জামালগঞ্জ প্রতিনিধি

১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৬:২৬

পল্লী বিদ্যুতের ‘উদাসীনতায়’ জামালগঞ্জে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের বেতাল আলীপুর গ্রামের এক স্কুলছাত্র পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানার তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে।

৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে তার নিজ বাড়ির সামনের ডোবার পানিতে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত স্কুল ছাত্রের নাম সাবাজ মিয়া (১৬)। সে গ্রামের সামছুল আলমের ছেলে ও জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

ছোট ভাইকে উদ্ধার করতে গিয়ে আহত হয়েছেন তার আপন দুই বড় ভাই। আহতরা হলেন, সুরন মিয়া (২৫) ও রেফাজুল হক (২২)। তারা গত ৬ দিন ধরে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় বেতাল আলীপুর গ্রামের নিজ বাড়ির সামনের ডুবায় নৌকা নিয়ে যান স্কুল ছাত্র সাবাজ মিয়া। হঠাৎ ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে পড়ে যাওয়ার সময় তিনি খুঁটির টানার তারে ধরেন। কিন্তু খুঁটির টানার তারে বিদ্যুৎ থাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পানিতে পড়ে যান সাবাজ মিয়া। ছোট ভাইকে উদ্ধার করতে বাড়ি থেকে বড় দুই ভাই সুরন ও রেফাজুল এগিয়ে গেলে তারাও বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়েন ও কোনরকমে বাড়ির কাছে ফিরেন। পরে গ্রামবাসী বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে লাইন বন্ধ করে নিহত সাবাজ মিয়ার লাশ উদ্ধার করেন ও আহত দুই ভাইকে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

ছোট ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যু ও দুই ছেলে আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় থাকায় তাদের পরিবার চরম দুর্যোগে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য ছমির আলীসহ গ্রামের লোকজন।

জামালগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফুর রহমান বলেন, ১০ম শ্রেণির ছাত্র সাবাজ মিয়ার মৃত্যু খুবই মর্মান্তিক। তার পরিবারটি দিনমজুর। সে মারা গেছে, একই ঘটনায় তার আপন বড় দুই ভাই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমরা শুনেছি পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানার তারে জড়িয়ে স্কুল ছাত্র সাবাজের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার এই মৃত্যুর ঘটনা খুব বেদনাদায়ক। পল্লী বিদ্যুতের খামখেয়ালিপনা ও উদাসীনতার কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য বেতাল আলীপুর গ্রামের বাসিন্দা ছমির আলী বলেন, সাবাজ মিয়া বাড়ির সামনের ডোবায় নৌকা দিয়ে বন ফেলতে গিয়েছিল। এ সময় পল্লী বিদ্যুতের খুঁটির টানার তারে জড়িয়ে পানিতে পড়ে সে মারা গেছে। বিদ্যুতের খুঁটির টানায় বিদ্যুৎ না থাকলে তার অকাল মৃত্যু হতো না। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে লাইন বন্ধ করার পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তার বড় দুই ভাই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। দরিদ্র পরিবারের একজনের মৃত্যু ও দুই জন আহত হওয়ায় পরিবারটি খুব কষ্টে পড়েছে।

জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, বৈদ্যুতিক শকে আহত হয়ে বেতাল আলীপুর গ্রামের দুই ভাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সুস্থ হতে তাদের আরও কয়েকদিন লাগবে।

সুনামগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার অখিল কুমার সাহা বলেন, শুনেছি বিদ্যুতের তারে লেগে নৌকা থেকে পানিতে পড়ে গিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য বলা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত