নিজস্ব প্রতিবেদক

২২ অক্টোবর, ২০১৮ ০১:২৯

আলোচিত তুষার, সমালোচিত তুষার

সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলীম তুষারকে রোববার সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। 'সংগঠনের নীতি আদর্শ পরিপন্থী নৈতিক স্খলনজনিত গুরুতর অভিযোগের সত্যতা' পাওয়ায় কথা জানিয়ে তুষারকে বহিস্কার করে ছাত্রলীগ।

২০১৫ সালের ২০ জুলাই মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন তুষার।

সাম্প্রতিক অতীতে সিলেটে ছাত্রলীগের কমিটির শীর্ষ পদ-পদবিগুলো সিলেটে ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করা পাঁচ নেতারাই ভাগাভাগি করে নিতেন। তাদের অনুসারীদের দখলেই থাকতো সিলেট ছাত্রলীগের শীর্ষপদগুলো। দীর্ঘদিন পর এই প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটিয়ে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন আব্দুল আলীম তুষার। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ আহমদ অনুসারী।

সিলেট ছাত্রলীগের 'খলিফা'দের বলয়ের বাইরে গিয়ে পদ বাগিয়ে নিয়ে শুরুতেই আলোচনায় আসেন তুষার। তবে বলয়ের বাইরে গিয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে আসীন হলেও তিনি সিলেট ছাত্রলীগের নানা বলয়ের নেতাদের মধ্যে ঐক্য ফেরাতে ব্যর্থ হন। ব্যর্থ হন ছাত্রলীগের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি তুষার ও সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মান। ৪ সদস্য দিয়েই সাড়ে ৩ বছর ধরে চলেছে সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের কার্যক্রম।

২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল নগরীর সুবিদবাজারে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে দলের নেতাদের সহানুভূতি আদায় করেন তুষার।

এছাড়া দায়িত্বে থাকা পুরোটা সময় নানা সমালোচনায় জড়িয়ে পড়েন তুষার।

২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে খুন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। খুন হওয়ার কিছুদিন আগে গ্রুপ পরিবর্তন করে তুষারের গ্রুপে যোগ দিয়েছিলেন হাবিব। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়ও সমালোচনার মুখে পড়েন তুষার।

ফেসবুকেও নানা কর্মকাণ্ডের কারণে সমালোচিত ছিলেন তুষার। সাংবাদিকদের হুমকি, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত সাংবাদিকদের হুমকিসহ বিভিন্ন সময় ফেসবুকে উদ্ধত্যপূর্ণ স্ট্যাটাস দিয়ে সমালোচিত হন তিনি।

সর্বশেষ সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভূমিকার কারণে দলের ভেতরেই সমালোচনার মুখে পড়েন আব্দুল আলীম তুষার।

গত ৩০ আগস্ট সিলেট সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উপস্থিতি দলীয় সভায় আব্দুল আলীম তুষারের সিটি নির্বাচনের ভূমিকা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনে তুষার নৌকা নাকি ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন এই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে ওই সভায়। তোপের মুখে একপর্যায়ে সভা থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন তিনি।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিটি নির্বাচনে ভূমিকাসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণেই তুষারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদ শেষেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারায় মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আব্দুল আলীম তুষারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে কি কারণে তুষারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানেন না বলে জানিয়েছেন বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আব্দুল বাছিত রুম্মান। সর্বাত্মক চেষ্টা সত্ত্বেও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি বলেই জানিয়েছেন তিনি।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেছেন, তুষারের বিরুদ্ধে কিছু লিখিত অভিযোগ ছিলো। তদন্তে এসবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।

তবে কী অভিযোগ ছিলো তা সুনির্দিষ্ট করে জানাননি তিনি।

রোববার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তুষারকে বহিস্কার ও মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।

একইসঙ্গে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে মহানগর কমিটিতে পদপ্রত্যাশীদের সিভি আহ্বান করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। ১ নভেম্বরের মধ্যে তাদের সিভি প্রদান করতে বলা হয়েছে।

২০১৫ সালের ২০ জুলাই আব্দুল বাছিত রুম্মানকে সভাপতি ও আব্দুল আলীম তুষারকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর ছাত্রলীগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিলো। সাড়ে ৩ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেন নি তারা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত