পারবে না। কয়েকটি হাটের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আজ চা বাগানের ভেতরের হাটটি উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাগানের ভেতরে কোনো অবস্থাতে হাট বসতে দেওয়া হবে না।

জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে দলদলি চা-বাগানের ভেতরে বসানো হয় কোরবানির পশুর হাট। চা বাগানের জমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহারে নিষেধ থাকলেও তা লঙ্গন করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে এ পশুর হাট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাগান কর্তৃপক্ষই অর্থের বিনিময়ে স্থানীয় একটি প্রভাশালী গোষ্ঠিকে পশুর হাটের জন্য বাগানের জমি ভাড়া দেয়। তবে বাগান কর্তৃপক্ষ এমন অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে,  জেলা প্রশাসনই এ হাট বসিয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসন বলছেন- কোনো অনুমতি ছাড়াই এ হাট বসানো হয়েছে।

সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠের পাশেই ১৫ এশর আয়তনের দলদলি চা বাগান। প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠে বসতো পশুর হাট। খেলার মাঠ দখল করে পশুর হাট বসানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে এবছর এই মাঠটি পশুর হাটের জন্য ইজারা দেয়নি সদর উপজেলা প্রশাসন।
খেলার মাঠের হাট না বসায় পাশের চা বাগানের ভেতরেই পশুর বসানো হয়। শুক্রবার রাতে হঠাৎ করে দলদলি চা বাগানের ভেতরের রাবার বাগানের মধ্যে গরুর হাট বসে। বাগানের প্রায় সাত একর জায়গাজুড়ে রাবার বাগানের। এর বহুলাংশ জুড়ে পশুর হাট বসানো হয়।

দলদলি চা বাগান ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাদীন লাক্কাতুরা চা বাগানের আওতাধিন ফাঁড়ি বাগান। সরকারী মালিকানাধীন কোনো চা-বাগানে পশুর হাটের জন্য ইজারা দেয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানান বাগানসংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি। বাগানের মধ্যে খোড়াখোড়ি, পশুবাহি ট্রাকের আসা-যাওয়া ও শ্রমিকদের রান্নাবান্নার আয়োজনের কারণে পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাগান সংশ্লিষ্টরা।

গরুর কারবারিদের হাটে জায়গা করে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত এক যুবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রতিদিন দুই লাখ টাকা করে শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১০ লাখ টাকা চুক্তিতে এই হাট বসানো হয়েছে। বাগান কর্তৃপক্ষই টাকা নিয়ে বাগানের ভেতর হাট বসানোর অনুমতি দিয়েছে।

এ ব্যাপারে দলদলি চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মাহবুবুল আশরাফ বলেন, আমরা এই হাট ইজারা দেইনি। তিনি এ ব্যাপারে লাক্কাতুরা চা-বাগানের ব্যবস্থাপকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।

লাক্কাতুরা চা-বাগানের ব্যবস্থাপক আশরাফুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমরা ইজারা দেইনি, ইজারা কর্তৃপক্ষ দিয়েছে।

এ ব্যাপারে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বলেন, কোনো অনুমতি ছাড়াই চা বাগানের ভেতরে পশুর হাট বসানো হয়েছে। বাগানের জমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার না করতে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও কিভাবে হাট বসলো তা জানাতে লাক্কাতুরা বাগান কর্তৃপক্ষকে নোটিশ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত