দেবকল্যাণ ধর বাপন

২০ আগস্ট, ২০১৮ ০১:১৭

গরুর দাম চড়া, হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি

সিলেটের পশুর হাট

সিলেটে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতে শুরু করেছে পশুর হাট। এবার হাটগুলোতে দেশি গরুর সরবরাহ বেশি। তবে দামও চড়া। ফলে সাধের সাথে সাধ্যে মিলছে না ক্রেতাদের। এতে করে এখন পর্যন্ত আশানুরূপ বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন হাটে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতারা।

ক্রেতাদের মতে, গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর বাজারের গরু ছাগলের দাম অনেক বেশি। তারা বলছেন, গত বছর যে গরু ৫০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে এবার সে গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে ৮০ হাজার। এক লাখের গরুর দাম চাওয়া হচ্ছে দেড় লাখ টাকা। ফলে ক্রেতারা বাজার ঘুরেও গরু কিনতে পারছেন না।

দাম বাড়ার কথা স্বীকার করে পশু বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গতবারের তুলনায় এবারের দামটা একটু বেশি। এবার ভারতীয় গরু কম আসায় দেশীয় গরুই বাজারে বেশি। ফলে দাম একটু বেড়েছে। এতে দেশিয় খামারিরা লাভবান হবেন বলে জানান তারা।

প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর সিলেটের উপ পরিচালক ডা. গিয়াস উদ্দিন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, গতবছর কোরবানির জন্য সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১ হাজার গরু বিক্রি হয়েছে । এবছর ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক খামারের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬ শত ১২ টি। যাতে ৩ লাখ ৩৬ টি কোরবানির পশু রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে আমদানিকৃত পশু।

রোববার সিলেট নগরীর কাজির বাজার ও শহরতলির কয়েকটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। সবক'টি হাটে ক্রেতা সমাগম থাকলেও এখনো পুরোপুরিভাবে শুরু হয়নি কেনাবেচা। তবে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সিলেটে ঈদের এক-দুই দিন আগে জমে উঠে কোরবানির পশুর হাট। তাই বিক্রেতারা আশা করছেন সোমবার ও মঙ্গলবারই সবচেয়ে বেশি পশু বেচাকেনা হবে।

কাজির বাজারে কোরবানির জন্য পশু কিনতে আসা সিলেট নগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাকিব আহমদ বলেন, এখানে দুই-তিন ঘণ্টা ধরে হেটেই চলেছি। গরুর দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। তাই আর কেনা হয়ে উঠছে না। যে গরুটাই পছন্দ হয় না কেন সেটির দাম ৮০ হাজার টাকার কমে নয়। অথচ গতবার একই রকম গরু কিনেছি ৫০ হাজার টাকায়।

একইভাবে অভিযোগের সুরে আরেক ক্রেতা মুনতাহার জানান, এ বাজারে এসে ৮৭ হাজার টাকায় একটি গরু কিনেছেন। তবে গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি।

তিনি বলেন, গতবার ৮৫ হাজার টাকায় এবারে চেয়েও বড় গরু কিনেছিলাম। কি আর করা এরপরও টেনশন মুক্ত থাকতে আগেই কিনে নিলাম।

এবারে দাম বেশি কেন জানতে চাইলে কাজির বাজার হাটে পাঁচটি গরু নিয়ে আসা মোবারক মিয়া বলেন, তিনদিন হলো এ হাটে এসেছি। একটি গরু পৌনে দুই লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এখনো চারটি গরু আছে। গরু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যায় যা কিছু দরকার তার সব কিছুরই দাম বেশি। তাহলে আমারা কম দামে কিভাবে গরু বিক্রি করব?

ঝিনাইদহ থেকে আসা আরেক ব্যাপারী বলেন, এক মাস আগে গ্রামের হাট থেকে গরুগুলো কিনে রেখেছি। এরপর তাদের খাইয়েছি, সিলেট নিয়ে এসেছি ৩দিন হয়। এখানে আসা ও গরুর খাওয়া, আমাদের থাকা-খাওয়া, রাস্তায় চাঁদা দেয়া এসব মিলিয়ে প্রতিটি গরুর পিছনে গড়ে সাত থেকে দশ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ পড়েছে। ফলে কেনা দামের সঙ্গে আরও দশ থেকে বারো হাজার টাকা যুক্ত করলে এবং লাভ করতে হলে দাম তো বেশি হবেই।

এ ব্যাপারে কাজির বাজার পশুর হাটের ব্যবস্থাপক সাহাদাত হোসেন লুলন সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে সিলেটে গরু নিয়ে আসেন বেপারিরা। গরুবাহী ট্রাক বিভিন্ন সড়ক দিয়ে প্রবেশ করার পরপরই মোটরসাইকেল দিয়ে ট্রাককে ঘিরে ধরে অথবা বিভিন্ন লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে হয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অবৈধ বাজারে অথবা কোন কোন বেপারির কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তাই যেসব গরু আমাদের মতো বৈধ হাটে আসছে তারা তাদের পশুর দাম ছাড়তে চাইছেন না। তাই এবার পশুর বাজার একটু চড়া।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত