হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

১৯ আগস্ট, ২০১৮ ১৬:০৭

বিউটি হত্যা: বাবা ও চাচাসহ তিনজন অভিযুক্ত

আদালতে চার্জশীট দাখিল

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে চাঞ্চল্যকর বিউটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দায়েরকৃত মামলায় নিহতের বাবাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করেছে পুলিশ।

চার্জশীটে বিউটির গ্রাম সম্পর্কের চাচা ময়না মিয়াকে এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে  এবং কামাল মিয়াকে ভাড়াটে খুনি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া বিউটির বাবা সায়েদ আলীকে এই হত্যাকান্ডের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ওসি শাহ আলম শনিবার চিফ জুটিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। রবিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা ।

রবিবার দুপুরে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা জানান,বিউটি হত্যাকাণ্ড দেশে বিদেশে একটি আলোচিত ঘটনা। বিউটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারাদেশে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ হয়েছে কিন্তু সবার ধারণা বাবুলই মূল অভিযুক্ত। তবে পুলিশ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করেছে।

তিনি আরও বলেন,‘পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিউটি হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করে প্রমাণ করেছে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পায় না। এরইমধ্যে সায়েদ আলী ও ময়না মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর আগে বাবুল ও তার মা কলমচানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২১ জানুয়ারি বিউটি আক্তারকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুল মিয়াসহ তার লোকজন। তাকে অপহরণ করে বিভিন্ন স্থানে রেখে ধর্ষণ করে বাবুল। এ ঘটনার প্রায় ১ মাস পর বাবুল মিয়া বিউটিকে তার বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায়। পরে ১ মার্চ বিউটি আক্তারের বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য কলমচানের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। এরপর ১৬ মার্চ বিউটি নানির বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরদিন ১৭ মার্চ বিউটি আক্তারের লাশ স্থানীয় হাওর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এদিকে বিউটিকে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগে পরদিন তার বাবা বাদী হয়ে বাবুল মিয়াসহ ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ পুলিশ বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান ও সন্দেহভাজন হিসেবে একই গ্রামের ঈসমাইল নামের একজনকে আটক করে। এই ঘটনার পর ২৯ মার্চ হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসম শামছুর রহমান ভূইয়াকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। এরপর ৩১ মার্চ সিলেট থেকে বাবুলকে আটক করে র‌্যাব। পরদিন বাবুল মিয়াকে পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ নিশ্চিত হয় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল মিয়া জড়িত নয়।

এরপর থেকে পুলিশ লাখই উপজেলার বিউটির নানী বাড়ি গুনিপুর গ্রামে গিয়ে জানতে পারে হত্যাকাণ্ডের আগের দিন রাতে বিউটিকে তার বাবা সায়েদ আলী ও চাচা ময়না মিয়া নিয়ে আসে। এরপর পুলিশ ৪ মার্চ ঘাতক ময়না মিয়াকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। পরদিন ৬ মার্চ রাত ৯টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। পরদিন বিউটির বাবা সায়েদ আলী নিজেও হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত