জগন্নাথপুর প্রতিনিধি

১০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৪:৩৭

পালিত হচ্ছে বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১০৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী

বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের ১০৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে তার জন্মভূমি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে দুই দিনব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া, ভ্রমর কইয়ো গিয়া শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে, জলে গিয়াছিলাম সইসহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা রাধারমণ দত্ত।

১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। কিশোর বয়সে পিতৃহারা হওয়ায় জগতের সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ অনুসন্ধানে মনোনিবেশ করেন রাধারমণ। এক পর্যায়ে সাধক রঘুনাথ গোস্বামীর শিষ্যত্ব ও দীক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব ও সহজিয়া মতবাদে লেখাপড়া করে সহজিয়া মতে সাধন-ভজন শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে রাধা-কৃষ্ণর প্রেম নিয়ে গান রচনা করেন।

৮২ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১০ নভেম্বর পরলোক গমন করেন তিনি। বৈষ্ণব মতবাদের অনুসারী রাধারমণকে কেশবপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।

স্থানীয় রাধারমণ দত্ত স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় ১০৩তম মৃত্যু বার্ষিকীতে দুদিন ব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন বলে আয়োজকদের মধ্যে আছকির মিয়া সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করে বলেন, ২০১৫ সালে সরকারীভাবে রাধারমণ দত্তের শততম মৃত্যুবার্ষিকী দুদিনব্যাপি জাঁকজমক ভাবে জগন্নাথপুর ও সুনামগঞ্জে উদযাপিত হয়েছিল।

এবারও আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে দুদিন ব্যাপী আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

প্রথম দিন শুক্রবার (৯ নভেম্বর) আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিদ্দিক আহমদ, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সদস্য আলহাজ্ব মাহাতাবুল হাসান সমুজ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান আকমল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু, ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব, জগন্নাথপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র শফিকুল হক, পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল হক, সংগঠনের সাবেক সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী আনহার মিয়া মুন্না ও স্থানীয় কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান।

পরে সংগঠনের সভাপতি জিলু মিয়ার সভাপতিত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

দ্বিতীয় দিন শনিবার (১০ নভেম্বর) আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজুল আলম মাসুমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সিলেট জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেবজিৎ সিংহ, জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশীদ চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামছুল আবেদীন, সুনামগঞ্জ জেলার কালচারাল অফিসার আহমেদ মঞ্জুরুল হক চৌধুরী পাবেল, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট দেব দাশ চৌধুরী, জেলা উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

প্রতিদিন সন্ধ্যা ছয়টায় আলোচনা সভা শুরু হয়ে সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে বলেও জানান আছকির মিয়া।

প্রতিদিন সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রাধারমণ ভক্তবৃন্ধ ও স্থানীয় বাউল শিল্পিগন এবং আগত গুণী সংগীত শিল্পীরা।

জানা যায়, জল-জ্যোৎস্না প্রকল্পের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ জেলায় ২৮ জন লোককবির তিন হাজার পঞ্চাশটি গান সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাধারমণ দত্তের গানের সংখ্যা এক হাজার পঞ্চাশটি। রাধারমণ দত্তের গান সংগ্রহে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এখনও কাজ করে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত