নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ অক্টোবর, ২০১৮ ১৬:৪১

দুর্গাপূজায় দেয়ালচিত্রে হিন্দু ধর্মের আদিকাহিনী

শারদীয় দুর্গাপূজার মহানবমী আজ। চার দিনব্যাপী এ উৎসবের মূল পর্ব শুরু হয়েছে মহাসপ্তমী থেকে। এবারের দুর্গাপূজায় সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে লামাবাজারস্থ অনির্বাণ সংঘের দেয়ালচিত্র। ‘বেদানুসারে ত্রিলোকের সৃষ্ট এবং মহিষাসুরের বধ’ শিরোনামে অনির্বাণ সংঘ পূজা মণ্ডপের প্রবেশ পথের বামদিকের দেয়ালে আঁকা হয়েছে চিত্র।

এই চিত্রগুলো সব বয়সের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা বেশি আকর্ষিত হচ্ছে এই দেয়ালচিত্র দেখে। ২২টি দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে ত্রিলোকের সৃষ্ট ও মহিষাসুর বধের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়া মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহানবমী, বিজয়া দশমী ও আশীর্বাদ গ্রহণের চিত্র দৃশ্যায়ন করা হয়েছে ছয়টি চিত্রের মাধ্যমে।

প্রতিটি চিত্রের সাথে শব্দের মাধ্যমে কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। চিত্রশিল্পী প্রান্ত রায় ও তাঁর সহযোগীরা মিলে প্রায় বিশ দিন কাজ করে এই দেয়ালচিত্র আঁকা শেষ করেন।

দেয়াল চিত্রের শুরু হয় ‘ওম’ দিয়ে। এর বর্ণনায় বলা হয় ‘ওম’ যা আত্মা এবং ব্রহ্মকে বোঝায়। ওম বলতে একটি চূড়ান্ত বাস্তবতা, চেতনা, সারাংশ প্রকাশ পায়।

দ্বিতীয় চিত্রটি ছিল শিবের। শিবের বর্ণনায় বলা হয় শিবপুরাণ মতে যারা শেষ ও শুরু কিছুই নেই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু যেখান থেকে শুরু এবং যেখানে গিয়ে শেষ তাই শিব।

একই ভাবে বিষ্ণু, ব্রহ্মা, ত্রিদেবের বর্ণনা করা হয়। পর্যায়ক্রমে স্বর্গ, আকাশ, মর্ত্য ও মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনা করা হয় দেয়ালচিত্রে।

মহিষাসুরের বধ বর্ণনা করতে গিয়ে দেয়াল চিত্রে মহিষাসুরের জন্ম থেকে কিভাবে দেবী দুর্গা মহিষাসুরের হাত থেকে ত্রিলোককে রক্ষা করেন তা বর্ণনা করা হয়।

শেষদিকের চিত্রে দেখা যায় ত্রেতাযুগে কখন, কেন দেবী দুর্গার অকালবোধন করা হতো। এরপর থেকেই প্রতি বছর দেবী দুর্গার আগমন ও সর্বস্তরের মানুষ দুর্গা মায়ের পূজায় নিজেকে নিবেদন করেন বলে দেয়ালচিত্রে রং তুলির আঁচড়ে দৃশ্যায়ন করা হয়।

সুবিদবাজার এলাকার প্রিয়া আচার্য্য বলেন, পৃথিবী সৃষ্টি ও মহিষাসুর বধের কাহিনী দিদিমার কাছ থেকে শুনেছি, বইয়েও পড়েছি। এই দেয়ালচিত্রের দৃশ্যায়ন দেখে পরিপূর্ণতা এসেছে। অনির্বাণ সংঘের এই শৈল্পিক চিন্তাভাবনা প্রশংসার দাবিদার।

দাঁড়িয়াপাড়ার বাসিন্দা শম্পা নাথ বলেন, আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেড়িয়েছিলাম পূজা দেখতে। এই মণ্ডপে এসে পূজা দেখার পাশাপাশি আমাদের ধর্মের ইতিহাস সহজভাবে বুঝাতে পেড়েছি আমার সন্তানদের। ছবির থাকাতে বাচ্চারা অনেক আগ্রহের সাথে কাহিনী শুনেছে এবং দেখেছে।

অনির্বাণ সংঘের সহসাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, উৎসব আমেজে আমাদের ধর্মের আদিকথা সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে সকলকে জানাতে চাই। তাই এবার আমরা এই দেয়ালচিত্র করেছি। বর্তমান শিশু, কিশোর তরুণেরা হিন্দুর ধর্মের আদি ইতিহাস সম্পর্কে জানে না। অনেকেই আবার জানতে আগ্রহীও হয় না। তাই চিত্রের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করে ইতিহাস উপস্থাপন করেছে। বিশেষ করে শিশু কিশোররা যেন সহজভাবে আনন্দের সাথে ইতিহাস জানতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমাদের এই দেয়ালচিত্র করা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত