নিউজ ডেস্ক

১০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৫:২০

গোলাপগঞ্জে প্রবাসীর বাড়ি দখলের অভিযোগ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার

গোলাপগঞ্জের ফুলসাইন্দ দাখিল মাদ্রাসা অধ্যক্ষের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও সকল প্রকার হয়রানী বন্ধসহ প্রকৃত সত্য উদঘাটন ও মামলাবাজ মাদ্রাসা অধ্যক্ষের পদচ্যুতির দাবি জানিয়েছেন ফুলসাইন্দ গ্রামের তোতা মিয়ার স্ত্রী জয়তুন বিবি।

শনিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলসাইন্দ গ্রামের মৃত সরফ উদ্দিনের পুত্র আব্দুল মতিন, খানম বেগম ও রুবি বেগম যুক্তরাজ্য প্রবাসী। গত প্রায় ২০ বছর ধরে তাদের বাড়িঘর পাহারার দায়িত্বে ওই বাড়িতে বসবাস করছেন একই গ্রামের জিলাল উদ্দিনের পরিবার। সহায়-সম্পত্তির আম-মোক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন একই গ্রামের মসব্বির আলীর পুত্র খলিল উদ্দিন।

তিনি বলেন, এই গ্রামে ফুলসাইন্দ দারুল কেরাত দাখিল মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসা আছে। এই প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল ও ভূমি দস্যু চক্র মতিন, খানমদের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি জবরদখল ও তাদের বাস্তুহারা করার হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। স্বার্থান্বেষীরা মাদ্রাসায় তাদের অনুগত ব্যক্তিকে অধ্যক্ষ নিয়োগ ও তাকে দিয়ে মাদ্রাসার নামে ওই প্রবাসী পরিবারকে উচ্ছেদে নানা অপ তৎপরতা চালাচ্ছে। নিরুপায় হয়ে মোক্তার খলিল উদ্দিন জবরদখল থেকে প্রবাসী পরিবারের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি রক্ষার্থে তাদের পক্ষ হয়ে দেওয়ানী আদালতে স্বত্বমোকদ্দমা দায়ের করেন (বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে চলমান আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে)।

তিনি আরো বলেন, দেওয়ানী আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় ভূমিদস্যুরা  মাদ্রাসার নামে প্রবাসী পরিবারের বাড়িঘর দখলে নিতে পারছে না। তাই তারা মিথ্যা অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দিয়ে হয়রানীর পথ বেছে নিয়েছে। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তারা প্রবাসী পরিবার ও তাদের স্বজনদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জেল-জুলুম-আর পুলিশি নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।

জয়তুন বিবি বলেন, তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মাদ্রাসার বারান্দার গ্রিলে চটের বস্তা পুড়িয়ে অগ্নি সংযোগের একটি ঘটনা সাজায় এবং তাদের অনুগত সুপার মো. আব্দুল গফুরকে দিয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে পুলিশ তাদের সাজানো মামলা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে তারা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে আদালত থেকে মামলা এফআইআর-এর আদেশ হাসিল করে। ঐ বাড়ির কেয়ারটেকার ও আম-মোক্তারসহ তার স্বজনদের বিরুদ্ধে সাজানো ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা রেকর্ড করায় (নং-০৯(৯)১৮)। পাশাপাশি খলিল উদ্দিনকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিনি বর্তমানে জেলে রয়েছেন। অন্যদের পুলিশী হয়রানীর মাধ্যমে বাড়িছাড়া করার চেষ্টা করছে স্বার্থান্বেষী এ মহল।

তিনি বলেন, ঐ মামলায় অসুস্থ চলাফেরায় অক্ষম আমার বয়োবৃদ্ধ স্বামী তোতা মিয়াকেও তারা আসামী করতে লজ্জাবোধ করেনি। একজন আলেমে দ্বীন হয়ে চাকরি ও পদের লোভে মাদ্রাসা সুপার আব্দুল গফুর স্বার্থান্বেষীদের প্ররোচনায় মাদ্রাসার নাম ব্যবহারে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো ঘটনায় এ মামলা দায়ের করে নিজের আখের গোছাতে শুরু করেছেন।

এছাড়াও মামলায় এমন কিছু মানুষকে সাক্ষী করা হয়েছে যারা সমাজে ভণ্ড ও দুষ্টচক্র বলে পরিচিত। তাদেরই একজন ৯নং সাক্ষী ফুলসাইন্দ গ্রামের মৃত মছনের পুত্র সাঈদ আহমদ (পাহারাদার)। সাঈদ একজন ভণ্ড, প্রতারক, তাবিজ-তোবার ব্যবসায়ী ও জিনসাধক। তার ভণ্ডামির শিকার হয়ে অনেক ছাত্রীর পরিবার আর্থিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের ভয়ে তারা মুখ খুলতে পারেনা।

জয়তুন বিবি আরও বলেন, প্রবাসী মতিন পরিবারকে বাড়িছাড়া করতে প্রভাবশালী মহলের অপ তৎপরতা ও মামলা-হামলার শেষ নেই। এর আগেও তারা তাদের অনুগত মাদ্রাসা সুপার আব্দুল গফুরকে দিয়ে প্রবাসী পরিবারের স্বজন পুরুষ ও মহিলাদের আসামী করে সিলেটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে পোলাপগঞ্জ বিবিধ ১৮৫/২০১৮, গোলাপগঞ্জ থানার নন.এফ.আই.আর ৬৩/১৮-সহ আরো কয়েকটি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে।

মাদ্রাসা ও মসজিদ ব্যবহার করে ভূমিদস্যুরা তাদের হীনস্বার্থ হাসিলে মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে উপস্থিত গ্রেপ্তারকৃত খলিলের স্ত্রী ও দুই সন্তান স্বামী ও তাদের পিতার মুক্তির দাবি জানায়।

খলিলের ভাই জিলাল উদ্দিনের স্ত্রী জানান, তার এসএসসি পরীক্ষার্থী পুত্রকেও আসামী করা হয়েছে। সে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি পুলিশী হয়রানির ভয়ে।

তার স্বামী ও সন্তানরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তারা সবাই মিথ্যা ও সাজানো হামলা-মামলার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার, পূণঃতদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান। পাশাপাশি অবিলম্বে  মাদ্রাসা অধ্যক্ষের পদচ্যুতি এবং ফুলসাইন্দ দাখিল মাদ্রাসার জন্য একজন সৎ নিষ্ঠাবান ও চরিত্রবান অধ্যক্ষ নিয়োগে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত