নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৮:৩৬

আইয়ুব খানকে জুতা ছুঁড়েছিলেন তিনি

অনেকদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর রোববার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ আজিজুর রহমান। ছাত্রাবস্থায়ই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া এই বীর মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

রোববার তাঁর মৃত্যুর খবরে অনেকেই ফেসবুকে শাহ আজিজের নানা কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণে করে তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করেন।

প্রবাসী সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরী ফেসবুকে লিখেন-
স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে জুতা ছুড়ে দিয়েছিলেন। যে প্রজন্ম আমাদের দেশের অস্তিত্বের সংগ্রামে নিজেদের একাত্ম করে দিয়েছিলেন, তিনি সেখানে ছিলেন। ছিলেন অগ্রভাগে।
তিন দশকের লড়াই সংগ্রামে কাছে থেকে দেখেছি।

সততা আর বিনয় দিয়ে যিনি আমার মতো অগুনতি জনকে ঋদ্ধ করে গেছেন।
অঞ্চল কাঁপানো নেতা, নিজেকে নিঃশেষ করে দেয়া জননেতাদের শেষ প্রতিচ্ছবি শাহ আজিজুর রহমান।
কিছুক্ষণ আগে চলে গেছেন। একেবারেই চলে গেছেন।
এইমাত্র জানা গেলো।
সেলাম লিডার!
অন্তিম সেলাম!
আর কেউ ভরাট গলায় ডাক দিয়ে জড়িয়ে ধরবে না। বলবে না, তোমাদের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা!

ইব্রাহিম চৌধুরীর স্ট্যাটাসেই মুনিরা পারভিন নামের আরেকজন মন্তব্য করেছেন-
তাঁর স্পষ্টবাদী স্বভাবের জন্য তিনি পাগলা আজিজ নামেও পরিচিত ছিলেন l তিনি সম্পর্কে আমার নানা হন ছোটবেলা থেকে তাকে দেখে আসছি ,আমাদের বাসায় সবসময় আসতেন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর কথা বলতেনl কেউ কিছু জানতে চাইলে তাকে জিজ্ঞেস করলেই হতো তিনি ইতিহাসসহ সেই মানুষের চৌদ্দগুষ্ঠির খবর বলে দিতেন।
বড় ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। স্পষ্টবাদী, নির্ভীক এই মানুষটিকে আল্লাহ জান্নাত দান করুন।

প্রবীণ সাংবাদিক আল আজাদ লিখেন-
আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রবীণ রাজনীতিবিদ শাহ আজিজুর রহমান আর নেই।

তরুণ লেখক জুয়েল রাজ শাহ আজিজের স্মৃতিচারণ করে ফেসবুকে লিখেছেন-
এক কিংবদন্তীর চির প্রস্থান। বাংলাদেশের রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সিলেট অঞ্চলের ইতিহাস শাহ আজিজুর রহমানের নাম চির উজ্জ্বল থাকবে। ৬৯ এর আন্দোলনে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পাকিস্তানি দানব আইয়ুব খানের মঞ্চে ছুড়ে দিয়েছিলেন পায়ের জুতো।

স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা। বালাগঞ্জের সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। সিলেট ২ আসন, বালাগঞ্জ বিশ্বনাথের সাবেক এমপি। কিন্তু ছিলেন অতি সাধারণ। গণ মানুষের নেতা।

স্কুল পাশ করা কিশোর আমরা। মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমাদের জন্য ও তাঁর দরজা ছিল খোলা। এম পি হিসাবে কোন হাবভাব ছিল না। যখন ইচ্ছা চলে গেছি। তাঁর আর্থিক অস্বচ্ছলতা সর্বজন বিদিত ছিল। চাইলেই হয়তো কোটি কোটি টাকা, বাড়ি গাড়ির মালিক হতে পারতেন।

মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসার শিক্ষা তাঁর কাছে আছে ঋণ। তিনি শিখিয়েছিলেন রাজাকার আলবদর, যুদ্ধাপরাধীদের ঘৃণা করা। আজকে রাজাকার পরিবারের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু শাহ আজিজ নিজে যেভাবে এদের ঘৃণা করতেন তেমনি আমাদের শিখিয়েছিলেন ঘৃণা করতে। রাজাকার পরিবারের কেউ তাঁর কাছে ভিড়তে পারে নাই সে সময়। মুখের উপর বলে দিতেন, তোমার অমুক রাজাকার, তুমি আমার এখানে কেন??

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের প্রকাশনা করব টাকা নেই, উনার শালার প্রেস ছিল রাজা ম্যানশনে সেখানে প্রিন্ট করতে দিলাম। টুকটাক যারা চাঁদা দিয়েছিলেন সেটা দিলাম, বাকীটা তাঁর নামে বাকীর খাতায় রেখে আসলাম।

সৌভাগ্য হয়েছিল তার সান্নিধ্য পাওয়ার। বালাগঞ্জ বিশ্বনাথের বহু প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার সঙ্গী হওয়ার। কোন এক অজানা কারণে ২০০১ সালের নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর, অনেকটাই অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন শাহ আজিজুর রহমান। সম্প্রতি সময়ে কিছুটা সরব হয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
মাঝে মাঝেই বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন।
চিরচেনা সেই টুপি আর গোঁফ.....
আমাদের কিশোর বয়সের রাজনৈতিক আইডল। সব কিছুর ঊর্ধ্বে ভালো থাকুন। চেতনার মৃত্যু নেই।

উল্লেখ্য, রোববার সকাল ৮টার দিকে সিলেট নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শাহ আজিজুর রহমান।। গত কয়েকদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বেশ কিছু দিন ধরে ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন শাহ আজিজ।

মুক্তিযোদ্ধা শাহ আজিজুর রহমান ১৯৯৬ সালে বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ, ওসমানীনগর নির্বাচনী এলাকা থেকে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে মহকুমার ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি।

রোববার দুপুরে মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর গ্রামের বাড়ি ওসমানীনগরের উমরপুর ইউনিয়নে। সেখানকার খুজগীপুর স্কুল মাঠে ২য় জানাযা শেষে তাকে সমাহিত করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত