সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৮:০৬

‘পরিবেশ দূষণকারীদের শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, জেলে ঢুকাতে হবে’

শিল্পায়নের নামে যারা পরিবেশ দূষণ করছেন, মানুষের জানমালের ক্ষতি করছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাদেরকে শুধু আর্থিক জরিমানা নয়, জেলে ঢুকাতে হবে। তাহলেই তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। আইন ভঙ্গকারী তিনি যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ মিলনায়তনে জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, নদীর জমি নদীরই থাকবে। সেটাকে লালন করতে হবে। আমরা শুনলাম জেলায় ৫১টি নদী ছিল। সেই নদীগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে হবে। পুরাতন খোয়াই নদী উদ্ধার, খোয়াই নদীর তীর দখলমুক্ত করে জেলার নদ-নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশনা দেন। মার কোম্পানির দূষণের কথা শুনে তিনি কোম্পানিটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে পরামর্শ দেন।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মো. আলাউদ্দিন ও শারমিন মুর্শিদ।

বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কুদ্দুছ আলী সরকার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর জেলা সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকরামুল ওয়াদুদ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক, প্রেসক্লাব সভাপতি মোহাম্মাদ শাবান মিয়া, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মমিন, বাপা সদস্য এডভোকেট বিজন বিহারী দাস, এডভোকেট চৌধুরী আবু বক্কর সিদ্দিকী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মশিউর রহমান শামিম প্রমুখ।

সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নূরুল ইসলাম, পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম এবং বাপা হবিগঞ্জের সেক্রেটারি ও খোয়াই রিভার ওয়াটারকিপার তোফাজ্জল সোহেল মাল্টিমিডিয়া প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন।

এর আগে দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মাধবপুরে সোনাই নদী দখল করে স্থাপনা নির্মাণ, শিল্পবর্জ্য দূষণে সুতাং নদী, সংশ্লিষ্ট খাল দখল-দূষণ সরজমিনে পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে বাপা হবিগঞ্জের সভাপতি অধ্যাপক ইকরামুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে নদীতে বহুতল স্থাপনাসহ দখল, সুতাং নদীতে কলকারখানা বর্জ্য নিক্ষেপ করে নদীটি দূষণকারীদের  বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন।

বাপা সেক্রেটারি তোফাজ্জল সোহেল ‘খোয়াই নদী ও শিল্পবর্জ্য সমস্যা’ শীর্ষক প্রবন্ধে খোয়াই, সুতাং ও অন্যান্য নদনদীর চিত্র তুলে ধরেন। খোয়াই নদী রক্ষায় ৫টি দাবি, শিল্পবর্জ্য দূষণ প্রতিরোধে প্রস্তাবসহ শহরের জলাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।

তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কোনভাবেই কলকারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য পরিশোধন নিশ্চিত না করে কারখানার বাইরের এলাকায় যে কোন উপায়ে এবং কারখানার অভ্যন্তরে ভূগর্ভস্থ পানি দূষণ করতে পারে না, এটি দেশের প্রচলিত আইন ও বিধি পরিপন্থী। কিন্তু হবিগঞ্জে গড়ে উঠা কলকারখানাগুলোর অপরিশোধিত বর্জ্য খাল-বিল, নদী-নালায় ফেলে সুতাং নদীসহ পরিবেশ দূষণ করা হচ্ছে, যা চরমে পৌঁছেছে। পরিবেশবিমুখ শিল্পায়ন দেশের উন্নয়ন নয় বরং ধ্বংস ডেকে আনছে। অপরিকল্পিত কলকারখানা গড়ে উঠার চলমান প্রক্রিয়া এখনই বন্ধ করা না হলে হবিগঞ্জে ব্যাপক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত