হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

১৭ অক্টোবর, ২০১৮ ১৫:৪৬

‘ঢাকে বোল তোলার নেশায় এখনও এই পেশায় টিকে রয়েছি’

দেশের সাত প্রান্ত থেকে আসা সাতজন ঢাকির শব্দের মূর্ছনায় বিমোহিত হচ্ছেন পূজা মণ্ডপে আসা দর্শনার্থীরা। ঢাকিদের হাতের যাদুকাঠির ছোঁয়ায় ঢাকের মরা চামড়া থেকে উৎপন্ন বোলে শরতের আকাশকে মুখরিত করে তোলে। ঢাকিদের সাথে আছেন কয়েকজন সানাই বাদক।  

ঢাকিদের এই ব্যতিক্রমী বাজানো দেখতে শ্রীমঙ্গলের সবুজবাগ যুব দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের মণ্ডপের ভিতরে মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সপ্তমীর সন্ধ্যায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছেন ঢাকিদের সেই ঢাক বাজানো।

ঢাক বাজিয়ে পূজা-পার্বণ ও উৎসবকে যারা প্রাণবন্ত করেন, তাঁরা কিন্তু মোটেও আজ আর এই পেশায় সচ্ছল নন। তাদের দাবি, একমাত্র পূজার সময় ছাড়া ঢাকিদের কোনও কদর নেই। যে কারণে বর্তমান প্রজন্ম এমনকি খোদ ঢাকিদের পরিবারের ছেলেরাও কেউ আর তাতে আগ্রহ দেখান না। ফলে ঢাক ও ঢাকিদের সংখ্যা দিনতো দিন কমেই চলেছে। হারিয়ে যেতে বসা ঢাক ও ঢাকিদের সম্মান জানাতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সবুজবাগ যুব দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদ।

এই ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনে খুশি ঢাকিরাও। মানিকগঞ্জ থেকে আগত ঢাকি গোঁসাই দাস বলেন, ‘‘ঢাকে কাঠি দিয়ে বোল তোলার নেশায় এখনও এই পেশায় নিজেকে টিকিয়ে রেখেছি।’’

তিনি আরও জানান, পূজার ক’টা দিন বাদে অন্য সময়ে তাঁদের কেউ রিকশা চালান বা অন্য কোনও কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। ঢাকের তালে কোমর নাচালেও এখনকার ছেলেরা কেউ আর ঢাকি হতে চান না। কারণ ঢাকিরা সেভাবে শিল্পীর মর্যাদা পায় না। এই পরিস্থিতিতে সবুজবাগ যুব দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের এই উদ্যোগ খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি জানান।

সেখানেই কথা হয় সিলেট এমসি কলেজের শিক্ষার্থী প্রত্যাশা দত্তের সাথে। তিনি বলেন "আবহমান কাল থেকেই দুর্গাপূজার সাথেই ঢাকের বাজনার সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। প্রত্যেকবার সিলেট থেকে পূজা দেখতে এখানে আসি এবার এইরকম আয়োজন দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। সত্যিই এটি খুব ব্যতিক্রমী ও মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা"

সবুজবাগ যুব দুর্গাপূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃদুল পাল তনুজ সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘আমাদের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যই হল ঢাকিদের পেশা তথা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা। ডিজিটাল মিডিয়ার দৌড়ে ঢাক বাজানোর পেশা থেকে অনেকেই সরে গিয়েছেন। ঢাকের বোল আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। এরকম আয়োজন করে ঢাকিদের উৎসাহ বৃদ্ধি ও তাঁদের সম্মানিত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত