নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:৫৯

মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ ঢেকে আ. লীগ নেতাদের পশুর হাট

সিলেটের টিলাগড় পয়েন্টে একাত্তরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় অবৈধভাবে মৌসুমি পশুর হাট বসিয়েছেন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। অবৈধ এ হাটে অনেক ব্যবসায়ীকে জোর করে গরু নিয়ে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে এই হাটে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়।

এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীতে অবৈধ পশুর হাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধের জায়গা দখল করে প্রকাশ্যে পশুর হাট বসানোর পরও প্রশাসনের তরফে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।

টিলাগড় পয়েন্টের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি ও নগরীর শিবগঞ্জ-টিলাগড়ের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা এই হাট বসিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ইতিমধ্যে অবৈধ পশুর হাটের ব্যাপারে প্রশাসনের অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে। কেউ অবৈধ হাট বসালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, ২০১০ সালে নগরীর টিলাগড়ে ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ কলেজের জায়গা অধিগ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। নগরীর বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান রাজন দাস স্মৃতিস্তম্ভকে ঘিরে দৃষ্টিনন্দন একটি ডিজাইন করে দেন। স্থপতি রাজন দাস জানান, দেশের অনেক জেলায় এ ধরনের স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণকাজ শেষ হলেও সিলেট তা হয়নি। প্রশাসনের অনুরোধে এই স্মৃতিস্তম্ভকে ঘিরে একটি ডিজাইন করে দিয়েছিলাম, তাও বাস্তবায়িত হয়নি।

২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেট সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান স্মৃতিস্তম্ভ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা সংবলিত স্তম্ভ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। এই স্মৃতিস্তম্ভের জায়গায় বিভিন্ন সময়ে কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া বছরের অন্য সময় এই জায়গায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এসব নিয়ে সাধারণের মধ্যে হতাশা থাকলেও এবার পশুর হাট বসানোর পর তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভের জায়গা দখল করে এভাবে অবৈধ পশুর হাট বসানোকে নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নামের তালিকা সংবলিত এই স্মৃতিস্তম্ভ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রত্যেক মানুষের জন্য আবেগের বিষয়। এই স্মৃতিস্তম্ভের জায়গা দখল করে স্তম্ভকে আড়াল করে পশুর হাট কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন, অবৈধ এই হাট বসানোর ফলে সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এবার নিয়ে টানা চারবারের কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের নেতৃত্বেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভের জায়গা দখল করে অবৈধ পশুর হাটটি বসানো হয়েছে বলে টিলাগড়ের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

সরেজমিন গিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজনকে হাটের নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ আরেক নেতা নেপথ্যে মদদ দেওয়ায় প্রশাসন নিশ্চুপ বলে অভিযোগ রয়েছে। আজাদুর রহমান আজাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. জাকারিয়া জানিয়েছেন, এবার নগরীতে তারা কোনো পশুর হাট ইজারা দেননি। নগরীর কাজীরবাজারে একটি স্থায়ী পশুর হাট রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট সদর উপজেলার পক্ষ থেকে অস্থায়ীভাবে নগরীর উপকণ্ঠে কয়েকটি পশুর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে। এই হাটগুলো শিবের বাজার, কুড়িরগাঁও (ইসলামগঞ্জ বাজার), সাহেব বাজার সুন্নিয়া হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার মাঠ, লালাবাজার, কামালবাজার, জালালপুর, হাজীগঞ্জ বাজার ও রাখালগঞ্জ বাজারে বসেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত