বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০৬

বিয়ানীবাজারে দুই স্কুলে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে দুই শিক্ষার্থী আহত

কিছুদিন আগেই বিয়ানীবাজার পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহদির এক চোখ হারাতে হয়েছে। এবার এক দিনের ব্যবধানে উপজেলার পৃথক দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের বেত্রাঘাতে আহত হয়েছে আরও দুই শিক্ষার্থী।

আহত দুই শিক্ষার্থী মাথায় ও শরিলে আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

জানা যায়, বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুহাদা বেগমকে শ্রেণি কক্ষে সোমবার দুপুরে পিটিয়ে আহত করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক মকরম আলী। সুহাদার মাথা বেত দিয়ে আঘাত করা হয় বলে তার পরিবার থেকে জানানো হয়।

শিক্ষকের বেত্রাঘাতে আহত সুহাদাকে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া। সন্ধ্যার দিকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে অভিভাবকরা তাকে সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন অভিভাবকরা। সেখানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিক্ষার্থী সুহাদা বেগম পৌরসভার সুপাতলা গ্রামের ইসলামুল হক ইসলামের মেয়ে।

অভিভাবক আসাদ উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে বেত রাখা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হলেও শিক্ষকরা সেটি মানছেন না। যার কারণে শিক্ষার্থীদের আহত হয়ে হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে হচ্ছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক মকরম আলী’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করেন এবং এনিয়ে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়া উদ্দিন আহমদ বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। আমি ঢাকা থেকে ফিরে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার নেয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

এদিকে গত রবিবার বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষা আল আমিন আহমদ মামুনকে বেত্রাঘাত করে আহত করেছেন বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মুছব্বির আলী। সহপাঠীর সাথে হাতাহাতির ঘটনার জের ধরে তাকে পিটিয়ে আহত করেন ওই শিক্ষক। এ ঘটনায় সোমবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

শিক্ষার্থী আল আমিন আহমদ মামুনের বাড়ি উপজেলার লাউতা ইউনিয়নের আষ্টসাঙ্গন এলাকায়।

তার বড়ভাই মারুফ আহমদ বলেন, মামুন বিদ্যালয় থেকে কেঁদে বাড়ি আসে। তার শারিরীক অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বিদ্যালয়ের সভাপতি কামিল আহমদকে বিষয়টি অবহিত করেছি। কিন্তু দুইদিন পেরিয়ে গেলেও এ বিষয়ে তারা কোন পদক্ষেপ নেননি।

জলঢুপ দ্বি-পাক্ষিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল উদ্দিন এ ঘটনা অস্বীকার করে বলেন- তাঁর বিদ্যালয়ে এ রকম কোন ঘটনা ঘটেনি।

তবে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক মুছব্বির আলী ঘটনার জন্য অনুতপ্ত জানিয়ে শিক্ষার্থী মামুনের অভিভাবককের সাথে দেখা করার কথা জানান। তিনি বলেন, এভাবে মারা আমার ঠিক হয়নি। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি কামিল আহমদসহ কয়েকজন শিক্ষক সাথে মামুনের বাড়ি গিয়ে তাকে দেখে আসি।

তিনি জানান, এ ঘটনার বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবহিত রয়েছেন। তাঁর পরামর্শে আমি শিক্ষার্থীর বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করি।

জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী আরিফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে বেত রাখা আইনীভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে। তারপরও এখানে (বিয়ানীবাজার) এ বিষয়টি ঘটছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করছেন। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) একটি অভিযোগ পেয়েছি। দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে আলাপ করে অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সর্তক করে দেয়া হবে। যাতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত