কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১৫ নভেম্বর, ২০১৮ ১৮:৪৬

পঙ্গুত্বের আশঙ্কায় কমলগঞ্জের প্রিং খাসিয়া, আসামিদের জামিন

গাছ চুরিতে বাধা দেওয়ায় দায়ের কোপে গুরুতর আহত হন প্রিং খাসিয়া (৪০)। এখন অঙ্গহানির আশঙ্কা নিয়ে তার সময় কাটছে হাসপাতালের বিছানায়। এ ঘটনার মামলার পর আসামিদের শাস্তি হবে, এই আশায় ছিলেন প্রিং খাসিয়াসহ পুঞ্জির অন্যান্যরা। কিন্তু আসামিরা জামিন পাওয়ায় এখন নতুন করে হামলার আতঙ্কে আছেন সবাই।

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জির পান জুম এলাকায় ৪ অক্টোবর সকালে গাছ কাটছিল একদল গাছ চোর। এতে বাধা দেওয়ায় দা দিয়ে কোপিয়ে প্রিং খাসিয়াকে আহত করা হয়। এ ঘটনা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হয়।

ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জির হেডম্যান বি' প্রধান বলেন, ঘটনার পর থেকে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন। থানায় মামলা করার ১ মাস ৯ দিন পার হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এখন আসামিরা আদালতে হাজির হয়ে জামিন পাওয়ায় খাসিয়া পুঞ্জিতে নতুন করে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই ঘটনায় ৫ অক্টোবর কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন ভিক্টর সুমের খাসিয়া। এতে জয়নাল মিয়া (৪০), জমশেদ মিয়া(৩৮) ও কামরুল মিয়াকে (৩৫) আসামি করা হয়। এই তিন আসামি সোমবার (৫ নভেম্বর) মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ আমলি আদালতে হাজির হন। এরপর তারা আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। পুলিশের আদালত পরিদর্শক জামিন না মঞ্জুর করার আবেদন করেন। তবে আদালত শুনানি শেষে আসামিদের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফরিদ মিয়া বলেন, আসামিদের জামিন লাভে তারাও হতবাক হয়েছেন। কারণ যেসব ধারায় মামলা হয়েছে, তাতে সাধারণত জামিন হওয়ার কথা নয়। এরপরও কিভাবে জামিন হল, সেটি বিজ্ঞ আদালতের বিষয়।

আসামি ধরতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু আসামিদের খুঁজে পাইনি। মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলেও জানান তদন্ত কর্মকর্তা।

এদিকে হামলায় আহত প্রিং খাসিয়াকে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থা বিবেচনা করে পরে তাকে ৪ অক্টোবর রাতেই সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দুদিন পর ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তার বাঁ হাত আর কখনো ভালো নাও হতে পারে বলে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এ অবস্থায় মামলার আসামিদের জামিন আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে প্রিং খাসিয়ার পরিবারকে।

মামলার বাদী প্রিং খাসিয়ার চাচাতো ভাই ভিক্টর সুমের বলেন, প্রিং খাসিয়ার পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা ছাড়াও দুই ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে ঢাকায় ইডেন কলেজে পড়েন।

প্রিং খাসিয়ার হাত অকেজো হয়ে গেলে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়বে জানিয়ে ভিক্টর সুমের বলেন, এই আশংকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আসামিদের জামিনের বিষয়টি। কারণ ঘটনার পর থেকেই আসামিরা নানাভাবে ডবলছড়া খাসিয়া পুঞ্জির সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এখন যেহেতু তাঁরা জামিন পেয়েছেন সেহেতু আবারও খাসিয়াদের ওপর হামলা হতে পারে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত