নিজস্ব প্রতিবেদক

১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:২৩

নির্বাচন এলেই আমি রাজাকারের ছেলে হয়ে যাই

অভিযোগের জবাবে সাংসদ কয়েস

আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও বাবার পরামর্শ নিয়ে যুদ্ধে গেছেন।- এমনটি দাবি করে সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের অভিযোগ- নির্বাচন এলেই আমি রাজাকারের ছেলে হয় যাই। আমার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

নিজের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে এমনটি দাবি করেন মাহমুদ উস সামাদ কয়েস।

সোমবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ অভিযোগ করেন, সাংসদ কয়েসের বাবা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েসও পাকিস্তানবাহিনীকে সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না করারও অভিযোগ আনেন এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

এ প্রসঙ্গে মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, আমার বাবার নাম দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। এর বাইরে উনার কোনো নাম নেই। থাকলেও ওই মানুষকে চিনি না। অনেক মুক্তিযোদ্ধারাও বাবার পরামর্শ নিয়ে যুদ্ধে গেছেন। তিনি স্থানীয় মাইজগাও ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন। রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান থাকাকালে অবসরে যান। তাছাড়া আমার এক ভাই দেশে ও দুই ভাই বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কাজ করেছেন। আমিও ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানা স্কুলে ছাত্রলীগ করা কালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলাম।

কয়েস বলেন, এই বিরোধীতাকারীরা ৯৬, ২০০১, ২০০৮ সালে নির্বাচনে আমাকে ভোট দেয়নি। আগামিতে ভোট দেবে না। তাদেরকে আমার সঙ্গে দেখলে প্রকৃত নৌকাপ্রেমি ভোটাররা আমার সঙ্গ ত্যাগ করবে। আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিলেও এদের সমর্থন ও ভোট তার কাম্য নয়। প্রত্যেক নির্বাচন সামনে রেখে এই চাটুকাররা টাকা খাওয়ার জন্যে উচ্চ মূল্যে মূল্যায়িত হওয়ার জন্য এমন অভিনয় করেন

উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে আমার চেয়ে বেশি উন্নয়ন সিলেট-৩ আসনে কেউ করেনি। তাঁর দাবি, অবকাঠামো উন্নয়নে দক্ষিণ সুরমায় ও বারাগঞ্জের একাংশে ৬০ ভাগ, ফেঞ্চুগঞ্জ ৪০ ভাগ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বিশেষ করে বিএনপি-জাপা-জামাত অধ্যুষিত দক্ষিণ সুরমায় নৌকাকে বিজয়ী করে তিনি এই আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছেন। যে আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা কেউ বিজয়ী হতে পারেননি।

সোমবার দুপুরে নগরীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে কয়েসের নির্বাচনী এলাকার উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাহিদ অভিযোগ করেন, কয়েসের ব্যক্তিগত সম্পত্তি পাহাড়সম হলেও নির্বাচনী এলাকা রাস্তাঘাটের বেহাল দশা। একমাত্র ৫০ শয্যার হাসপাতালটিও পূর্ণাঙ্গরূপ পায়নি।

আবু জাহিদ বলেন, এমপি মাহমুদ উস সামাদ নিজের বলয় সৃষ্টির জন্য আজ্ঞাবহ লোকদের নিয়ে চলায় জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। আধিপত্য ধরে রাখতে দলীয় প্রতিনিধিত্বে হাইব্রিডদের জায়গা করে দিয়েছেন। আর বঞ্চিত হয়েছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা। যে কারণে সাংগঠনিক অবস্থাও করুন।

লিখিত বক্তব্যে আবু জাহিদ বলেন, সরকার দলীয় এই এমপির মদদে নাশকতাকারীদের আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। তার কারণে স্থানীয় নির্বাচনে আ'লীগ প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে। জামায়াতের উপজেলা চেয়ারম্যানরা নির্বাচিত হন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এমপির মদদে সরকার বিরোধীরা উন্নয়ন বরাদ্দের টাকা লুটপাট করেছে। দক্ষিণ সুরমায় ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগটিও ভেস্তে গেছে তার অদক্ষতায়। গত ২৮ আগস্ট উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় এমপি কয়েস উপস্থিত হয়ে বলেন, নির্বাচনের পূর্বে কোন উন্নয়ন প্রকল্প উপজেলা পরিষদ থেকে গ্রহণ করা যাবেনা।

আবু জাহিদ বলেন, এমপি সামাদের বাবা মৃত দেলোওয়ার হোসেন উরফে ফিরু রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং অমানুষিক নির্যাতন করেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর লেখনীর তথ্য তুলে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার ক্যাপ্টেন আনসারীর জলপাই রংয়ের জিপ গাড়ি চড়ে ফেঞ্চুগঞ্জের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়াতেন মাহমুদ উস সামাদ। তিনি নির্যাতনের ছক তৈরি করেছিলেন স্থানীয়ভাবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রইছ আলী, মোগলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সাইস্তা, আওয়ামী লীগ নেতা জামাল উদ্দিন, তপন চন্দ্র পাল, জেলা পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম ইছন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা পান্নাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত