নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ১৯:৩৩

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী হেনস্তার অভিযোগ

দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও সঙ্কট নিরসনের দাবি

সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট নিরসনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় চল্লিশজন শিক্ষার্থী।

এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক উদ্দিন তাজের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হেনস্তার অভিযোগ এনে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দুই ছাত্রের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করার ঘোষণা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪তম ব্যাচের এমবিএ শিক্ষার্থী পল্টু কুমার রায় বলেন, বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। প্রবেশদ্বার বন্ধ করে কোনো নোটিশ ছাড়া অঘোষিত ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাধারণ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারছে না। আমরা ক্যাম্পাসের সামনে বসতে চেয়েছি কিন্তু পুলিশ আমাদের তুলে দিয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে এই শহিদ মিনারে জড়ো হয়েছি।

পল্টু আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাখবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটার সমাধান দিবে কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখন নেই। ৪৮ ঘণ্টার ভিতর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করা হলে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে এবং এর দায় ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে।

বহিষ্কৃত ছাত্র ফাহিম আহমেদ চৌধুরী ও উত্তম সরকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, প্রথমত জনসংযোগ কর্মকর্তাকে দিয়ে আমাদের উপর হামলা করা হয় এবং পরে আবার আমাদেরকেই বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ আমরা কার কাছে যাবো।

তাঁরা আরো বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও সংকট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আন্দোলন করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত জুন মাসে ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে একটি রেড এলার্ট জারি করে। সেজন্য গত কিছুদিন আগে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে আন্দোলন শুরু করে।

তারা বলেন, এসময় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত সংগ্রহ করে জরিপ করি। সেই জরিপে দেখা যায় প্রায় ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সংকট নিরসনের কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। এই জরিপের ভিত্তিতে আবারো আন্দোলন নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত দুইদিন আগে ক্যাম্পাসে ভারপ্রাপ্ত ভিসির কাছে স্মারক লিপি দিয়ে পাঁচ দফা দাবী পেশ করা হয়। সেসময় ভিসি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসবেন।

তবে দুইদিন পেরিয়ে গেলেও তিনি কোনো সিদ্ধান্তে না আসলে শিক্ষার্থীরা এই বিষয়টি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) আবারো ভারপ্রাপ্ত ভিসির সঙ্গে দেখা করতে যায়। তখন ভিসির রুমে জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক উদ্দিন তাজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেন। ভিসির রুমের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের ধাক্কানো শুরু করে। তিনি ধাক্কা দিতে শিক্ষার্থীদের বাহিরে নিয়ে আসেন এবং সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে তাদের উপর হামলা করান। ওইদিনই হামলার শিকার ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। যে দুইজন এই লিখিত অভিযোগ করেছেন তাদেরকেই বহিষ্কার ও থানায় জিডি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

এমবিএ ২৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কাশেম মিয়া বলেন, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভিসি, প্রো-ভিসি, ট্রেজারারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ছাত্ররা বারবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবী উত্তাপন করেছে। অবিলম্বে ভিসি নিয়োগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সংকট নিরসন করার জন্য বার বার কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়া হয়। কিন্তু কখনোই এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয়নি। বার বার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এখন প্রতিশ্রুতি না দিয়ে হামলা বহিষ্কার করা হচ্ছে। কোনো প্রকার কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া এরকম অবৈধ সিদ্ধান্তে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের আতঙ্কিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরতন্ত্র চলছে।

এ ব্যাপারে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা তারেক উদ্দিন তাজের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বারবার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত