হৃদয় দাশ শুভ, শ্রীমঙ্গল

০৫ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:৪১

শ্রীমঙ্গলে সব সড়কই ভাঙ্গাচোরা, দুর্ভোগ চরমে

ভাঙ্গাচোরা সড়কের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দাদের। শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন পর্যটকরাও।

পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের এই শহরের বেশিরভাগ সড়কের অবস্থাই একবারে নাজুক। কয়েকদিন পর পর লোক দেখানো নাম মাত্র জোড়াতালির কাজ করলেও তা বেশি দিন টিকে থাকে না। তাই কাজ করার কিছুদিনপরই সড়কে ফের সৃষ্টি হয় খানাখন্দের।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলছে, রাস্তায় আটকে থাকা পানির কারনে রাস্তা নষ্ট হয়। সওজ কর্মকর্তাদের দাবি, সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাব নালা নির্মাণ ও সড়ক ডেবে যাওয়ার কারনে পানি জমে থাকে।

শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশন থেকে বের হয়ে শহরমুখী রাস্তাটির অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। মূলত এ সড়কের কারণে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় জনগণসহ পর্যটকরা। সড়কটির একটি অংশের কাজ রেলওয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও বাকি অংশটুকুর (পেট্রোল পাম্পের সামনে থেকে সবজী বাজারের সম্মুখভাগ পর্যন্ত) দায়দায়িত্ব নিচ্ছেন না কেউই।

পৌরসভার ভিতরে থাকলেও পৌরসভার মেয়র বলছেন, রাস্তাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের, আর সড়ক জনপদ বিভাগের প্রকৌশলীরা এই রাস্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে বলছেন, রাস্তাটি তাদের ম্যাপেই নেই।

অবিভাবকহীন এই রাস্তাটির সংস্কার কাজ থেমে আছে দীর্ঘদিন যাবত।

শ্রীমঙ্গল শহরের শাপলাবাগ হয়ে সিন্দুরখাঁন সড়কের মধ্যে রেলবিভাগ রেলগেট ও কন্টোলরুম স্থাপন করলেও দু’পাশের রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় শহরের মুল অংশের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ গড়ে উঠেনি রেলের কাজ সম্পন্নের দু’মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও। এ সড়ক সংস্কার কাজের দায়িত্ব পৌরকর্তৃপক্ষের। এলাকাবাসী বলছেন অনতিবিলম্বে এ সড়কটি চালু করার জন্য।

শ্রীমঙ্গল শহর থেকে পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়ার রাস্তার (শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ-শমসেরনগর সড়ক) অবস্থা আরো খারাপ। শহরের রেলক্রসিংয়ের সামনে থেকে চা যাদুঘর পর্যন্ত রাস্তার অধিকাংশ স্থানে ছোট বড় অনেক গর্ত হয়ে আছে। এছাড়া লাউয়াছড়ার ভিতর দিয়ে বয়ে চলা কমলগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে ফেলছে চালকদের।

এদিকে, বরুনা হাজিপুর হয়ে মৎস্য অভয়ারণ্য বাইক্কা বিল যাবার রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন রয়েছে। সাতগাঁও চৌমুহনা থেকে সিন্দুরখাঁন যাওয়ার রাস্তার অবস্থা বেহাল, লইয়ারকুল হয়ে বয়ে চলা সংযোগ সড়কটি খুবই খারাপ। মতিগঞ্জবাজার হতে ভুজপুর অভিমুখে বয়ে চলা রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ও গুরুত্বপুর্ণ রাস্তায় মধ্যে খোলা রেলগেটটির কারনে এ এলাকার জনগণ দুর্ঘটনার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসা এক পর্যটকবাহী মাইক্রোবাসের চালক রবি মিয়া বলেন, শ্রীমঙ্গলে গত এক বছর আগে যেভাবে রাস্তায় খানাখন্দ ছিলো সেভাবেই আছে। উপরন্তু কিছু বাড়তি জায়গায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীমঙ্গল পুর্বাশা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা পংকজ কুমার নাগ বলেন, ভানুগাছ রোডের রাস্তাটি প্রায় সময়ই দেখা যায় ছোট বড় খানাখন্দে ভরা থাকে। কিছু দিন পর পর জোড়াতালি মার্কা লোক দেখানো কাজ করা হয় তবে কাজের মান খুবই খারাপ ।

সিএনজি চালিত অটো রিকশা চালক ফরিদ মিয়া জানান, রাস্তার এক পাশ ভাঙ্গা থাকলে নিয়ম ভেঙ্গে বাম দিকে না গিয়ে ডান দিকে যেতে হয়। এতে করে প্রায়ই অন্যগাড়ির সাথে সংঘর্ষের উপক্রম হয় ।

শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সদস্য ও হোটেল মালিক এস. কে দাশ সুমন বলেন, খানাখন্দে ভরা রাস্তার কারণে পর্যটকরা শ্রীমঙ্গল সম্পর্কে খুবই খারাপ ধারনা নিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সময় রাস্তার কারনে পর্যটকরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেতে চান না।

মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ সোহেল সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে শমসেরনগর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রাস্তার জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ২/৩ মাসের মধ্যেই ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু হবে। প্রথম অবস্থায় শমসেরনগর থেকে গ্র্যান্ড সুলতানের সম্মুখ পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার রাস্তা বিটুমিন দিয়ে করা হবে। পরবর্তিতে বাকি জায়গাগুলো যেখানে পানি জমে থাকে সেই জায়গাগুলোর পাথর- সুড়কি -সিমেন্টে’র ঢালাই রাস্তা করা হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন লাউয়াছড়া বনের ভিতর দিয়ে যাওয়া রাস্তায় কাজ করতে গেলে বন বিভাগ তাদের বাধা দিচ্ছে। বিটুমিন দিয়ে রাস্তা তৈরীর সময় আগুন জ্বালিয়ে বিটুমিন গলাতে হয়। বন বিভাগ প্রাণীদের সমস্যা হবে এ কথা বলে আমাদের আগুন জ্বালাতে দিচ্ছে না। তাই আমরা সংস্কার এর কাজ করতে পারছি না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত