সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ নভেম্বর, ২০১৮ ১৬:৫৭

এইচআইভি আক্রান্তের সেবায় ওসমানী হাসপাতাল অনন্য নজীর

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (সিওমেক) এইচআইভি আক্রান্তদের বিনামূল্যে সব ধরনের চিকিৎসা দেয়ার উদ্যোগ নেয়ায় সিলেটের এইচআইভি আক্রান্তদের মধ্যে সেবা গ্রহণের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধানে এবং ইউনিসেফের সহায়তায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাস্তবায়িত এইচআইভি সেবা জোরদারকরণ কার্যক্রম কর্তৃক আয়োজিত ষাণ্মাসিক স্টেকহোল্ডার সভায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে ষাণ্মাসিক স্টেকহোল্ডার সভাটি এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এইচআইভি আক্রান্তদের উপযুক্ত সেবা প্রদান করে অনন্য নজীর স্থাপন করেছে সিওমেক হাসপাতাল বলে উল্লেখ করেন বক্তারা।

সিলেটের সরকারী ও বেসরকারি বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সমূহ, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালসহ বিভিন্ন এনজিও সমূহের প্রতিনিধিদের সাথে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় অংশগ্রহনকারীগন এইচআইভি কার্যক্রম ও এআরভি সেন্টারের সেবাপ্রদান সংক্রান্ত তথ্য আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার পরামর্শ দেন এবং ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংগঠন সমূহের ভূমিকার উপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

সিওমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) এ কে মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার শুরুতে পরিচিতি পর্ব ও স্বাগত বক্তব্যের পর প্রকল্পের বিগত ছয়মাসের কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তুলে ধরেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মোতাহের হোসেন।
এরপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তাগন সিলেটের এইচআইভিসেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যের পর্যালোচনা করেন।  

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সিওমেক এর সাবেক অধ্যক্ষ এবং পার্ক ভিউ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. অছুল আহমেদ চৌধুরী, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায়, শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক প্রভাত রঞ্জন দে, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাহাব উদ্দীন, রক্তপরিসঞ্চালন বিভাগের প্রধান  সিওমেক উপ পরিচালক ডা. দেবপদ রায়, সহকারী পরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ। এছাড়াও নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সিনিয়র অধ্যাপকগন, হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকগন এবং বিভিন্ন সংস্থা থেকে আগত প্রতিনিধিবৃন্দ আলোচনায় অংশ নেন।

উল্লেখ্য, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সব গর্ভবতী মহিলাদের এবং স্বেচ্ছায় আগত যে কোন ব্যক্তির বিনামূল্যে এইচআইভি পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি এইচআইভি আক্রান্তদের ঔষধ সহ সবধরনের স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে।

সভায় সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় বলেন গত ছয় মাসে ওসমানী মেডিকেলের গাইনী বিভাগে পাঁচজন গর্ভবতী নারীকে এইচআইভি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার যে তথ্য আমরা দেখতে পেলাম তা আমাদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। আমাদের এখনই এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন কার্যক্রম চালু আছে, আমাদের উচিত সবার কাছে এর তথ্য সমূহ পৌঁছে দেয়া।

সভাপতির বক্তব্যে হাসপাতালের পরিচালক বলেন, আমরা আমাদের হাসপাতাল হতে এইচআইভি আক্রান্তদের বৈষম্যহীন ভাবে সবধরনের সেবা প্রাপ্তির পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি এবং বর্তমানে ৪৭৮ জন এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি নিয়মিত এআরভি ঔষধ গ্রহণ করেছেন। আমরা চাই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা দানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান সমূহ এই তথ্য জানুন এবং সংশ্লিষ্ট রোগী সমূহকে সেবার আওতায় আনতে সহায়তা করুন।  

তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও এইচআইভি লাইন ডিরেক্টর ডা. ইহতেশামুল হকের উদ্যোগে ২০১৭ সালে যখন আমরা সরকারী ব্যবস্থাপনায় এইচআইভি আক্রান্তদের সেবা প্রদান শুরু করি তখন অনেকের মধ্যে অনেক সংশয় ছিল এর সফলতা নিয়ে। কিন্তু এখন আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, সরকারী ব্যবস্থাপনায় এইচআইভি আক্রান্তদের উপযুক্ত সেবা দেয়া সম্ভব।

২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া উক্ত প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত পূর্ণ চিকিৎসা গ্রহণ করে যে ৪২ জন মা সন্তান জন্মদান করেছেন তাদের সবার বাচ্চাই এইচআইভি মুক্ত আছে। আরো কয়েকজন মা সন্তান জন্মদানের অপেক্ষায় আছেন। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত