এস আলম সুমন, কুলাউড়া

০৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ২০:২০

সুলতান মনসুর জাতীয় বেঈমান: কুলাউড়ায় আ.লীগ নেতারা

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে জাতীয় গণফোরামের প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকে একজন জাতীয় বেঈমান বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার (৫ ডিসেম্বর) মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের বর্ধিত কর্মী সভায় বক্তারা এমন মন্তব্য করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, তিনি একজন জাতীয় বেঈমান। মুজিব কোট পরে একদিকে বঙ্গবন্ধুর শ্লোগান দিয়ে, জয় বাংলার শ্লোগান দিচ্ছেন অন্যদিকে জয় ধানের শীষ শ্লোগানও দিচ্ছেন। এটা মানুষকে ধোঁকা দেয়ার শামিল। এই ধরনের ধোঁকাবাজি কুলাউড়ার মানুষ এখন বুঝতে পারে। কুলাউড়ার মানুষ তাকে এখন ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে। আসন্ন নির্বাচনে মহাজোট থেকে কেন্দ্র যাকে নৌকার প্রার্থী দিবে তাকে বিজয়ী করতে ও সুলতানকে পরাজিত করতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাবে।

বক্তারা আরো বলেন, সুলতান মনসুর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বেঈমানি করেছেন। শেখ হাসিনা তাকে (সুলতানকে)  রাজনীতিতে সব দিয়েছেন। শেখ হাসিনা সুলতান মনসুরকে ছাত্রলীগের সভাপতি করেছিলেন, ডাকসু ভিপি করেছিলেন, দলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সংসদ সদস্য করেছিলেন। অথচ সেই সুলতান মনসুর ১/১১’র সময় শেখ হাসিনাকে দল থেকে মাইনাস করার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন।

কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেণু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েলের সঞ্চালনায় এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে দলীয় বর্ধিত কর্মীসভার মহাজোটের শরীক বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহীন উপস্থিত হলে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান।

কর্মীসভায় লন্ডন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান বলেন, ‘সুলতান মনসুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিরোধিতা করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে হাত মিলিয়ে, সুর মিলিয়ে বলছেন, দেশে স্বাধীনতা বিরোধী নেই। এটা ন্যক্কারজনক।’

সিলেট স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ এর আহ্বায়ক ও সিলেট বি এম এ এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. রুকন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা মুজিব আদর্শের রাজনীতি করি, আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে আরও সমৃদ্ধ করতে রাজনীতি করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যে উন্নয়ন অব্যাহত আছে সেই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখতে আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ। তাই কুলাউড়ায় যে নৌকা প্রতীক নিয়ে আসবেন আমরা সকলে তার পক্ষে কাজ করবো।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, ‘মানুষের কোন অঙ্গে ক্যান্সার হলে, শরীরের অন্যান্য অঙ্গ রক্ষার্থে সেই ক্যান্সারে আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলতে হয়। ঠিক তেমনই আমাদের এক সময়ের অত্যন্ত প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন সুলতান মনসুর এখন আওয়ামী লীগের ক্যান্সার, তাই তাকে আজ কেটে ফেলে দিলাম।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক আ স ম কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের জন্য ঐক্যবদ্ধ। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিতে উনার মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করবো ইনশাল্লাহ।’

মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আহ্বান চৌধুরী শাহজাহান বলেন, ‘বার বার বেঈমান বলে উনাকে আর হাইলাইট করার কিছু নাই। এখানে যারা উপস্থিত আছেন তারা রক্ত মাংসে আওয়ামী লীগ করে, এরা রক্ত মাংসে শেখ হাসিনার সৈনিক।

এসময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা হাত তুলে দেখান কারা কারা এই বেঈমানের বিপক্ষে আছেন।’ তখন সবাই হাত উঁচু করে দেখালে তিনি বলেন, ‘ধন্যবাদ, এটাই আমাদের সন্তুষ্টি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুর রহমান বলেন, ‘সুলতান মনসুর সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নাই। উনাকে কি দেন নাই আমাদের নেত্রী। অন্যসব এলাকার নেতাকর্মীদের থেকে তুলনামূলক ভাবে উনাকেই বেশি দিয়েছেন। উনার জীবনে যা কিছু অর্জন করেছেন তা আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন। এই শেখ হাসিনার সাথে যারা বেঈমানি করতে পারে তারা কোনদিন মানুষ হতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, আমরা নৌকাকে ভালোবাসি, আমরা আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি, আমরা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, আমরা শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি। কুলাউড়ায় অনেককে আমরা নৌকা মার্কায় এমপি বানিয়েছিলাম। সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদকেও নৌকা মার্কায় এমপি বানিয়েছিলাম। কিন্তু আজ তিনি আমাদের মাঝে নেই। তিনি ধানের শীষে চলে গেছেন।

মহাজোটের শরীক বিকল্পধারার প্রার্থী এম এম শাহীনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কুলাউড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে। অনেক বেশী নির্যাতিত। আপনাকে আজ আমরা বরণ করে নিচ্ছি। আপনাকে কথা দিতে হবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য আপনি ভবিষ্যতে কি করবেন? সাথে আপনার আচরণ কি থাকবে?

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান সুলতান মনসুরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি কি বঙ্গবন্ধুর ঘোষিত সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছিলেন? না। আপনি কি বাংলাদেশের কন্সটিটিউট এসেম্বলি মেম্বার ছিলেন? আপনি কি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন? আপনি কি ৪নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ছিলেন? আপনি কি আওয়ামীলীগের সদস্য নির্বাচিত হতে পেরেছিলেন? আপনি তো ডাইরেক্ট সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। আপনি কি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হতে পেরেছিলেন? আপনি কি সংবিধান রচনা করেছিলেন? আরে বাবা, এতো কিছু পেয়েও এমপি মনোনয়ন না পেয়েও আমি বঙ্গবন্ধু, দল এবং নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি অবিচল ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, নিজের লাভ বা স্বার্থ হাসিলের জন্য যারা দল ছেড়ে দেয়, নীতি-আদর্শ ছেড়ে দেয় তারা দেশ ও জাতির জন্য কোন উপকার বয়ে আনতে পারে না।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুস শহীদ, উপজেলা শ্রমিকলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভাটেরা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন, উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান, কুলাউড়া সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান, টিলাগাঁও ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক শাহীন আহমদ, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এহসান আহমদ টিপু, উপজেলা তাতিলীগের আহ্বায়ক প্রভাষক আফজাল রশিদ খান শিবলু, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সায়হাম রুমেল, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান জনি প্রমুখ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত